বিগত ৭০০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের মূল উদ্দেশ্য যেখানে ছিল মানুষের জীবনকে আরও সহজ করা, আজ থেকে ৭০০ বছর পর হয়তো নিয়মটা কিছুটা উল্টো পথেই চলবে। এখন বিজ্ঞান বিকাশ লাভ করবে মানুষের কর্মশীলতা, স্বাস্থ্য ও নিখুত ফলাফলের উপর লক্ষ্য রেখে। ৭০০ বছর পরের সমাজ হয়তো আজকের মতো আর থাকবে না। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও উন্নত হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির কারনে মানুষকে হয়তো দূর দুরান্তে যেতেও হবে না কাজের জন্য। রোবট হলে যাবে মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
আগের পর্ব না দেখে থাকলে দেখি নিন নাহলে পুরো মজাটা পাবেন না
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-১) ( ২০১৩ থেকে ২২০০)
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-২) ( ২২০০সাল থেকে ২৭০০)
২৭৫০ ঃ
The Spikes of Earth (পৃথিবীর পেরেক)নামের অতিবৃহৎ মেশিন যা পৃথিবীর কমপক্ষে ৪টি অংশে নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে প্রতিটি ভুমি থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উচু হবে আর প্রতিটি অংশ আয়তনে ভুটানের মতো একটি দেশের সমান জায়গার উপর তৈরি হবে। এর কাজ হবে পৃথিবীর আবহাওয়া, বাতাস, তাপমাত্রা ও বাতাসে গ্যাসের অনুপাতকে নিয়ন্ত্রনে রাখা। এর বদৌলতে পৃথিবীতে কোন বড় রকমের ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি হবে না।
২৮১০ ঃ
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এখন অত্যন্ত উন্নত। এখন অধিকাংশ রোবট প্রতিটি কাজের সাথে সাথে নিজেই বুঝে নিতে পারে কি করতে হবে, তাদের থাকবে নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি, তারা তৈরি করতে পারবে নিজেদের মতো নতুন নতুন যন্ত্র। ঘরের রোবটগুলোকে মানুষ নিজেদের মতো করে তৈরি করতে পারবে। প্রয়োজনে অ্যাপ ইন্সটল করে রোবটের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন করতে পারবে।
২৮৮০ ঃ
একটি ১ মাইলের চেয়েও বড় ধুমকেতু ঠিক এই সময় পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়তো যদি না ২৮৩০ সালে একটু অতি ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পারমাণবিক বোমার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে ১৫০ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় ওটাকে ধ্বংস না করা হতো। এই ধুমকেতুই হতে পারতো ডাইনোসরের যুগের মতো মনুষ্য যুগের ইতির কারন।
২৯০০ঃ
শুক্র গ্রহে Terraforming এর কাজ শুরু হবে। মঙ্গলের চেয়ে অনুকূল পরিস্থিতি ও আরও উন্নত প্রযুক্তি থাকায় আনুমানিক ২০০ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে।
৩০০০ঃ
গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের ৩০০০ তম বছর উজ্জাপনে আকাশে একটি ভাসন্ত স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে পৃথিবী থেকে ৩,০০,০০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে আকাশে Holographic মুভির মাধ্যমে এমন কিছু দেখানো হবে যা বিজ্ঞানীরা বিগত ১৭০ বছর ধরে গোপন করে রেখেছিল। ইথানলের মাধ্যমে ও টাইমওয়ারপ মাধ্যমে তারা বের করতে পেড়েছে পৃথিবীতে হাজার বছর ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। সেটা প্রদর্শনের মাধ্যমে অনেকদিন ধরে চলে আসা মানুষের ধ্যান-ধারনা, ইতিহাস সম্পর্কে অনেক সত্যমিথ্যার জের টানা হবে। অনেক কালের মহানায়ক ঘৃণার জায়গায় চলে যাবে, অনেক বিশ্বাস আরও শক্ত হবে।
৩১২০ঃ
শুক্র গ্রহের Terraforming এর কাজ শেষ হয়। সাথে সাথে তৈরি করা বেশ কিছু বড় বড় সুপার সিটি। সাথে সাথে তৈরি করা হবে Spikes of Venus যা গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে নিয়ন্ত্রন করবে। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মানুষকে নিয়ে আশা হবে এই গ্রহে।
৩৫৭০ঃ
কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশনের পথ খুঁজে পাবে মানুষ। অর্থাৎ কোন গতি শক্তি ব্যবহার না করেই মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারবে। যেতে পারবে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে কয়েকমুহূর্তের মধ্যে। মহাবিশ্বের নকশা এখন খুব সহজেই তৈরি করা যাবে।
৩৭৮০ঃ
মহাবিশ্বে প্রায় ৪৭০০ টি গ্রহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যেখানে প্রাণ আছে। আর বুদ্ধিমান প্রাণীর গ্রহ প্রায় ৩০টি । এসব গ্রহে যাওয়া সম্ভব হলেও বার্তা আদান-প্রদান করা এখনো সম্ভব হয়নি।
৩৮১০ঃ
রোবটের মৌলিক ধর্ম হচ্ছে এমন কিছু না করা যা মানুষের ক্ষতি হয়। তবে এই সময় চূড়ান্ত বুদ্ধিমত্তার কারনে অথবা ভাইরাসের প্রভাবে পৃথিবীর একটি খুব সাধারন রোবট “জিম” হারিয়ে ফেলে এই ধর্ম। আর সৃষ্টি করে এক নতুন বাহিনী যা মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আগামী ২ মাসের মধ্যে যেসব রোবট ক্লাউডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা যায় সব এই ভাইরাস এ আক্রান্ত হয়। শুরু হয় এক ভয়াবহ যুদ্ধের।
৩৮২৫ঃ
নিরাপত্তা জনিত কারনে ৩৮২৫ সালে মঙ্গল ও শুক্র গ্রহের সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। AHRA(Anti-Human Robot Army) এরই মধ্যে Space Elevator, Floating City ও Spikes of Earth ধ্বংস করে ফেলে।
৩৮২৭ ঃ
১৬ বছর পর ভাইরাসটি নির্মূল করা সম্ভব হয়। তবে এরমধ্যেই পৃথিবীর ইন্টারনেট প্রযুক্তি, ক্লাউড সার্ভার সিস্টেম পুরোপুরি ভেঙ্গে পরে, প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ১২ বছর পর শুক্র ও মঙ্গলের সাথে পৃথিবীর যোগাযোগের রাস্তা খুলে দেয়া হয়।
৩৯০০ঃ
মহাবিশ্বের সম্পূর্ণ নকশা এখন মানুষের কাছে। বিগব্যাঙ্গ কি সত্যিই সবকিছুর সৃষ্টির আদি উৎস নাকি মহাবিশ্বের উৎপত্তির ইতিহাস কিছুটা ভিন্ন তখন বুঝা যাবে। আরও অনেক সৃষ্টির রহস্য উম্মোচন
হবে।
৩৯১৫ ঃ
অন্য গ্রহের প্রাণীদের মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করে যোগাযোগের মাধ্যম আবিস্কার হবে। এখন একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ অন্য গ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এটা হয়তো মৌখিক না হয়ে বরং ইলেকট্রিক সিগন্যাল হবে। বুদ্ধিমান প্রাণীরা এখন এক নতুন সমাজ তৈরি করতে যাচ্ছে।
৪০০০ঃ
এখন পৃথিবীর সমাজ অনেকটা স্টারওয়ারের ছবির মতো । বুদ্ধিমান প্রাণীরাও বাস করছে মানুষের সাথে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখন অনেক ভিন্ন। লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে Star Coin. অন্য গ্রহের প্রাণীদের সাথে থাকা, বিয়ে এমনকি হাইব্রিড অনেক প্রাণী যা পৃথিবী ও অন্য গ্রহের প্রাণীর মিলনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। আগামীতে হয়তো মানুষ বিবর্তনের এক অভুতপূর্ব স্তরে জায়গা করে নিবে।
তবুও মানুষের অগ্রগতি থেকে থাকবে না, যুদ্ধ হবে,রক্তপাত হবে, বিপ্লব আসবে, নতুন নতুন সমস্যার তৈরি হবে, মানুষও পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে শিখবে। এভাবে আরও এগিয়ে যাবে মানুষ। যদিও বলা যায় না আসলে কোন ঘটনাটা মানব ইতিহাসের জের টারবে, ইতি টারবে পৃথিবীর। হয়তো মানব সৃষ্ট কোন কারনে বা হয়তো প্রকৃতির এমন কোন খেলা যা মানুষ নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। তবে একটা একসময় পৃথিবীর ইতি আসবেই। মানুষকেও গ্রহণ করে নিতে হবে সৃষ্টি-ধ্বংসের নিয়মকে। ধন্যবাদ।
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-১) ( ২০১৩ থেকে ২২০০)
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-২) ( ২২০০সাল থেকে ২৭০০)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬