জার্মানিতে এবারে সামার যেন বাংলাদেশের চৈত্র মাসের গরম কেমন সেটা জার্মানদের বুঝিয়ে ছাড়বে । ১৮৮১ সালের পর এবারই সবচেয়ে বেশিগরম পড়েছে সপ্তাহব্যাপী , তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮/৩৯ ডিগ্রীর মধ্যে উঠা নামা করেছে সপ্তাহব্যাপী । আর মাঝে মাঝেই অল্পকিছুক্ষনের জন্য ঝিরিঝিরি বৃস্টির হিমেল হাওয়া বয়ে গেলেও গরম দিনের বেলায় ভালই পড়েছে। এমনই এক দিনে ছুটি পেতে কার না ভাল লাগে। আর বস কাম কলিগ যার ধারনা তার ছুটির দিনে ওয়েদার খারাপ হতেই হবে , তার আর আমার ছুটি এক সাথে পড়ে গেল। তাই আগের দিন প্ল্যান করলাম , সকাল সকাল বাই সাইকেল নিয়ে ২ জন বেরিয়ে পড়ব। ব্ল্যাক ফরেস্টের মাঝ দিয়ে বাইক চালিয়ে ব্ল্যাক ফরেস্টের মাঝে একটা ন্যাচালার লেক আছে যেটি আমাদের অবস্তান থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরের পথ সেটিতে যাব। সারা দুপুর সেখানে কাটাব , সাতার কাটার , লাঞ্চ বাইরেই করব আর বিকেল তারই এক ফ্রেন্ডের বাসায় গ্রিল পার্টির প্রোগ্রাম সেখানে যাব ।
যথারীতি পরের দিন সকাল সকাল ওঠে বাইসাইকেল নিয়ে বাইরে রেরুনোর আগে আবহাওয়ার খরব শুনে মাথায় বাজ। সকালে তাপমাত্র কমে গেছে , হাল্কা হাল্কা বৃস্টি পড়ছে আর দুপুর পর্যন্ত তাপমাত্র কম থাকবে, বিকালের আগে রোদ উঠার সম্ভবনা নাই। আর এর মাঝে সাইকেল চালানো গেলেও ন্যাচারাল লেকের পানির তাপমাত্রা আর বাইরের তাপমাত্রা কথা চিন্তা করে সাতার কাটার চিন্তা করাই পাপ।
আর এক বারের মত প্রমান হল আমার কলিগের সেই কথা, তার ছুটির দিনে আবহাওয়া খারাপ হতেই হবে। কি আর করার দিলাম তারে ফোন, বেচারা অনেক দিন ধরেই বলতেছিল, সুইমিং এ যাওয়া হয় না অনেক দিন। কদিন ধরে যে গরম পড়ছে এর মাঝে সুইমিং পুলের আর্টিফিশিয়াল হাল্কা গরম জলে সাতারের চেয়ে ন্যাচারাল লেকে সুইমিং এ গেলে মন্দ হত না। কিন্তু এই ঠান্ডা আবহাওয়া ঠান্ডা পানিতে সুইমিন করাটাও সম্ভব না। তাহলে এখন কি হবে? আপাতত সাইকেল ট্যুর এর সলীল সমাধিঘটল এখানেই। যেহেতু বিকেল রোদ উঠবে আর গ্রিল ইনডোরেও করা যায় , প্ল্যান হল দুপুর ১২ টায় বেরিয়ে আমরা নতুন প্ল্যান করব।
যথাসময়ে বাসা থেকে বেরুনোর পরই বাইরের আবহাওয়া ভাল হচ্ছে দেখে আফসোস লাগছিল। গাড়িতে উঠেই কলিগ কাম বসকে বলেই ফেললাম আফসোসের কথা। অনেক দিন পর ব্ল্যাক ফরেস্টে সাইকেল দিয়ে ঘুরার চান্সটা মিস হয়ে গেল । কিছুক্ষন পর কলিগ দেখি গাড়ি তার বাসার দিকে না চালিয়ে উল্টা পথে এগুচ্ছে। প্রশ্ন করতেই বলল , যেহেতু সাইকেল দিয়ে হল না, এখন আমরা গাড়িতেই না হয় ব্ল্যাক ফরেস্ট ঘুরে দেখি। মুটামুটি ৪০-৫০ কিলোমিটারের মত ব্ল্যাক ফরেস্টের মাঝের আকা বাকা পথে গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর পরে কলিগ আমাকে বলল , এবার চল সিলভার সে দেখে আসি। সিলভার সে হচ্ছে সে জায়গা যেখানে আমাদের আজ সাইকেল চালিয়ে এসে সাতার কাটার কথা ছিল। ব্ল্যাক ফরেস্টের মাঝে একদম শান্ত একটা জায়গা, চারদিকে বসত বাড়িও কম । আর সরু রাস্তায় গাড়ির চলাচলও কম। আর আজকে একটু ঠান্ডা পরায় মানুষজন ও নেই।
বলে রাখা ভাল সিলভার সে একটা ছোট দিঘির মত জায়গা, চারদিকে পাহাড় ঘেরা , শান্ত একটা জায়গা, একটা প্রকৃতিক ঝর্না প্রবাহিত হচ্ছে হ্রদের উপর। এক কথায় অসাধারন চারদিকে সবুজের মাঝে দারুন একটা জায়গা। যেহেতু এটা প্রাকৃতিক লেক আর পানিতে সুর্যের আলো পড়তে অনেকটা সিলভারের মত লাগে , আর জার্মান ভাষায় সে মানে হ্রদ বা দিঘি তাই এর নাম সিলভার সে। এবার ঘুরে দেখা যাক সিলভার সে...
পার্কিং এ গাড়ি রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রবেশ ফ্রি হলেও প্রবেশ পথে কিছু নিয়মাবলী লেখা রয়েছে। মে মাস থেক সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ৮ট থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি... এখানে কুকুর নিয়ে প্রবেশ নিষেধ ।
প্রথম দর্শন
দূরে ছোট ঝর্না ধারা
সামারে গ্রিল পার্টির জন্য গ্রিল প্লেস
এখানে ছোট একটা ঘর রয়েছে, যেটাতে বসে আড্ডা দেয়া যায় ।
পানির খুব কাছে যাতে যেতে পারে সে জন্য কাঠ দিয়ে মাচার মত করে দেয়া হয়েছে
কাঠের ঘরের ভেতরের ছবি
ঘরের সামনে সিলভার সে নিয়ে কিছু কথা
সামনের দিকে এগিয়ে গেলে পানির খুব কাছে যাওয়া যায়
এখানে এসেই দেখি বস তার জুতা খুলা শুরু করছে, মনে মনে ভাবেতেছিলাম পানিতে ঝাপ দিবে নাকি। কিন্তু না তার দেখাদেখি একটু পরে আমিও শুরু করলাম
পানি ঠান্ডা হলেও ভালই লাগছিল। আর যাই হোক মন খারপ থাকলে এখানে এসে পানিতে পা ডুবিয়ে কিছুক্ষন বসে ঝর্নার দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভাল হয়ে যাবে আমি নিশ্চিত
পানিতে পা ডুবিয়ে চারদিকে দেখে নেওয়া যাক
পানিতে ছোট ব্যাংগের পোনা দেখে ছোট বেলায় মাছ ভেবে ব্যাংগের পোনা ধরার কথা মনে পড়ে গেল।
দূরে এক কোনায় ইহা দেখে মনে পড়ল, জার্মানিতে বাস, ট্রেন, পার্ক, মার্কেট যেখানেই যান না কেন ইহার খুজে পাবেনই। এইখানে বনে মাঝেও যাতে পাব্লিকের যেখানে সেখানে যেতে না হয় সেই জন্য পাব্লিক টয়লেট
শুরুতে বলেছিলাম ঢুকার সময় গেটে কিছু নিয়মের কথা। তেমনি এখানে লেখা প্লিজ সিগারেট খেয়ে যেন সেটা লেকের পাড়ে বা যেখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে।
প্যানারোমা ভিওতে
যেহেতু উদ্দেশ্যহীন ঘুরোঘুরি তাই পরের গন্তব্যস্থল জানা নেই, তবে এবার ও বাসার দিকে যাচ্ছি না সেটা ঠিকই বুঝতে পারছি। আর বিকেল হতে এখনও কিছুটা সময় বাকি , তো দেখা যাক পরের গন্তব্য কোথায়। সেটা নিয়ে না হয় পরে আর একবার লিখব ..
লেখাটি পুর্বে view this linkপ্রকাশিত ।