গত কয়েকদিন ধরে চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছে তার প্রেক্ষিতে বাংলানিউজ ২৪-এ গত ১১ মে ’১৪ তে ডা. সুরঞ্জনা জেনিফার রহমান (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী চিকিতসক)-এর “চিকিৎসকের আত্মপক্ষ সমর্থন” লেখাটি প্রকাশিত হয়। এর জবাবে গতকাল রাশেদ মেহেদী (বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক সমকাল) এর “যদি কিছু মনে না করেন” লেখাটি প্রকাশ পায়।
দুটি লেখা থেকে দুই পেশার মানুষদের সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়। চিকিৎসক হবার কারণে জনাব রাশেদ মেহেদী সাহেবের লেখার পড়ে যা কিছু ভালো লেগেছে এবং যা ভালো লাগেনি তা নিয়েই লেখা।
এক সময়ের জনপ্রিয় সাংবাদিক-মিডিয়া ব্যক্তিত্ত মরহুম ফজলে লোহানী সাহেবের “যদি কিছু মনে না করেন” অনুষ্ঠানের সাথে মিলিয়ে সুন্দর একটি শিরোনাম বাছাই করার জন্য প্রথমেই রাশেদ সাহেবকে ধন্যবাদ। আরো ধন্যবাদ দেশের বেসরকারী স্বাস্থ্য-সেবাদানকারী প্রথম সারির কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের খোজ দেয়ার জন্য।
কার্ডিওলজিস্ট ডা. ইমরান স্যারের মৃত্যুর খবর পেয়ে অনুধাবন করি একটি অপারেশন যত ছোটই হোক, কপ্লিকেশন ঘটতে পারে, যে কারো ক্ষেত্রেই হতে পারে।
লেখার মাঝামাঝি এসে তিনি বলেছেন, “সত্য হচ্ছে, এই ডাক্তাররা সাংবাদিকতা সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও রাখেন না। কেউ অসুস্থবোধ করলে যেমন ......... ........ ...... ........... ............. ................. ........... সাংবাদিকদের তার বক্তব্য কিংবা তথ্য সংগ্রহে কৌশল অবলম্বন করতে বাধ্য হতে হয় অথবা ‘বক্তব্য পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে খবরটা প্রকাশ করতে হয়। “
আমি সাংবাদিকতা বিষয়ে নূন্যতম ধারনাও রাখি না। কিন্তু কি কি সংবাদ আসছে, কি সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তা জানি। জানি কারণ সংবাদগুলো পড়ি। বাংলানিউজ২৪ এ যেহেতু লেখা দুটি প্রকাশিত হয়েছে তাই এই সংবাদ মাধ্যমের গত কয়েক দিনের সংবাদগুলো শেয়ার করছি। সবগুলো খবরই দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের ঘটনা নিয়ে।
খবরগুলো দেখার আগে চলুন উইকিপেডিয়া থেকে হলুদ সাংবাদিকতার বিষয়ে জেনে নি।
ফ্র্যাঙ্ক লুথার মট হলুদ সাংবাদিকতার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন:
• সাধারণ ঘটনাকে কয়েকটি কলাম জুড়ে বড় আকারের ভয়ানক একটি শিরোনাম করা।
• ছবি আর কাল্পনিক নক্সার অপরিমিত ব্যবহার।
• ভুয়া সাক্ষাৎকার, ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে এমন শিরোনাম, ভুয়া বিজ্ঞানমূলক রচনা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ভুল শিক্ষামূলক রচনার ব্যবহার।
• সম্পূৰ্ণ রঙিন রবিবাসরীয় সাময়িকী প্রকাশ, যার সাথে সাধারণত কমিক্স সংযুক্ত করা হয়।
• স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানো পরাজিত নায়কদের প্ৰতি নাটকীয় সহানুভূতি।
খবর এবং আমার কয়েকটি প্রশ্ন এবং মন্তব্য।
১। ০৬-০৫-১৪ঃ
ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে শিরোনামঃ “তোর মাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেললে টের পাবি”
ইনভার্টেড কমার ভেতর দেয়া কোন এক ইন্টার্নীর উক্তি। কোন ইন্টার্নী? কেউ জানে না। স্টাফকরেস্পন্ডেন্ট সাহেব তো নিজেও শুনেন নাই। শুধুমাত্র একজন ছাত্রনেতার কথায় এই শিরোনাম করা হয়েছে। আমরা বাঙ্গালীরা এমনিতেই ইমোশনাল। একজনের ‘মা’কে নিয়ে এত বড় কথা বলল ডাক্তার। এরা মানুষ না কসাই। সাধারণ মানুষ ফেসবুকে নিয়ে নিল একচোট। যারা গালিগালাজ করল না তারাও ডাক্তারদের প্রতি বিরক্ত হল। ডাক্তাররা রোগিদের মা-বাবাদের সম্মান দেয় না। ওইদিনের ঘটনার ভেতরের খবরের জন্য এখানে যান।
২। ০৮-০৫-১৪
ঢামেক হাসপাতাল, নিউরোসার্জারি ডিপার্টমেন্টঃ শিরোনামঃ ঢামেকে অপারেশনের জন্য অপেক্ষায় থেকে শিশুর মৃত্যু
সড়ক দূর্ঘটনায় আহত একটি শিশু মারা গিয়েছে, যে অপারেশনের অপেক্ষায় ছিল। অপেক্ষার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে নাকি দূর্ঘটনায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য? দূর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যাক্তি কোথায়? কেন অপারেশন করা সম্ভব হয় নাই সেটা ডাক্তাররা বলছে, তারপরও সবাই ডাক্তারদের উপর রাগ প্রকাশ করে অসাধারণ সব কমেন্ট করল। দেশবাসী জানল, চিকিতসার অভাবে ৫ বছরের বাচ্চা মারা গেছে। একজনের কমেন্ট ছিল, অসম্ভব বলে কোন কাজ নাই।
২য় খন্ড
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৩:২৩