প্রথম পর্ব-গ্রীক পুরানের উপাখ্যান- প্রথম থেকে ব্যবচ্ছেদ। (পর্ব-১)
পৃথিবী যেভাবে সৃষ্টি হল
"আদিতে ছিলো বিশৃঙ্খলা(chaos),বিশাল অপরিমেয় খাদ,সমুদ্রের মত নিষ্ঠুর,অন্ধকার অপচয়ী বন্যা।"-মিল্টন।
কথাগুলো মিল্টনের হলেও গ্রীকরা সৃষ্টির আদিতম পর্ব সম্পর্কে কি ভাবত তার একটা যথাযথ প্রকাশ পাওয়া যাবে। দেবতারা আবির্ভুত হয়েছিল অগণিত কোটি বছর আগে, অতীতের আবছায়ার মধ্যে। কিন্ত তারো আগে ছিলো নিরাকার বিশৃঙ্খলা। অবশেষে কেউ জানেনা কিভাবে জন্ম হলো দুটি শিশুর। এক সন্তানের নাম রাত্রি,অপরজন হলো এরেবুস বা গভিরতা। সমস্ত বিশ্বে তখন আর কিছু ছিলনা; সব কিছু ছিলো ঘোরকালো, শূন্য, নিশব্দ এবং অন্তহীন।
তারপর অন্ধকার মৃত্যু থেকে জন্ম হলো প্রেমের,এবং তার জন্মের সাথে সাথে বিশৃঙ্খলা কেটে গিয়ে উদ্ভাসিত হতে থাকে সৌন্দর্য। প্রেম এরপর সৃজন করলো আলো,রৌদ্রময় দিন।
এ কাহিনীগুলো যারা বানাতো তারা ছিলেন ব্যক্তি-মানুষ, সুতরাং তাদের চারপাশে যার মধ্যে কিছুটা প্রানশক্তি দেখেছে সেটাতেই ব্যক্তিত্বারোপ ( personification)করেছে। যা কিছু পরিবর্তনশীল ও সঞ্চারনশীল তাই তাদের কাছে ব্যক্তিস্বরুপ। শীত গ্রীষ্মের পৃথিবী,পরিবর্তনশীল নক্ষত্র ইত্যাদি। কিন্ত সৃষ্টিকাহিনীতে যখন প্রেম আর আলোর আগমন ঘটলো তখন বস্তত মানুষের আগমনের জন্য মঞ্চ প্রস্তত। কাহিনীকারেরা ব্যক্তিত্বারোপের উপর তখন আরো সুক্ষতার পরিচয় দিলো। প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে দেয়া হল আরো স্পষ্টতর চেহারা। তারা ভাবলো এই শক্তিগুলোই মানুষের পুর্বসুরি।
প্রথম সৃষ্টি
যাদের মাঝে প্রথম প্রানের প্রকাশ ঘটেছিল তারা হলো-মাতা ধরিত্রী(gaea) ও পিতা স্বর্গ(ouranos) এর সন্তান। এরা ছিলো দৈত্য। পাঠকগণ সাইক্লপ্স(cyclops) নামটা নিশ্চই শুনেছেন। এদের ছিলো ৫০টি মাথা আর ১০০ হাত। কপালের মধ্যস্থলে ছিলো বিশাল চোখ। তাদের ধংস খমতাও ছিলো অনেক।
ছুবি-সাইক্লপস।
তার পর এলো টাইটানরা (আগের পর্বে কিছুটা বলেছি এদের কথা)। শক্তির দিক থেকে তারাও কারো চেয়ে কম ছিলনা। তবে তারা সাইক্লপসদের মত অতটা ধংসাত্মক ছিলোনা। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলো উপকারী। বস্তত,তাদের একজন মানুষ সৃষ্টির পর তাদের ধংসের হাত থেকেও বাচিয়েছে। সে গল্প যথাসময়ে করা হবে।
যুদ্ধ আর যুদ্ধ
ইতিমধ্যে মাতা পৃথিবীর সাথে পিতা স্বর্গের মন মালিন্য হয়ায় এবং স্বর্গের খারাপ ব্যবহারের প্রতিবাদে মাতা পৃথিবী সাহায্য চাইলো তার সন্তান সাইক্লপ্স ও টাইটানদের কাছে। কেবল মাত্র একজন টাইটান সাহস করে এগিয়ে এলেন।তার নাম ক্রোনাস(cronus)। ক্রোনাস পিতা স্বর্গের পথে ওত পেতে থাকেন এবং তাকে আঘাত করলেন। তার রক্ত থেকে সৃষ্টি হলো আরেকটি জাতি। যার নাম এরিনাই(erinyes)। এদের কাজ হলো পাপীদের শাস্তি দেয়া। অন্যদিকে এই ঘটনার পর ক্রোনাস পৃথিবী রাজত্ব করেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। এই ক্রোনাস কেই রোমানরা বলে সাট্যার্ন।সাথে তার রানী এবং ভগ্নী রীয়া(rhea)। লাতিন ভাষায় যার নাম অপস(ops)। অবশেষে তাদের উতখাত করে স্বর্গ-মর্তের অধিশ্বর হন দেবরাজ জিউস।
ছবি-ক্রোনাস ও রীয়া।
এরপরি স্বর্গে ঘটলো এক ভয়াবহ যুদ্ধ। একদিকে ক্রোনাস এবং তার টাইটান ভাত্ত্রিবৃন্দ, আরেকদিকে জিউস ও তার পাচ ভাইবোন। যুদ্ধে যদিও টাইটানদের পরাজয় ঘটে, তবে পৃথিবীর অবস্থা হয়ে যায় প্রায় ধংসপ্রাপ্ত। পরে আস্তে আস্তে দেবতাদের সাহায্যে পৃথিবী আবার সুন্দর রুপ ফিরে পায়।
এখন পর্যন্ত আমরা মানুষের আবির্ভাব দেখলাম না। আসলে মানুষের জন্য পৃথিবী মঞ্চ তৈরি করা একটু কষ্টসাধ্য বৈকি। সব গল্প একদিনে শেষ করে ফেললে হবে ? বাকিটুকু নাহয় পরের পর্বের জন্য থাক।
সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৪