২০১৫ সালে কোনদিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট? কোনো রাশিগণনার মাধ্যমে এ ভবিষ্যদ্বাণী কারও পক্ষেই করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যৎ এগোয় অতীতের ওপর ভর করে।
২০১৪ সাল মোটেই সুখকর ছিলো না বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের জন্য।
বছরের শুরুতে এশিয়া কাপ আর টি-২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে লম্বা সফরে বাংলাদেশে আসে শ্রীলঙ্কা। ঘরের মাঠে তাই শক্তিশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা করছিলেন বেশিরভাগ ক্রিকেট ভক্তই। কিন্তু সিরিজে সবকটি ম্যাচ হেরে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশই!
দু’টি ম্যাচ ছিল একেবারে জয়ের বন্দরে, মনে হয়েছে পরাজয় জোর করে বরণ করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের চরম বাজে পারফরমেন্স আড়াল করে দেয় বোলারদের কৃতিত্ব। ব্যাটিং ব্যর্থতায় টেস্ট সিরিজের দুটি ও টি ২০-র একমাত্র ম্যাচটিও বাজেভাবে হেরে এশিয়া কাপের আগেই অশনিসংকেত দেখা দেয় দেশের ক্রিকেটে।
এশিয়া কাপের নতুন সদস্য পুঁচকে আফগানিস্তানের কাছে হারার পর বাংলাদেশের সামনে আসে এশিয়া কাপ-২০১৪ এর লজ্জাজনক স্মৃতি। এশিয়া কাপের প্রতেকটি ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ হেরেছে জেতার আসা জাগিয়েও। একে একে হেরেছে ভারত, অফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে।
আর এশিয়া কাপে স্বাগতিকদের প্রাপ্তি বলতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানে সেরা ছয় জনের দু’জনই বাংলার টাইগর। এনামুল হক বিজয় ২২৭ রান করে অবস্থান করছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
তবে সেরা দশ বলারের তালিকায় নেই কোন বাংলাদেশি খেলোয়ার।
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে প্রথম বারের মতো এশিয়া কাপের আয়োজক হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশে দ্বিতীয় দফা এশিয়া কাপ আয়োজিত হয় ২০০০ সালে। ২০১২ সালে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করে বাংলাদেশ। ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে টপকে ফাইনালে উঠে যাওয়ার পর পাকিস্তানের কাছে মাত্র দুই রানে হেরে এশিয়া কাপ জেতার স্বপ্ন অধরা থাকে সাকিব-মাশরাফি-মুশফিকদের। এ বছর চতুর্থবারের মতো স্বাগতিক হয়ে আয়োজক হিসেবে শ্রীলঙ্কার রেকর্ড ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।
এরপর আসে আইসিসি টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ২০১৪ আসরের আরেক লজ্জাজনক স্মৃতি।
জয়হীন থেকেই আইসিসি টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ২০১৪ আসর শেষ করলো বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের প্রতেকটি ম্যাচে হেরেছে বংলাদেশ। ওয়েস্টে ইন্ডিজের কাছে ৭৩ রানে, ভারতের কাছে আট উইকেটে, পাকিস্তানের কাছে ৫০ রানে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাত উইকেটে হারে বাংলাদেশ।
তবে টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ২০১৪ এর মুল আসরে অংশ নিতে বাংলাদেশকে অংশ নিতে হয় বাছাই পর্বে । বাছাই পর্বে আফগানিস্তানকে নয় উইকেটে এবং নেপালকে আট উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় বংলাদেশে। তবে তৃতীয় ম্যাচে হংকংয়ের কাছে দুই উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের দুই মাস পর ভারত দল পাঠায়, যদিও জাতীয় দলের মোড়কে সেটি ছিল দ্বিতীয় সারির দল। অবজ্ঞা কিংবা উপেক্ষার জবাবে সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র খেলোয়াড়েরা ‘মাঠে দেখা হবে’ টাইপ মন্তব্য করলেও হতাশাজনক পারফরমেন্স ছিল এখানেও।
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বড় রান তাড়া করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল ব্যাটিং লাইনআপ। দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৭ রানে অলআউট করেও অর্ধেক রানের হার, সেই সাথে হাতছাড়া সিরিজও। তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত না হলে হয়তো সেটিও হারতে হত । ২০১৪ সাল যে বাংলাদেশের জন্য ‘কুফা’ তাই প্রমানিত হল।
আগষ্টে শুরু হয় ব্যর্থতার ক্যানভাসে শেষ আঁচড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। তবে বাংলাদেশকে সেখান থেকেও ফিরে আসতে হয়েছে খালি হাতে। সর্বশেষ সফরে টেস্ট-ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই ধোলাইয়ের সুখকর স্মৃতি ছিল, কিন্তু সেটা আত্মবিশ্বাস হিসেবে কাজে লাগেনি মোটেও। দুই টেস্টের দুটি, তিন ওয়ানডের তিনটি- সব ম্যাচে বাংলাদেশের নাম ছিল পরাজিত দলের জায়গায়। একমাত্র টি২০ ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় অন্তত এটুকু এখন বলা যায়, একটি ট্রফির ভাগ তো পাওয়া গেছে!
বছরের শেষে এসে বাংলাদেশ যেন জয়ের জন্য মরিয় হয়েই ঝাঁপিয়ে পরেছিল জিম্বাবুয়ের উপর। তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে এবং পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করে বাংলাদেশ। সাথে সাথে একমাত্র টি-২০ ম্যাচটিতেও হারে জিম্বাবুয়ে।
‘তাই শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ একথাটা মেনেই, তাকিয়ে থাকতে হবে ২০১৫ সালের এরদিকে। যদি ভালো কিছু করেনতুন নময়