এমন কিছু উৎসব আছে, যাতে ধনীরা বেশী উৎসব মুখর হতে পারে, এবং দরিদ্র জনসংখ্যা দারিদ্রতার কারণে এসব উৎসব থেকে বাদ পড়ে, নিজেদের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যায়; কিছু বিনিয়োগ ছাড়া উৎসবে অংশ নেয়া হয় না। কোরবানী সেই ধরণের একটা উৎসব, যাতে বেশ বড় অংকের টাকা খরচ করতে হয়; যারা এই বিনিয়োগটা করতে পারে না, সেই সব পরিনবারের শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা নিজেদের পরিবারের অক্ষমতায় বেশ হতাশ হয়।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্হানের তুলায় বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশী পশু কোরবাণী দেয়া হয়; যাদের হাতে বেশী টাকা আছে, তারা কয়েকটা গরু ছাগল কোরবাণী করে থেকে; তারা এটাকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিপত্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে; মেয়র খোকা ও মেয়র মহিউদ্দিন কয়েকটা গরু কোরবাণী করতেন; এখন মেয়র খোকা মাঠে নেই, মেয়র মহিউদ্দিন বড় উৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন; মেয়র খোকা নিউইয়র্কে হয়তো কারো সাথে, বা কোন বাংগালী প্রসারীতে ১ ভাগ কোরবানীর অর্ডার দিয়েছেন, হতে পারে একেবারেই আউট!
কোরবাণীর মাংস দরিদ্রদের দেয়ার জন্য অনেক নিয়ম কানুন চালু আছে; তবে, সেই মাংস দরিদ্রদের কখনো স্বাবলম্বী করে না; বরং সেটা তাদের হেয় করে মাত্র; কিন্তু বেশীর ভাগ দরিদ্র অশিক্ষিত হওয়ায়, তারা নিজেদের আত্মসন্মান কম বুঝতে পারেন। যারা দরিদ্রদের মাংস দেয়ার ব্যাপারে যারা বিভিন্ন নিয়ম কানুনের কথা বলেন, তারা নিজেরাই মোটামুটি কম-শিক্ষিত, আত্ম-মর্যদাহীন মানুষ।
দেশের তরুণরা আগের দিনের থেকে বেশী স্কুল কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে, তাদের একাংশ সঠিক শিক্ষিত হয়ে উঠছেন, তারা সমাজকে বুঝতে পারেন; তারা তাদের সমবয়স্ক গরীব পরিবারের তরুণ তরুণীদের বুঝতে পারেন; তারা এই ধরণের উৎসবে খুব একটা আনন্দ পাচ্ছেন না আজকাল।
সার্বজনীন উৎসব হলো যেখানে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার অংশ নিতে পারে, যেখানে পারিবারিক অর্থনীতি কোনভাবে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে না উঠে। কোরবান দরিদ্র পরিবারের শিশু কিশোর ও তরুণদের মাঝে বড় ধরণের হতাশার সৃস্টি করছে।
এ ধরণের অসর্বজনীন উৎসব হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাবে; মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠছে, অসার্বজনীন কিছুই থাকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৪