আকাশের কার্নিশ বেয়ে অম্বু ধারা নামতেই অনিমেষ সদ্য শেষ করা ছবিটি নিয়ে দৌড় দেয়। একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়াতেই শোনে, "ইশ! এত্ত সুন্দর ছবিটা ভিজে গেল... ", একটা মেয়ে। বৃষ্টিভেজা লাবণ্যমাখা মুখ। "পুরোটা ভেজেনি। শুকিয়ে যাবে ", অনিমেষ উত্তর দেয়। বৃষ্টির ফোঁটা কমে আসে। যে যার গন্তব্যে পা বাড়ায়। কিন্তু.....
"হ্যালো! আমি অনামিকা। আপনার সাথে এক বৃষ্টির দিনে কথা হয়েছিল "
"হাই অনামিকা! আপনাকে আমার মনে আছে। বাই দ্যা ওয়ে আমি অনিমেষ। "
"আপনি কি এখানে প্রায়ই ছবি আঁকেন? আগেও দেখেছি তো! তাই... "
"মাঝেমধ্যে আসি", অনিমেষ ছবি আঁকায় মন দেয়।
"আচ্ছা.. সেদিনের সুন্দর ছবিটার কি হয়েছিল? "
"ওটা ঠিকঠাক আছে।"
"খুশি হলাম। আপনার পাশে দাড়িয়ে ছবি আঁকা দেখতে চাই। অনুমতি দেবেন? "
"বেশ তো! দেখুন না। একজন দর্শক পেলে মন্দ হবে না!", অনিমেষ হাসে।
সেই শুরু। যেখানে অনিমেষ সেখানেই অনামিকা। দর্শক থেকে বান্ধবী শেষে প্রেমিকা। প্রথম-প্রথম আপনি তারপর তুমি। ওরা পার্কে ঘোরে, রেস্তোরাঁয় যায়। একটু হাত ছোঁয়াছুঁয়ি থেকে হাত ধরে চলা। দুজনেই স্বপ্নের রাজ্যে ভেসে বেড়ায়।
অনিমেষের ছবিতেও বৈচিত্র্য আসে। সাধারণত প্রকৃতির ছবি আঁকলেও এখন ওর ছবির ক্যানভাসে মাঝে মাঝে এক তরুণীর মুখশ্রী দেখা যায়। ব্যাপারটা ওর মা, মিস সুলতার দৃষ্টি এড়ায় না। ছেলে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভালোই। একদিন সুলতা প্রশ্নটা করেই ফেলেন। "মেয়েটা কে রে? ভারি মিষ্টি দেখতে। তোর বান্ধবী নাকি? "। অনিমেষ লাজুক মুখে উত্তর দেয়, " হ্যাঁ... মানে বান্ধবী "। "একদিন নিয়ে আসিস তো! "। অনিমেষ আনে। ওর বাড়িতে অনামিকার আসা-যাওয়া শুরু হয়।
এরপর.... অনামিকার বাড়িতে মিস সুলতাই প্রস্তাব পাঠান। এক শুভদিনে শুভকাজ সমাপ্ত হলে অনামিকা হয়ে যায় মিসেস অনিমেষ।
ওদের বিয়ের দু বছরে পরের কথা। সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। অনামিকার প্রসব বেদনা ওঠে। বাড়িতেই জন্ম হয় ফুটফুটে এক মেয়ের। অনিমেষ নাম রাখে অহনা। অহনার আগমন পরিবারে সুখের ফোয়ারা বইয়ে দেয়। কি অদ্ভুত মিল! ওদের পরিচয়টাও হয়েছিল এক বৃষ্টিভেজা দিনে....
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:০৫