ঢাকা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানি ক্রমেই বাড়ছে। তুলনামূলক নারীরা সাইবার ক্রাইমের শিকার বেশি হচ্ছে। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেউ সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না জানা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং এই আইন সম্পর্কে না জানার কারণে এ ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগির সংখ্যা বাড়ছে।
‘সাইবার অপরাধ’ বলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে অপরাধ করা হয়, তাকেই বোঝানো হয়। তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল, অর্থ চুরি ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে করা হলে সেগুলোকে সাধারণ ভাষায় সাইবার অপরাধ বলা হয়। সাইবার অপরাধ মূলত কম্পিউটারে ব্যবহৃত কর্মকাণ্ড, যার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী অপরাধ পরিচালিত করে থাকে অপরাধিরা।
দেশে যে ধরনের সাইবার অপরাধ ঘটছে, তার মধ্যে রয়েছে- ই-মেইলে হুমকি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তির ওয়েবসাইট হ্যাক বা তথ্যচুরি, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দেয়া, নাজেহাল করা ও অপপ্রচার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। প্রচলিত সাইবার অপরাধের মধ্যে আছে ফ্রড কিংবা প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার চুরি, ব্ল্যাকমেইল ,পর্নোগ্রাফি, হয়রানি, অনলাইনের মাধ্যমে মাদক পাচার/ব্যবসায় প্রভৃতি। আবার জাল সার্টিফিকেট তৈরি, জাল টাকা বা জাল পাসপোর্ট, বিভিন্ন প্রকার দলিল-দস্তাবেজ কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরির ঘটনা অহরহ উদ্ঘাটিত হচ্ছে।
যেভাবে সাইবার আক্রমণ
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক অবকাঠামোকে সরাসরি আক্রমণ এবং ব্যক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যতয় ঘটানোর মাধ্যমে সাইবার অপরাধ ঘটতে পারে।
ভাইরাস আক্রমণ। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইট হ্যাকিং (বেদখল)। ম্যালওয়্যার স্পামিং বা জাঙ্ক মেইল; এটি সম্পূর্ণই মেইল ভিত্তিক। ভুয়া আইডি/ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম-ঠিকানা, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার এমনকি ফোন নাম্বার নিয়ে মিষ্টি কথায় ভোলাতে চেষ্টা করবে অপরাধী চক্র। ফাঁদে পা দিলেই বিপদ! স্প্যাম ফোল্ডারে এমন মেইল প্রায়ই আসে। সাইবার হয়রানি- ইমেইল বা ব্লগ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে হুমকি দেয়া, ব্যক্তির নামে মিথ্যাচার/অপপ্রচার,নারী অবমাননা, যৌন হয়রানি।
এছাড়াও ফিশিং- লগইন/অ্যাকসেস তথ্যচুরি, বিশেষত ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সাইটগুলো ফিশারিদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে। অর্থ আত্মসাৎ-ইন্টারনেট থেকে তথ্যচুরি করে ব্যাংকের এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর একটি উদাহরণ। সাইবার মাদক ব্যবসায়-আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ইদানীং ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাদক ব্যবসার প্রবণতা বেড়েছে। পাইরেসি- সদ্য প্রকাশিত গান ও সিনেমার এমপিথ্রি বা মুভি ফাইল ইন্টারনেটে শেয়ার হয়ে যাচ্ছে। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি- ব্লগ ও ওয়েবসাইট থেকে কোনো লেখা ও ফটোগ্রাফি সহজেই কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার প্রবনতা বেড়েছে সাইবার কমিউনিটিতে। পর্নোগ্রাফি- শিশু পর্নোগ্রাফি ইন্টারনেটে ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য-পরিচয়-ছবি চুরি ও ইন্টারনেটর অপব্যবহার বেড়েছে। হ্যাকিং- বাংলাদেশেও ওয়েবসাইট হ্যাকিং ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ক্র্যাকিং- ক্র্যাকিং হলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করে গোপনে অনলাইন ব্যাংক থেকে ডলার চুরি করা ।
সচেতনতা
আমাদের দেশে আইন থাকলেও আইনি অব্যবস্থাপনা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের বেশিরভাগেরই তথ্যপ্রযুক্তি আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই বুঝে হোক বা না বুঝে হোক সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যারা সাইবার অপরাধের শিকার, তারাও সঠিক আইনি ব্যবস্থা নিতে জানেন না। আবার অনেকে থানায় গেলেও ফল পান না। কারণ অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই জানেন না এ ধরনের অভিযোগ পেলে তার ঠিক কী করা উচিত। তাই এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আইনের প্রচার বাড়াতে হবে ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আপনাকে খুব সচেতন হতে হবে। যেমন আপনি যদি ইমেইল, ফেসবুক কিংবা কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার বিষয়গুলো ঠিকভাবে সেটিং করতে পারেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নিরাপদ থাকার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন, তাহলে দুনিয়ার যতো বড় ক্রিমিনাল হোক আপনার অ্যাকউন্টের ক্ষতি করতে পারবে না।
বিপদে পড়লে যা করতে পারেন
সাইবার অপরাধের শিকার অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিপদে পড়ে সরকারি নানা দপ্তরে দৌড়াদোড়ি করেও কূল পাননি। এ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম চালাচ্ছি আমরা {সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশন}। আমাদের হটলাইন ০১৯৫৭-৬১৬২৬৩। ফেসবুকে facebook.com/pageCCA পেজে গিয়ে ইনবক্স করতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন নিরাপত্তা টিপসও পাওয়া যায়। ওয়েবসাইট ccabd.org ।
সাইবার সিকিউরিটি সেক্টরে যারা কাজ করতে চান তারা সংগঠনটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিতে পারেন।
লেখক: কাজী মুস্তাফিজ
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক, সিসিএ ফাউন্ডেশন
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪১