রেহান বারান্দার দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, কখন তারা আসবে। সময়টা যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না। বন্ধুরা মাঠে খেলা করছে। সেদিকে তার মনা নেই। হটাৎ একটা আসংকা তার মনে আসে, এবারও বুঝি বাবা-মা কথা রাখলো না। তার মনে পরে গত মাসে তার বাবা কথা দিয়েছিলো ঢাকা থেকে রেসিং কারসেট এনে দেবেন, ঠিক জুয়েলের এমন একটা রেসিং কার আছে। জুয়েল সেটা তাকে ধরতে দেয় না। সে বাবা ঢাকা থেকে ফিরে আসার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেছে। তাদের বাসা থেকে ট্রেনলাইন দেখা যায়। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখেছে, এই বুঝি বাবা এলো.........ইয়া হু..........বাবা এসেছে.......দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জরিয়ে ধরে। কিন্তু সেইবার বাবা রেসিং কার আনে নাই......সে অনেক লম্বা কাহিনি। সেবার তার মনটা খুব খারাপ হয়েছিলো। ভাবতে ভাবতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে মনে মনে ভাবে তার কোন রেসিং কার দরকার নাই, বোন এলেই হলো। সে ঠিক করে রেখেছে, তার সব খেলনা সে তার বোনকে দিয়ে দেবে।
পিপ..পিপ...... গাড়ীর হর্ন, রেহান তাকিয়ে দেখ গাড়ী থেকে তার বাবা নেমেছে, মাও নামছে.....কোলে গোলাপি রংয়ের টাওল পেচানো তার বোন...........তার যেন তর সইছে না মনে হ্চ্ছে দুই তালা থেকে লাফিয়ে নেমে পরে।
বাসার সবাই খুব খুসি। ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে মিস্টি বিতরণ চলছে। সবাই আসছে তার বোনকে দেখতে.......কি সুন্দর বাবু...........কুটু কুটু .....পুটু পুটু.....। রেহানের মেজাজটা খারাপ হচ্ছে, কারন একেতো তাকে বাবু কোলে দেওয়া হচ্ছেই না, অন্য দিয়ে সে যে বাবুর সাথে একটু একলা খেলা করবে, তাও সম্ভব হচ্ছে না।
দেখতে দেখতে সাত দিন কেটে গেলো..........আজকে তার বোনের মাথা কামানো হবে.........তার মামা সৌদিয়ারব থেকে আসবে বাবু দেখার জন্য....বাসা লোকে লোকারন্য যেন বিয়ে বাড়ির আমেজ। ঠিক দুপুরে মামা এলেন। সবাই মিলে মামাকে দেখতে গেলো। ড্রইংরুমে মামা বসে আছেন, আর সবাই তাকে ঘিরে আছে। মামা বাবুটার জন্য অনেক কিছু এনেছে..........সুটকেজ খুলে একটার পর একটা জিনিস বের করছে....রেহানের খুব রাগ হচ্ছে, বাবুটা ঐ রুমে একলা ঘুমিয়ে আছে, আর সবাই ড্রইং রুমে হাহা..হিহি.....অসহ্য......সে তার বোনের রুমে চলে আসে। শীতের মধ্যে বাবুটা কি সুন্দর লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে.......না! বাবুটা যে একদমই নরছে না........কি হলো? শ্বাসওতো নিচ্ছে না......সে মাকে চিৎকার করে ডাকে..........ততক্ষনে বাবুটা নেই। লেপ নাকের ওপর চাপা পরে শ্বাস বন্ধ হয়ে বাবুটা মারা গেছে...........সেদিন তার মায়ে কান্নায় বাতাস যেন ভারি হয়ে গিয়েছিলো।
মিস্টি নামটা আর রাখা হলো না। তার আগেই বাবুটাকে কবর দিতে হলো। পরের দিন রেহানকে আর পাওয়া যাচ্ছিলো না। কোথাও না। তার মা বাবার অবস্হা তখন বলে বোঝানর মতো না। অবশেষে মাইকিং করতে হলো, সারা শহরের মানুষ জানলো, রেহান নামের ৫ বছরের একটি বালক কে খুযে পাওয়া যাচ্ছেনা।
সন্ধা ৬টার দিকে (যেহেতু শীতকাল, তাই ৬টা মানে অনেক সন্ধা) রেহানকে পাওয়া গেলো কবরস্হানে, তার বোনের কবরের পাসে। বোনটা একা একা ভয় পাবে, তাই সে বসে আছে............।