৩। ০৯-০৫-১৪
রামেক হাসপাতালঃ শিরোনামঃ ভুল গ্রুপের রক্তে প্রাণ গেল রোগীর!
যার ট্রান্সফিউশন রিএকশন হয় সেটা ৫-১০ মিনিটের ভিতরই শুরু হয়। পুরা ব্যাগ যেতে হয় না। ব্লাড ক্রস মেচিং এর ব্যপারে ডকুমেন্ট না দেখে কোন ডাক্তার (সে ইন্টার্নী হোক আর প্রফেসর হোক) ব্লাড ট্রান্সফিউজ করে না। দেশের মানুষ জানলো ডাক্তার ব্লাড গ্রুপ চিনে না। কি মজা!!!!
৪। ০৯-০৫-১৪
ফমেক হাসপাতালঃ আহতদের সেবায় চিকিতসকরা আসেন নি।
ভাই, কি যে বলবো? ডিকশনারী হারিয়ে গেছে শব্দ খুজে পাচ্ছি না।
ওইরাতে ডিউটিতে থাকা ছোট ভাইয়ের ফেসবুক স্টাটাসগুলো শেয়ার করছি।
এই ধরণের গাঁজাখুরি শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করে কি আনন্দ পান? ভিতরে তো লিখলেন যে আহতদের মধ্যে গুরুতরদের অপারেশন চলায় অন্য রোগীদের তেমন সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অপারেশনকে করেছিল? Triage কাকে বলে জানেন কি?
উপরের এই সংবাদগুলোর শিরোনাম দেখে সবাই ডাক্তারদের খারাপ বলতে বাধ্য। প্রত্যেকটি সংবাদে ডাক্তারদের তথ্য বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি সংবাদ ডাক্তারদের হেয় করার উদ্দেশ্যে, একই সাথে সাধারণ মানুষকে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে উস্কে দিতেই এগুলো প্রকাশ করা হয়। যে লোক কোন দিন গালি দেয় না সেও ডাক্তারদের গালি দেবে।
এটা তো গেল শুধু একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কারবার। অনলাইন তাই প্রতি ক্লিকেই টাকা। মানুষদের তো ক্লিক করার মত শিরোনাম দিতে হবে? “The news isn't there to tell you what happened. It's there to tell you what it wants you to hear or what it thinks you want to hear.” যা খেতে চায় তাই খাওয়াও।
বাকিরা কি করছে? এক পত্রিকা তো হাত কাটা রুগীর রক্তাক্ত ছবি দিয়ে ডাক্তার পেটানো জায়েজ করে ফেলেছে। ডাক্তার পান্নু ভাইয়ের ছবি দিলে কি দোষ হত? দেশবাসী জানতে পারত একজন বিনাবেতনে শ্রম দিয়ে যাওয়া মানুষ রাতের খাবার খেয়ে কর্মস্থলে ফেরার পথে ডাক্তার হবার কারণে কতটা হিংস্রতার শিকার হতে পারে। (ছবি দেখতে ও ব্লগ পড়তে চাইলে)
“Whoever controls the media, controls the mind” – জিম মরিসন
দেশের মানুষজনের মাইন্ড যে কতটা কন্ট্রোল করেছেন সেটা বুঝা যায় খবরের কমেন্ট পড়লে। এই কন্ট্রোল কি আপনাদের কোন কাজে আসছে নাকি বিশেষ কোন শ্রেণীর আর্থিক ভাবে লাভবান হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে? আপনারা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতি মানুষের বিদ্ধেষ বাড়াচ্ছেন। কাদের সুবিধা হচ্ছে? আর কাদেরই বা আসুবিধা হচ্ছে? কারা কষ্ট পাচ্ছে?
সাংবাদিকদের প্রতি ডাক্তারদের এই বিরুপ মনোভাবের কারণ হল হলুদ সাংবাদিকতা। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা সাংবাদিকতা মানলাম। নিশ্চই হলুদ সাংবাধিকতা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে হলুদ সাংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে না সেটাও জানার বিষয়।
আমরা তো রিপোর্টের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছি না। নিজের শরীরের সাথে যুদ্ধে পরাস্ত মানুষটিকে আরো কিছুদিন এই পৃথিবীর আলো-বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়াতে চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে পারি, অনেক সময় পারি না। না পারলেই আমাদের ভুলে কারো মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করাটা হালজামানার ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। যেন জাদু দেখাতে ভুল হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা তো জাদুকর নই। জাদুকর হতেও চাইনা। আমরা হাসপাতালে কাজ করি, হাসপাতালকে হাসপাতালই রাখতে চাই। মারনাস্ত্রের যুদ্ধক্ষেত্র নয়।
এটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি দৃশ্য। ডাক্তার কি রোগির চিকিৎসা করবে না যাদু দেখাবে??? এই জনগোষ্ঠিকে কতবার ভদ্রভাবে বলে ভিড় কমাতে হবে??? ভদ্রভাবে বললে ১/৪ অংশ যাবে। বাকিদের রুক্ষ ভাষায় বললেই শুরু হয় ক্ষমতা প্রদর্শনী।
আজ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দেশের ডাক্তাররা যখন কালো ব্যাজ ধারণ করে মানব-বন্ধন করছে (সকল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগ চালু ছিল), তখনই ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেনিংগো এনকেফালাইটিসে (Meningoencephalitis) এ আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যুকে ভুল চিকিৎসার কথা বলে ভাংচুর চালানো হয়। এই রোগটা কতটা ভয়ংকর জানেন কি? তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় যখন প্রিয় একজন ইন্টার্নী ভাইয়া এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তখন বুঝতে পারি এটা কতটা ভয়াবহ রোগ। হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা হয় জেনে হাসপাতালে আসার দরকারটা কি? বিস্তারিত
পেশাটা হল মানুষকে সুস্থ হতে সাহায্য করা। তাই নিজেদের কর্মস্থলকে নিরাপদ রাখতে চাওয়ার দাবি জানালে সেটা অমানবিক হয়ে যায়। হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার হিসেবে সাংবাদিক সাহেবরা মানবাধিকারের অনেক কিছুই ভালো জানেন। এই মানবাধিকারকে যারা মুখোশ বানিয়ে “You furnish the pictures and I'll furnish the war” কে মূল নীতি ধরে ফটোশপড ছবি আপলোড করতে কুন্ঠিত হয় না তারাই আজ চিকিৎসকদের মানব-বন্ধনকে নৈতিকতার মানদন্ডে দাড়া করিয়েছে।
ছবি, লিঙ্ক, তথ্য সমূহ প্লাটফর্ম এবং চিকিৎসক সমাচার থেকে নেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬