শ্রমমন্ত্রণালয়ের অধীনে কারখানা পরিদর্শন বিভাগ তাদের রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ অর্থবছরে ৬৯৯টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করেছে।
কারখানা পরিদর্শন বিভাগ সূত্র জানায়, ৬৯৯ টি কারখানার মধ্যে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত কারখানা নির্বাচন করেছে ৪৩৭টি। পোশাক কারাখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের গঠিত জোট অ্যালায়েন্স ১১৪টি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) নির্বাচন করেছে ১৪৮টি কারখানা।
সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৪ সালে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স এবং বুয়েট মোট ৩৪৭২টি কারখানা পরিদর্শনের জন্য নির্বাচন করে। এর মধ্যে ২৩০৭টি কারখানা পরিদর্শন শেষে শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বন্ধ করা হয় ৩২টি কারখানা। কারখানা মালিক পরিচালনাজনিত অক্ষমতার কারণে তার নিজের ইচ্ছায় বন্ধ করেছে ২১টি কারখানা।
কারখানা পরিদর্শন বিভাগের মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ নতুন সময়কে জানান, আমরা মূলত দেখি শ্রমিকের স্বার্থ। কোনো কারখানা যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাহলে আর দেরি না করে তা বন্ধ করে দিই। এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে কারখানা বন্ধ হতে পারে যেমন: কারখানার অনুমোদন না থাকা, অতিরিক্ত ফ্লোর করা, শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারাসহ অবৈধভাবে তৈরি কারখানা ইত্যাদি। গত বছর এ খাতে মামলা হয়েছিলো ২১৩টি।
দেশের বৃহৎ পোশাক রফতানি খাত পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বিজিএমইএ’র সদস্যভূক্ত ২৮০টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে (যা ৬৯৯ টি কারখানার সাথে অন্তর্ভূক্ত)। এর মধ্যে শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করেছে ২৯টি কারখানা। এছাড়া বাকি কারখানাগুলো শ্রমিকদের মজুরি দিতে না পারায় বন্ধ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মো: শহিদুল্লাহ আজীম নতুন সময়কে জানান, আমরাও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার ব্যাপারে কোনো প্রকার আপোস করি না। কোনো কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে আমরা তা বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেই। কারণ সবার আগে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আবার বিভিন্ন গার্মেন্টস সংগঠনের নেতারা বলেন, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে, তাদের জীবনমান ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বিশ্ববাসীর অজানা কিছু নয়। আমরা যদি ফিরে তাকাই দেখতে পাবো তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় যখন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে, ক্রেতারা পোশাক ক্রয়ের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল আর তখনই জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মালিকশ্রেণী ও সরকারের টনক নড়ে।
তারা বলেন, দেশে শ্রম আইন থাকা সত্ত্বেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় আজ জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ স্বার্থ বিরোধী এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স। যাদের দ্বারা শিল্প ও শ্রমিকদের কোন উপকার হয়নি বরং বেশ কিছু কারখানা বন্ধসহ প্রায় কয়েক লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়েছে।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে প্রায় ৪শ’র অধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শনের চিঠি পেলে মালিক ও শ্রমিক এখন শিল্প বন্ধের আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। কখন যেন কারখানা বন্ধ হয় এবং শ্রমিকরা বেকার হয়ে যায়। কারণ একটি কারখনা বন্ধ করে দিয়ে তো কোনো সমাধান হবে না। যে কারখানাটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় সেই কারখানা মালিককে কি কি করতে হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। তা না করে তারা কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই আমরা শ্রমিক নেতারা তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা চাই না, সারাকা, তাজরীন এবং রানা প্লাজার মত আর একটি দুর্ঘটনা ঘটুক। এটাও চাই না যে, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার নামে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাক।
নেতারা জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসে প্রায় ২ হাজারের অধিক শ্রমিক নিহত এবং হাজার হাজার শ্রমিক আহত হয় ও পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
নতুন সময়
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৩