(সামুর সমস্ত ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, আমাদের পর্যবেক্ষন, মতামত এবং পরামর্শ নিয়ে আলোচনা এখন সবচাইতে বেশি জরুরী ।এই আলোচনায় কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণ আমরা একান্তভাবে কামনা করি। )
বাংলা ভাষায় কমিউনিটি ব্লগের পথিকৃত এবং সর্ববৃহৎ বাংলা কমিউনিটি ব্লগ হিসাবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের ইতিহাসে বেশ জোরালো ভাবেই নানান ঘাত-প্রতিঘাত দেখা গেছে। মুক্ত মত এবং বাকস্বাধীনতার অধিকার এবং চর্চার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা সামাজিক মাধ্যমের ধরণা যেমন সামুর হাত ধরে বিকাশ ঘটে তেমনি এর কিছু সীমাবদ্ধতার সংকটও ব্লগার এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নানাভাবে মতদ্বৈততা ও আশা-নিরাশার বিষয়টিও প্রবলভাবে লক্ষ্য করা গেছে। নীতিমালা, মডারেশন এবং রেজিস্ট্রশনের পর প্রথম পাতায় সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে তুমুল বিতর্ক হয়ে আসছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতামূলক পোস্ট ও মন্তব্যও আমরা নানান সময়ে দেখেছি। আলোচনা-সমালোচনা এই সবকিছু নিয়েই এই প্ল্যাটটি এগিয়ে চলেছে। অস্বীকার করার উপায় নাই যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে সামু এখন বাকস্বাধীনতা এবং নানামতের বিতর্কের সুযোগদানকারী একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
বিগত কিছুদিন দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গুটি কতক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ব্লগ সাইট উঠে পড়ে লেগেছে সামুর বিরুদ্ধে। অপপ্রচারে নোংরামীর সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সামুতে নাকি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। আবার একটি গোষ্ঠি অপপ্রচার চালাচ্ছে যে সামু বা ব্লগার মানেই নাস্তিক। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনের সময় এটি প্রকট হয়ে ওঠে। এইরকম ঢালাও ট্যগিং সামুর কর্তৃপক্ষের তো বটেই নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ব্লগারের জন্য অপমানজনক এবং বিব্রতকর। এর প্রতিবাদে এবং প্রতিরোধে ব্লগারদেরই সম্মিলিতভাবে এবং সচেতনতার সাথে তৈরী থাকতে হবে, সংগঠিত থাকতে হবে। যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্বে যুক্তিযুক্ত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে ব্লগাররা অসংখ্য প্রমাণ রেখেছেন। একজন ব্লগার হিসেবে এ ব্যাপারে কিছু কথা বলার আছে।
শাহবাগ আন্দোলনের এক মাসেরও বেশী হয়ে গেলো। এই আন্দোলনের সাথে থাকা প্রতিটি সাধারন মানুষ, ব্লগার ও এক্টিভিস্টদের জানাই কৃতজ্ঞতা। আমাদের শাহবাগ আন্দোলনটি সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাধারন মানুষেরা। আর ব্লগার্স কমিউনিটি অক্লান্ত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে আহবায়ক এবং আয়োজকের ভুমিকায়। দল মত নির্বিশেষে সব গ্রুপের ব্লগাররা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। আহা, আন্দোলন ছাড়াও যদি এমনি শান্তিপুর্ন অবস্থা বজায় থাকতো। উইশফুল থিঙ্কিং। যাই হোক ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিজমের এই পরিনতি কিন্ত একদিনে তৈরি হয়নি। এর পিছনে রয়েছে অনলাইন কমিউনিটির দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিকতার চর্চা। ব্যাপারটা বুঝার জন্য আমাদের একটু ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হবে।
সাইবার জগত পারস্পরিক মত বিনিময়ের যে সুযোগ তৈরি হয়েছিলো, তারই সফল প্রয়োগ ঘটেছে ব্লগে। বাক স্বাধীনতার থিম কে সামনে নিয়ে লেখার স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং যৌক্তিক আলোচনার প্রাক্টিসের পিছনে ব্লগের একটা বিরাট ভুমিকা আছে। বাংলা ব্লগস্ফিয়ারের প্রথম আমলে দু একটি পার্সোনাল ব্লগ থাকলেও কমিউনিটি বাংলা ব্লগ হিসাবে সর্বপ্রথম আবির্ভাব হয় সামহ্যোয়ার ইন ব্লগের (১৫ই ডিসেম্বর, ২০০৫), এলেক্সা র্যাঙ্কিং এ থাকা শীর্ষ এই বাংলা ব্লগ। মূল উদ্দেশ্য পাওয়া যাবে সামহ্যোয়ার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানার বক্তব্য থেকে। বাংলা নিউজে "জাতীয় স্বার্থে সোচ্চার হতে শিখায় ব্লগ " নামে একটি লেখায় তিনি লিখেছেন, "প্রকৃতপক্ষে ব্লগিং ধারনাটি তখনো ছোট্ট একটি গন্ডির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো। জনমত তৈরীর মূলধারার মাধ্যম গুলোতে যখন দ্বিপাক্ষিক অংশগ্রহন সম্ভব নয়, তখন দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রাত্যহিক জীবনের আলাপচারিতায় সর্বসাধারনের অংশগ্রহনের গুরুত্বপুর্ন দিকটি মাথায় রেখে এই বাংলা কমিউনিটি ব্লগিং এর শুরুটা করে দেয় স্যামহোয়্যার ইন।"
সচলায়তন এবং প্যাচালি ব্লগ অল্প কদিনের ব্যাবধানে যাত্রা শুরু করে ২০০৭ এ। ২০০৮ এর ১৪ই এপ্রিল যাত্রা শুরু করে আমার ব্লগ। প্রথম আলো ব্লগ যাত্রা শুরু করে ২০০৮ এর ২৩ এ এক্টোবর। এছাড়াও নাগরিক ব্লগ, টেকটিউনস, মুক্তমনা , আমরা বন্ধু, শব্দনীড়, চতুর্মাত্রিক, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, একুশে ব্লগ ইত্যাদি প্লাটফর্ম কালক্রমে যুক্ত হয়। খেয়াল করলে দেখা যায়, সামুর আগেকার বেশিরভাগ জনপ্রিয় ব্লগাররাই এই সকল ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা এবং অথরিটি প্যানেল। এই ব্লগ গুলোর প্রত্যেকটিরই আলাদা এজেন্ডা রয়েছে। এই এজেন্ডাগুলো নির্ধারিত হয় পলিটিকাল, সোশ্যাল, কর্পোরেট এবং কমিউনিটি বেজড মোটিভ কে সামনে রেখে। এজেন্ডার দিক থেকে বলতে গেলে সামুর এজেন্ডা হচ্ছে গণমানুষের বাক স্বাধীনতার একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। যা ইতিমধ্যে সফল।
এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাক স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সামুর ভিশন টা তুলে ধরা। বাকস্বাধীনতার চর্চাকে কোনভাবেই অশুভ শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া ভেবে ভুল করার কোন স্কোপ নেই এখানে।
এবার এক্টিভিজমের দিকে আসি। সামুর প্রথম দিকে ভার্চুয়াল জগত হতে রিয়েল লাইফে চলে আসে ব্লগীয় সম্পর্ক যা বিশ্বের অন্য কোন ব্লগস্ফিয়ারে কখনও দেখা যায়নি। শুরু হয় ব্লগ আড্ডা, ব্লগ ক্যাম্পেইন। ২০০৬ সালের মে মাসে ছোট্ট শিশু প্রাপ্তির সাহায্যার্থে একত্রিত হন ব্লগারেরা, এরপর ২০০৭ এ পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য, রাজশাহী ইউনির শিক্ষার্থী শ্বাশতকে বাঁচাতে ২০০৮ এর ক্যাম্পেইন। ব্লগার আরিফ জেবতিকের ভেলরি টেলর সম্পর্কিত ক্যাম্পেইনের কথাও মনে পড়ে। মনে পড়ে ২০০৮ এ যুদ্ধপরাধীদের বিচার চেয়ে গণসাক্ষর কর্মসূচী। যার সফল পরিনতি আজকের এই আন্দোলনে ব্লগারদের ভূমিকা। উল্লেখ্য সামহোয়ার ইন ব্লগ ছিলো এই সব সফল কর্মসুচীর প্রধান প্ল্যাটফর্ম। এমন কি অমি রহমান পিয়াল, আরিফ জেবতিক, আব্দুর নূর তুষার, হিমু, মাহবুব মোর্শেদ, আসিফ এন্তাজ রবী, সিমু নাসের, ড.আইজুইদ্দীন সহ আরো অনেক পরিচিত ব্যাক্তিরা ছিলেন সামুর জনপ্রিয় ব্লগার। পরবর্তিতে বিভিন্ন কারনে তারা হয়তো অন্যান্য ব্লগে শিফট করে। বাংলা ব্লগ এক্টিভিজম নিয়ে ব্লগার কৌশিক আহমেদ তার লেখায় (২৫শে মার্চ, ২০০৯)
ব্লগারদের লেখা এবং এক্টিভিজম কে তিনটি সময়ে ভাগ করেছেন। সচলায়তন সৃষ্টির আগের সময়টাকে তিনি সবচাইতে ক্ষনস্থায়ী এবং প্রডাক্টিভ বলেছেন। এ সময়েই ব্লগার রা ভার্চুয়াল জগৎ হতে তাদের গন্ডিকে ছড়িয়ে দেন বাস্তবে। অন্যদিকে সচলায়তন সৃষ্টির পর দেখা গেলো নতুন এক এরা। কঠোর মডারেশনের কারনে সচলের কোয়ালিটি স্ট্যাবল থাকলেও পাঠক ও লেখক সংখ্যা সীমাবদ্ধ থেকে গেছে একটি নির্দিষ্ট
গন্ডির ভিতরে। একইভাবে আমার ব্লগ এবং প্রথম আলো ব্লগকেও তাদের পলিটিক্যাল এবং কর্পোরেট এজেন্ডা সার্ভ করতে দেখা যায়। আবার চতুর্মাত্রিক বেশী ফোকাস করে সাহিত্য চর্চার উপর। কিন্ত সামু থেকে যায় সেই গণমানুষের ব্লগে। যেখানে সকল বিষয়ে সবাই নানা রকম কথা বলে। সাহত্য চর্চা হোক আর সিটিজেন জার্নালিজম হোক, নিরীক্ষাধর্মী হোক, আর রিভিউমূলক হোক, সব ধরনের পোস্টকেই স্বাগত জানায় সামু। মূলত সামুর এজেন্ডাও কিন্ত তাই ছিলো। কাজেই অন্যান্য ব্লগ গুলোর সাথে সামুর বিভাজন বড়ই স্পষ্ট। আপনি যদি রিসার্চ করতে চান,
দেশের পলিটিক্যাল ফ্লো এবং জনমত দেখতে চান, পলিসি মেকিং সার্ভে করতে করতে চান, এবং সর্বোপরি নির্দিষ্ট কমিউনিটির বাইরে এসে মাস পয়েন্ট অফ ভিউ দেখতে চান, তাহলে আপনাকে সামুতেই আস্তে হবে। আবার তেল গ্যাস রক্ষকরন ইস্যু, আড়িয়াল বিল ইস্যু, কনকো-ফিলিপ্স চুক্তির বিপরীতে, পরিমল ইস্যু, জগন্নাথ ইস্যু এবং বর্তমানের এই মুভমেন্ট সহ আরো অনেক ইস্যুতেই সামুর ব্লগারদের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ছিলো। ভার্চুয়াল থেকে ব্লগের র্যাশনাল আলোচনার প্রাক্টিস্টাকে তারা নিয়ে এসেছেন রাস্তায়। এ কারনেই বলেছি, এটা দীর্ঘদিনের গনতান্ত্রিক চর্চার ফসল। যেই গণতান্রিকতার চর্চা আমরা দেখতে পাই সামুর বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে ঠেকিয়ে রাখার ব্যাপারে সামুর অথরিটি এবং ব্লগার রা ছিলেন বরাবরি সোচ্চার। ব্লগাররাই এদের উপস্থিতিকে সমালোচনা, ধিক্কার বা তিরষ্কারের মূখে কোনঠাসা করে এসেছে সবসময়।
এমন কি শাহবাগের চলতি আন্দোলনে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের যে দুটি গ্রুপ কাজ করছে, তাদের মাঝে ব্লগারদের পোর্শনটাও প্রমিনেন্ট। "ব্লগারস এন্ড অনলাইন এক্টিভিজম নেটোয়ার্ক (বোয়ান) এ আছেন আমাদের বাধন দা, সবাক ভাই সহ আরো অনেকে। আবার "জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট" এর পারভেজ আলম, বাকি বিল্লাহ, মাহবুব রশীদ, আরিফ রুবেল সহ সকলেই কাজ করে যাচ্ছেন নিজেদের মত করে। মূলত ব্লগারদের সরাসরি কন্ট্রিবিউশন টা কোন কম্পিটিশনের ব্যাপার নয়। এব্যাপারটা সবাই বুঝতে পেরেছে বলেই এখানে কোন রকম ফ্রাগমেন্টেশন আসেনি। কাজেই ব্লগারদের প্রতিটা গ্রুপকেই সাধুবাদ জানানো উচিত।
ব্লগার হিসেবে আমাদের আইডেন্টিটি এখন ইস্টাবলিশড। আমরা ব্লগাররা স্বাধীনতার চেতনা ধারন করি। আমরা শুধুমাত্র মনোপলি বিজনেসের জন্য গণমাধ্যম কে কোন নীতিতে বেঁধে দেয়ার পক্ষপাতি নই। বাংলা নিউজ বা বিডি নিউজের মত ডার্টি কর্টপোরেট পলিটিক্স ও আমরা চাইনা বরং ঘৃনা করি। ট্যাগিং কালচার দিয়ে কাউকে বেধে ফেলা, স্পেশালি সেই প্লাটফর্ম কে যেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে কমিউনিটি ব্লগের কন্সেপ্ট, যেখান থেকে তৈরী হয়েছেন অসংখ্য লেখক, যেখান থেকে পরিচয় পেয়েছে ফেসবুকের সব সেলিব্রেটিদের। তারা নিজেরাই যখন যুক্তি তর্কের উর্ধে গিয়ে নিজের প্রগতিশীলতাকে বিক্রি করে দেয় দলীয় ও বুরোক্রেসির কাছে, ট্যাগিং কালচারের কাছে, তখন সেটা আমাদের নবীনদের জন্য বড়ই দুখজনক। সম্প্রতি অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রনয়নের ব্যাপারে বিডিনিউজের তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ভুমিকা নিশ্চই আপ্নারা ভুলে জান নি। সে সময় কিন্ত দল, প্লাটফর্ম নির্বিশেষে সকল ব্লগার রাই সোচ্চার হয়েছিলো।
প্রগতিশীলতা আমরা তখনি আশা করবো, যখন মুক্তবুদ্ধির চর্চার প্রসার ঘটবে। সংবাদ পত্র কিংবা অন্যান্য মেইন্সট্রিম মিডিয়াতে একজন কে নানা ধরনের প্রটোকল ফলো করতে হয়। ফ্রি থিঙ্কিং এর যায়গাটা এখানে রুদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে নাগরিক সাংবাদিকতার প্লাটফর্ম হিসেবে ব্লগে আমরা দেখি, একজন সাধারন মানুষ তার দৃষ্টিভঙ্গী শেয়ার করতে পারে নির্ভয়ে। বাকিটা ডিপেন্ড করে ফিডব্যাকের উপরে। উদাহরন দেই, মনে করুন একজন ব্লগার পোস্ট দিলো, কাদের মোল্লা নিষ্পাপ। এ রকম পোস্ট একটা কমিউনিটি ব্লগে আসতেই পারে। যেহেতু বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া আছে। তবে এই পোস্ট কে অফেন্ড করার দায়িত্ব কিন্ত মূলত ব্লগারের। একজন অপরাধীর আদ্যপান্ত তারা তুলে ধরে, নানান গুরুত্বপূর্ণ ও মূলবান তথ্য দিয়ে, বিতর্ক করে, সত্য প্রমাণিত করে ব্লগাররাই। এভাবে মিথ্যাচারী বা অপরাধ সমর্থনকারী পোস্টদাতাকে বয়কট করা হয়। এটা ব্লগারদের দায়িত্ব। অন্যদিকে নীতিমালা ভঙ্গকারী যে কোন পোস্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার সুযোগ রয়েছে। যাতে সাথে সাথে দায়িত্ব নিবে মডারেটর গন। ব্লগার এবং মডারেটর, এই দুইয়ের মিলিত প্রচেষ্টাই একটি ব্লগ কে আবর্জনামুক্ত রাখতে পারে।
যেমন টি প্রথম দিকে করেছিলো এ টিম। কিন্তু যখনি এ টিম নিজেদের কালেক্টিভ মোটিভের উপরে স্থান দিয়েছে ইন্ডিভিজুয়াল কে, তখনি পতন ঘটেছে তাদের। সাধারন ব্লগারদের ব্লাফ করে খুব বেশিদুর যেতে পারেন নি কেউই। এদিকে সামহ্যায়ারের ব্লগ কতৃপক্ষ পড়েছে মহা বিপাকে। অনলাইন রথি মহারথিদের দের দাবী রাখতে গিয়ে তারা না পারছে ট্যাগিং কালচারে গা ভাসিয়ে দিতে, না পারছে বাক স্বাধীনতার যায়গা থেকে সরে আসতে। তবে নব্য রাজাকারদের ছাড় দিচ্ছেন না তারা। মডারেশনের কোন দুর্বলতার কারনে যদি কিছু এন্টি লিবারেট রা পার পেয়েও যায়, অন্যান্য সবকিছুর বিবেচনায় সামু তার দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং তাদের ভিশনের যায়গা থেকে পরিষ্কার। একে আরো ট্রান্সপারেন্ট রাখার সুযোগ টুকু কিন্ত ব্লগাররাই করে দিতে পারে। ব্লগ পলিটিক্সের ভেতর পড়ে, সামুর মিশন ভিশন যেন হারিয়ে না যায়। সেইটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাক স্বাধীনতা দেয়াই যদি কাল হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে আমাদের লেখকদের কলম বন্ধ হতে টাইম লাগবেনা। সামুর মডারেশন প্যানেল যদি দুর্বল হয়, তাকে সাজেস্ট করুন। রিপোর্ট করুন, ফিডব্যাক পাঠান। আমার বিশ্বাস, অবশ্যই কাজ হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির ভয়ে যদি ব্লগ ত্যাগ করেন, এবং দূর থেকে তালি বাজিয়ে বলেন, সামু রাজাকারের খোয়াড়, তাহলে তা পরাজয়ের ই লক্ষন। আপনাকে ফাইট করতে হবে। আমরা ব্লগার রা প্রথম থেকেই ফাইট দিতে শিখেছি। সে ফাইটের বহিপ্রকাশ হয় আমাদের কলমে, কি বোর্ডে, শাহবাগে স্লোগানে স্লোগানে। শুধুমাত্র পিসির সামনে বসে থেকে ট্যাগ দেয়ার সংস্কৃতি তৈরি করলে ছাগু দুরিকরন তো হবেই না, উলটা "ছাগু, কাঁঠাল পাতা, ভাদা, পাদা" ইত্যাদি আপাতশব্দের মাঝেই ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষমতা ব্যাবহার করে কোন ব্লগার বা ব্লগ প্ল্যাটফর্ম কে ছাগু ট্যাগ দেয়া থেকে বিরত থাকুন। ছাগু ধরতে হলে হলে, ডকুমেন্টস শো করুন, প্রমান করুন,
তারপর লাথি মেরে বের করে দিন। যেমন টা আমরা এতদিন ব্লগে করে আসছি, শাহবাগে করেছি এবং করে যাবো।
রাজাকারের বিরুদ্ধে বললে ভারতের পা-চাটা কুকুর, ভারতের বিরুদ্ধে বললে রাজাকার, ইসলামের একটা ত্রুটি বের করার সামান্য প্রচেষ্টা করলেও নাস্তিক, ইসলামের একটি ভালো দিক তুলে ধরা পোস্ট করলেও মৌলবাদী, বিএনপির বিরুদ্ধে বললে আওয়ামীপন্থি, আওয়ামী লিগ নিয়া কথা বললে বিএনপি'র পোষা কুকুর, জামাতের পক্ষে বললে রাজাকার, বিপক্ষে বললে নিজেই রাজাকারদের টার্গেট। এইভাবে ট্যাগিং সংস্কৃতিতে ভেসে গেলে বাংলা ব্লগস্ফিয়ারের জন্য তা খারাপ বই ভালো কিছু নিয়ে আসবে না, এটা খুবি স্পষ্ট। খেয়াল করলেই দেখবেন, সামুকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ এজেন্ডার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ট্যাগ করে থাকেন। এক্ষেত্রে সামু যে নিজ নিতীমালার উপর ব্যালেন্স রক্ষা করে চলে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আমাদের ব্লগারদের হাতে অসীম ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতার অপব্যাবহার আমরা করবো না। আমরা ছাগুদের কখনো প্রশ্রয় দেই নি। দিবোও না। নিজেদের পপুলারিটিকে ব্যাবহার করে
ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা ট্যাগদাতার গ্রহনযোগ্যতা কমিয়ে দেয়। সেই সাথে "ছাগু" শব্দটির ওজন ও কমিয়ে দেয়। আর একটা প্রশ্নের জন্ম দেয়-
আজ তাকে ট্যাগ দিয়েছি নিজের সুবিধার কারনে, কাল আপ্নাকেও দিবো। কি করবেন আপনি ? এই প্রশ্নটা সকল ব্লগারস কমিউনিটির উপর ।
এর জবাব ও আমাদের ই দিতে হবে।
(লেখাটি তৈরি করতে নানা বই এবং অন্তর্জালের সহায়তা নিতে হয়েছে। বিশেষ করে একরামুল হক শামিম ভাইয়ের" বাংলা ব্লগের ইতিবৃত্ত" বইটির কথা না বললেই নয়। ওনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা)।