ভূমিকা
জামাতের লিঙ্ক লবিং কিংবা বাঁশের কেল্লার দিকে তাকালেই বুঝা যায় তাদের লোকবল এবং ফান্ডিং বেশ স্ট্রং। জামায়েতি ইসলাম সাংগঠনিক ভাবে অনেক দক্ষ। তাঁদের মূল শক্তি বলা যেতে পারে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তার, আর্থিক সংগঠন এবং বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল গুলোর ভোটের রাজনীতি এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে জোট বাধা। নানা রকম তর্ক বিতর্ক থাকা সত্বেও গণজাগরণের কারনে এত বছরে সবচাইতে বড় ধাক্কাটি খেয়েছে জামায়াত শিবির। একদিকে তাদের নেতাদের আটকে ফেলা হয়েছে, অন্য দিকে সহজ সরল মানুষদের ধর্মের নামে তারা যে বোকা বানিয়ে আসছিলো, তাও ফ্লাশ হয়ে গেছে। খসে পড়েছে তাঁদের মুখোশ। এতে করে ম্যাস পিপলের কাছে তাদের গ্রহনযোগ্যতা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এই সুযোগে যদি জামায়তের সকল প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক সংগঠন গুলাও গুড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে মাথা তুলে দাড়ানোর শক্তিটা নষ্ট হয়ে যাবে তাদের। যেই কাজ টা ৪২ বছর আগে শুরু হয়া দরকার ছিলো, এতদিন পরে হলেও তার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল পর্যায়ে যেভাবে শুরুটা হয় জামাতি নেটওয়ার্ক
আমরা দেখেছি, মাদ্রাসাগুলোর কথা বাদ দিলেও একটা মফস্বল, গ্রাম কিংবা শহরের পাড়া মহল্লা ও কলোনী এরিয়াগুলোতে জামায়াত তার শিবীরের ফ্রন্ট দিয়ে শিশুকাল থেকেই গ্রুমিং শুরু করে দেয়। ট্যালেন্ট বাচ্চাকাচ্চাদের টার্গেট করে থ্রি ফোর এ পড়া অবস্থাতেই তাঁদের হাতে তুলে দেয় কিশোর কন্ঠ আর জুভানিল ভয়েস। সাহিত্যনুরাগি করার নাম দিয়ে শুরু করে দেয় ব্রেইন ওয়াশ আর ভুল ইতিহাসের চর্চা। ক্লাশ ফাইভে/এইটে স্কলার্স ফোরাম নামে বৃত্তি প্রদান করে আরো একধাপ কাছে টেনে নেয় শিশু কিশোরদের। ইসলামি ছাত্রশিবীরের এক ধরনের রিপোর্ট ফরম আছে যেখানে রেগুলার নামাজ ও কোরআন শরীফের একটা রুটিন ফলো করানো হয়। আপাতদৃষ্টিতে এতে খারাপ কিছু না থাকায় অভিভাবকরাও ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখে। আদতে এই সকল রিপোর্ট, উইকএন্ডে মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠান হচ্ছে কমিউনিকেশন বিল্ড আপ করার পদ্ধতি। একবার যখন কোন কিশোর এই প্রসিডিওরের মাঝে ঢুকে পড়ে, তখন আর বের হবার কোন উপায় থাকেনা। ভালো কিছু প্রাক্টিসের পিছনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিবীরের সাথে তাঁদের ইনভল্ভ রাখা। একসময় টার্গেটেড বাচ্চাদের তারা শিবীরের সমর্থক থেকে কর্মীতে রুপান্তর করে। স্পোর্টস, ডিবেট বা কুইজের মত ইভেন্টের মধ্য দিয়ে ইনভল্ভমেন্ট বাড়তে থাকে তারা। বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে অত্যন্ত সচেতন ভাবেই তারা এড়িয়ে যায় আমাদের দেশের সঠিক ইতিহাস। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে সত্যিকার ধর্মীয় বিশ্বাসের উপরে এটে দেয়া হয় মৌলবাদ আর জিহাদি লেবাস। আর এতদিন ধরে গ্রুমিং করার ফলে সত্য মিথ্যার পার্থক্য বিচার করার ক্ষমতাও থাকেনা এই বাচ্চাগুলোর।
স্কুল পেরিয়ে কলেজের গন্ডিতে ঢুকার সাথে সাথে তাদের দিয়ে শুরু করানো হয় রাজনৈতিক কার্যকলাপ। ইসলামে যেখানে নারী নেত্রিত্ব কিংবা গণতন্ত্রকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ক্ষমতা দখল করতে চায় যে কোন মূল্যে। কলেজে থাকতেই মোটামুটিভাবে মিছিল মিটিং ও সমাবেশ বাদ্ধতামূলক করা হয় তাদের কিশোর কর্মীদের জন্য। তাদের প্রোভাইড করা হয় যাবতীয় সুবিধা ও টাকা পয়সা। কলেজ পাশ করলেই রেটিনা কিংবা ফোকাস এ ভর্তী করে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের একটা স্থান করে নেয়ার জন্য। প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সহ নানান অনৈতিক উপায়ে তাঁদের পুট আপ করা হয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে। যারা ঢাকার বাইরে থেকে আসে, তাঁদের জন্য রয়েছে শিবীরের নিজস্ব মেস, বাসা। সেখানে রাতের পর রাত চলে ব্রেইন ওয়াশ। জিহাদের কথা বলে স্টিমুলেট করা হয় তারুন্যকে। দেয়া হয় ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। এর মাঝ থেকেই কাওকে কাওকে বেছে নেয়া হয় হিটার হিসেবে। বোবামাজি থেকে সুইসাইড টিম পর্যন্ত তৈরি করতে দ্বিধা করেনা। এখন অনলাইন মিডিয়ার কারনে সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যায় তারা সমান ভাবে এক্টিভ। ছাত্রাবস্থায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্যে তাদের আছে আছে প্রমোশন সিস্টেম। একটা সফল অপারেশনের পর বাড়িয়ে দেয়া হয় সুযোগ সুবিধা। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার হলে চাকুরির সুব্যাবস্থা তো আছেই। জামাতি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্খ্যা তো কম নয়। ইসলামি ব্যাঙ্ক, দিগন্ত মিডিয়া থেকে শুরু করে তাঁদের সকল প্রতিষ্ঠানে রিক্রুট করা হয় ছোটবেলা থেকে গ্রুমিং করে আসা এই ছেলে পেলেদের। এরা যখন এই সকল বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়ে যায়, তখন নিজেদের ব্যাবসার সাথে সাথে চলতে থাকে নতুন আরেক ব্রেইন ওয়াশড প্রজন্ম গড়ে তোলার নীল নকশা...
বাংলাদেশে আর কোন রাজনৈতিক দল এতটা শক্তিশালী এবং প্ল্যান ওয়াইজ আগায় না তৃণমূল পর্যায়ে। কাজেই অভিভাবকগণ, আপনাদের কাছে অনুরোধ, একটু নজর দিন নিজের বাচ্চার দিকে। তাঁদের নৈতিক ও সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করুন। সঠিক ইতিহাস তুলে দিন তাঁদের হাতে।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
জামাতীদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৭ থেকে ৯ ভাগ। তারা প্রতি বছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করে শুধু রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে। এর মধ্যে, জঙ্গি কর্মকান্ড ছাড়াও সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা ব্যয়, রাজনৈতিক কর্মীদের বেতন, জনসভা আয়োজন ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ।তাদের ১ হাজার ৫শ কোটি টাকা মুনাফার ২৭ শতাংশ আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যার মধ্যে রয়েছে, ব্যাংক, বীমা ও লিজিং কোম্পানি। ২০ দশমিক ৮ শতাংশ আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে, ১০ দশমিক ৮ ভাগ আসে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে। ১০ দশমিক ৪ ভাগ আসে ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে। ৯.২ শতাংশ আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। ৮.৩ শতাংশ আসে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে। যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭.৫ শতাংশ এবং তথ্য প্রযুক্তি ও সংবাদ মাধ্যম থেকে আসে ৫.৮ শতাংশ। (অধ্যাপক আবুল বারকাত, মৌলবাদীদের রাজনৈতিক অর্থনীতি, ২০০৫)
জামায়তের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ
১. সংস্কৃতি সংগঠনঃসিএনসি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, স্বদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ, উত্সঙ্গ, সৃজন চিন্তন, মৃত্তিকা একাডেমী, প্রতিভা ফাউন্ডেশন, শহীদ মালেক ফাউন্ডেশন, কিশোর কণ্ঠ ফাউন্ডেশন, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, বিপরিত উচ্চারণ, পল্টন সাহিত্য পরিষদ, ফররুখ পরিষদ, চত্বর সাহিত্য পরিষদ, কিশোর কলম সাহিত্য পরিষদ, ফুলকুঁড়ি সাহিত্য পরিষদ, নতুন কলম সাহিত্য পরিষদ, আল হেরা সাহিত্য পরিষদ, মাস্তুল সাহিত্য সংসদ, সম্মিলিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ, স্পন্দন সাহিত্য পরিষদ, রেলগাছ সাহিত্য পরিষদ, কবি সংসদ বাংলাদেশ, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য সংসদ, কানামাছি সাহিত্য পরিষদ, অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ, শীলন সাহিত্য একাডেমী, পারফর্মিং আর্ট সেন্টার, সংগ্রাম সাহিত্য পরিষদ, উচ্ছ্বাস সাহিত্য সংসদ, ইসলামী সাহিত্য পরিষদ, হিলফুল ফুজুল, দাবানল একাডেমী, মওদুদী রিসার্চ সংসদ, বাংলাদেশ সাহিত্য কেন্দ্র নামে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী [বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কপি]
২. প্রিন্টিং আই মিন প্রকাশনী বাণিজ্যঃসিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, আধুনিক প্রকাশনী, প্রীতি প্রকাশন, কিশোর কণ্ঠ প্রকাশনী, ফুলকুঁড়ি প্রকাশনী, মিজান পাবলিকেশন্স, ইষ্টিকুটুম, আল্পনা প্রকাশনী, গণিত ফাউন্ডেশন, প্রফেসর’স, কারেন্ট নিউজ, সাজ প্রকাশন, সৌরভ, সাহিত্যকাল, নবাঙ্কুর, সাহিত্যশিল্প, শিল্প কোণ, আযান, অনুশীলন, ফুলকলি, দিগন্ত, পাঞ্জেরী, আল কোরআন প্রকাশনী,প্রফেসরস গাইড, Youth wave, পৃথিবী।
৩. কোচিং বাণিজ্যঃ রেটিনা,প্রবাহ, ফোকাস, কনক্রিট, ইনডেক্স, রেডিয়াম, অপটিমাম, শুভেচ্ছা, সাকসেস কোচিং সেন্টার।
৪. ব্যাংক প্রতিষ্ঠানঃ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টম্যান্ট লিমিটেড,
৫. ইন্স্যুরেন্সঃ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোঃ লিঃ, ইসলামী ইন্সুরেন্স কোঃ লিঃ, তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স
৬. ডেভেলাপারঃ কোরাল রীফ ,মিশন ডেভেলাপারস, এস.এ.এফ,এম.ডি.সি গ্রুপ, কেয়ারী,ইনটিমেট হাউজিং, সোনারগাঁ হাউজিং, লালমাটিয়া হাউজিং, সিলভার ভিলেজ হাউজিং, ওয়ান সিটি, পিংক সিটি, আবাসন সিটি।
৭. বাস সার্ভিসঃ পাঞ্জেরী, আবাবিল
৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি(আইআইইউসি), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউ আই ইউ,ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ টেকনিক্যাল কলেজ, মানারত (স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়), গ্রীন ইউনিভার্সিটি, লাইসিয়াম কিন্ডারগার্টেন, ইসলামী ব্যাংকের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। মাদ্রাসার সংখ্যা অসংখ্য (আলিয়া আর কওমি মিলিয়ে)
৯. সংবাদপত্রঃ দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা।
১০. টিভি চ্যানেলঃ দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি।
১১. হাসপাতালঃ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ,ইউনাইটেড হাসপাতাল, ইবনে সিনা, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাষ্ট।
১২. ফার্মাসিউটিক্যালঃ ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, বায়োফার্মা ল্যাবোরেটরীজ লিমিটেড, কেয়ারী সিন্দাবাদ।
আসুন বয়কট করি এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। হয় জামায়াত শিবীর পাকিস্তান, না হয় আমরা...৪২ বছর ধরে যেই কালসাপ দুধ কলা দিয়ে পোষা হয়েছে, তার ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা আম জনতা, হয়তো রক্ষা পাবেনা আপনার সন্তানও, প্লিজ, সচেতন হউন আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৩