হঠাৎ করে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এবং হরতালে আবারো উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে পর্যটন শিল্পে। পর্যটন শহর রাঙামাটিসহ দেশব্যাপি এর প্রভাব পরতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০দলের সোমবারের হরতাল শেষ হলেও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের রায় হচ্ছে মঙ্গলবার। এ রায়কে কেন্দ্র করে নতুন করে হরতালের ঘোষণা দিয়ে জালাও পোড়াওসহ নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে জামায়াত।রাঙামাটি (2)
এমন আশঙ্কায় রাঙামাটিতে ভ্রমনে আসা পর্যটকরা সোমবার সন্ধ্যার আগেই শহর ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অপরদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের লাভের আশায় ছাই পড়েছে। বছরের এই সময়টা পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি। আর এই সময়টাই তাদের আয়ের মোক্ষম সময়। প্রতিদিনই সরগরম থাকে পর্যটন স্পটগুলো। তিল ধারণের ঠাই থাকে না হোটেল মোটেলগুলোতে। ক্রয়-বিক্রয় বাড়ে রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় দোকান সমূহে। শান্ত লেক কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠে পর্যটকবাহী লঞ্চ ও বোটের শব্দে।
শহরের রিজার্ভ বাজারের আবাসিক হোটেল ড্রিম ওয়ে’র মালিক মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান, এসময়টা হলো ব্যবসার সময়। এসময়ে হরতাল অবরোধ হলে পর্যটক আসে না। ইতোমধ্যে বুকিং বাতিল করে অনেক পর্যটক শহর ছেড়ে চলে গেছেন।
রাঙারাটিপুরান বাসস্ট্যান্ড এলাকা হোটেল প্রিন্সের মালিক নেছার আহম্মেদ বলেন, হরতালের ঘোষণা দেয়ার পরেই হঠাৎ করেই পর্যটক আসা কমে গেছে। এই সময়টা মানুষ অবসর পায়। বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়। অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে বের হন। কিন্তু হরতালের ঘোষণা হওয়ার পর বেশ কয়েকটি বুকিং ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। হরতালের ঘোষণায় বুকিং বাতিল হওয়ার একই অভিযোগ করেন অধিকাংশ আবাসিক হোটেলের মালিকরা।
বনরূপা বাজারের হোটেল নিউ আল-মদিনার প্রোপ্রাইটর দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, সারা বছরের মধ্যে এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি আমরা। কারণ এই সময় পর্যটক আসেন বেশি। গত কয়েকদিন বেশ ভালোই ব্যবসা করেছি। হোটেলে যেমন লোকজন এসেছে প্রচুর পাশাপাশি অর্ডারও পেয়েছি অনেক। কিন্তু হঠাৎ করে হরতালের ঘোষণায় দিন দিন পর্যটক কমছে। এরমধ্যে অনেক পর্যটক শহর ছেড়ে আগেবাগেই চলে গেছে।
রিজার্ভ বাজারের হোটেল তাইপিং ও সুন্দরবনের মালিক শামীম খান বলেন, বছরের এ সময়টা আমাদের ব্যবসার আসল সময়। ব্যবসাও হচ্ছিল বেশ। কিন্তু হঠাৎ করে হরতালের ঘোষণা দেয়ায় বেচা বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে প্রতিদিন যেখানে পঞ্চাশ হাজার টাকার উপরে একটি হোটেলে বিক্রি হতো। হরতালের ঘোষণার পর তা নেমে এসেছে বিশ হাজারের নীচে।
বয়ন টেক্সটাইলের মালিক জহির আহম্মেদ বলেন, ঈদ,কোরবান,পূজা কিংবা বিজুর সময় যে বেচাকেনা হয়না। তার চেয়ে বেশি হয় পর্যটক আসার এসময়টাতে। কয়েকটি বছর হরতাল অবরোধের কারণে ব্যবসা মন্দা গেছে। গত বছর থেকে ব্যবসার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এবছরের শুরু থেকে ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই হরতালের ঘোষণায় বেচাকেনায় ধ্বস নামে।
বোট মালিক মোঃ দিদার বলেন, পর্যটক আসার এই সময়টাতে হরতাল দিলে আমরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হই। বছরের অন্যান্য সময় পর্যটকদের জন্য আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এইসময়টাতে পর্যটকদের চাপ থাকে বলে কোনো বোটই অলস পড়ে থাকেনা। হঠাৎ করে হরতালের ঘোষণায় এখন আমরা অনেকটা বেকার হয়ে পড়ছি।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, হরতালের ঘোষণার পর পর্যটন করপোরেশনের বুকিং ইতোমধ্যে ২৫% কমে গেছে। এ মাসের শুরু থেকে যেখানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছিল সেখানে এই দুই একদিনে পর্যটক আসা যেমন কমে গেছে তেমনি অগ্রিম বুকিংও অনেক বাতিল হয়ে গেছে। ফলে পর্যটকের এই ভরা মৌসুমে অলস সময়ই কাটাতে হবে।নতুন সময়
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৫