কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও চিলমারীতে ত্রাণ অধিদপ্তরের ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ দরপত্রে প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী। এ দুর্নীতির সাথে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সম্প্রতি ত্রাণ অধিদপ্তর জেলার ৯ উপজেলায় ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। ফুলবাড়ি উপজেলায় ৩ টি ব্রিজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৬৯ লাখ ১৩ হাজার ১১৭ টাকা। ৩ গ্রুপের বিপরীতে ১৫৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও ১৫৩টি দরপত্র ঠিকাদাররা দাখিল করেন। এরমধ্যে যাছাই-বাছাইকালে ১৪০টি দরপত্র বৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের শর্তানুযায়ী প্রকাশ্য লটারীর মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করার কথা। কিন্তু তা এ দু’টি উপজেলার ক্ষেত্রে একেবারেই মানা হয়নি। ফুলবাড়িতে পঞ্চগড় থেকে সদ্য যোগদানকৃত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা।
গত মঙ্গলবার কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে সকাল ১০ টার মধ্যে ঠিকাদারদের অনুপস্থিতিতে ৩ জনের মধ্যে কাজ বন্ঠন করে লটারী হয়েছে বলে প্রচার চালায়। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে ঠিকাদারদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অবিলম্বে এ কাল্পনিক লটারী বাতিল করে প্রকাশ্য লটারীর মাধ্যমে কাজ বণ্টনের জন্য জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তারা।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ের রহমান ট্রেডার্স, গাইবন্ধার আব্দুল লতিফ হক্কানী, কুড়িগ্রামের ফাহিম ট্রেডার্স এর নামে কাজ বণ্টন দেখানো হলেও ঐসব লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রকৃত পক্ষে পেয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের গোলাম রব্বানী সরকার, নজরুল ইসলাম বকসি ও হারুন-অর-রশিদ। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত নিজেই পঞ্চগড়ের তার পছন্দের ঠিকাদারের লাইসেন্স দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেন।
অন্যদিকে, জেলার চিলমারী উপজেলাতেও একইভাবে গত বুধবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী বীরবিক্রম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে লটারীতে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। ৬৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫১৫ টাকার ৩ টি গ্রুপের কাজ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার মাঝে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছেন বলে তাদের ওপর এই অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ১৪৫টি দরপত্র বিক্রয় হলেও ১৪০ টি দরপত্র দাখিল হয়। এরমধ্যে যাছাই-বাছাইকালে ১২০ টি বৈধ বলে বিবেচিত হয়।
দরপত্রে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদার মেসার্স সুগন্ধা বিল্ডার্স এর স্বত্বাধিকারী শ্রী সুষেন চন্দ্র সরকার, মেসার্স ইসমাইল হোসেন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নিয়ম অনুযায়ী লটারী অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় জানিয়ে অংশ গ্রহনকারী ঠিকাদারদের নোটিশ দিয়ে জানানোর কথা। কিন্তু এখানে তা মানা হয়নি। তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে গেলে তারা লটারী সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় কিংকর্তব্য বিমুড় ঠিকাদাররা দুর্নীতির বিষয়টি আচ্ করে পুণরায় লটারীর মাধ্যমে কাজ বণ্টনের জন্য জেলা ত্রান ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কাজ ভাগাভাগির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলার প্রকৃত ঠিকাদারদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, লটারীর নোটিশ ৩ দিন আগে প্রচার করার নিয়ম থাকলেও এ দুই উপজেলার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলে ঠিকাদাররা জানান।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছির উদ্দিন মাহমুদ জানান, নিয়ম অনুযায়ী লটারী হয়েছে। কিন্তু চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তবিবুর রহমানকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
ফুলবাড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের মধ্যে লটারী সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেন।
ফুলবাড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সকাল ১০ টা থেকে সেখানে উপস্থিত থেকে কোন লটারীর দৃশ্য দেখেননি বলে সাংবাদিকদের জানান।
চিলমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার দাবি করেন, ঠিকাদাররা উপস্থিত না থাকলেও যথা নিয়মেই লটারী হয়েছে।নতুন সময়