ইসলামী আন্দোলন" বললে অনেকেই জামাতে ইসলামীর কাজকে মনে করে থাকেন। ইসলামী আন্দোলন অর্থ হলো ইসলামের মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কথা বলা। ইসলাম পালন যেমন ফরজে আইন তেমনি তা প্রতিষ্ঠা করাও ফরজে আইন। ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা ফরজ এই জন্য যে, যদি কোন জায়গায় ইসলাম পালন করার সুযোগ না থাকে তাহলে সেখানে ইসলামের কাজগুলো যেমন, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি পালান করা যাবে না।তাই সবার আগে ইসলাম পালন করার জায়গা তৈরী করতে হবে। এখানে ছোট্ট একটা উদাহরন দেওয়া যেতে পারে- সম্প্রতি ভারতের মধ্য প্রদেশে গরু জবেহ নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে গরু জবেহ করলে ৭ বছরের জেল হবে। গরু জবেহ বা গরুর গোশত বিক্রি করলে, এমনকি কারও কাছে গোশত পাওয়া গেলেও তাঁকে ওই দণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে। তাহলে দেখুন আগে জমিন ঠিক করতে হবে। এ আন্দোলন যেমন মানুষকে তার প্রকৃত লাভ-ক্ষতির সঠিক তাৎপর্য বাতলে দেয়, তেমনি তার মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনের নিগূঢ় তত্ত্বও সবার সামনে উন্মোচন করে দেয়।ফলে প্রতিটি জটিল ও দুঃসমাধেয় সমস্যা থেকেই মানুষ চিরতরে মুক্তি লাভ করতে পারে। ইসলামী আন্দোলনের সফলতা শুধু জাগতিক জয়-পরাজয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সফলতা বা ব্যর্থতা মূলত আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি থেকে নাজাত পাওয়ার ওপরই নির্ভরশীল। এক কথায় আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার মাঝেই ইসলামী আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে। দুনিয়াতে কেউ সফল হলেও আল্লাহ পাক যদি তার ওপর খুশি না হন তাহলে তার উক্ত সফলতা আখিরাতে মূল্যহীন হবে। আর দুনিয়াতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিফল মনে হলেও খুলুসিয়াতের সাথে কাজ করে আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করতে পারলে তিনি প্রকৃত অর্থেই সফলকাম। অতএব, ইসলামী আন্দোলন এবং অন্যান্য আন্দোলনের সফলতা বা ব্যর্থতা একই আঙ্গিকে বিচার করা ঠিক নয়। ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশ্য দ্বীনের বিজয়- মানবতার মুক্তি।এক কথায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলা।
যুগে যুগে সময় ও স্থানের চাহিদা মোতাবেক মানব জাতির স্রষ্টা আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের জন্য ইসলামী জীবন ব্যবস্থার যেথায় যতটুকু প্রয়োজন সেথায় ঠিক ততটুকুই পাঠিয়েছেন। তবে মূলনীতি ছিল একই, যেমনটি আল্লাহ্ বলেনঃ
“আল্লাহর ‘ইবাদাত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা আন্-নাহ্লঃ ৩৬]
এখানে তাগুতকে বর্জন করার অর্থ হল শয়তানের রীতিনীতি বর্জন করতে হবে, শয়তানের রচিত আইন-কানুন, কৃষ্টি-সংস্কৃতি; সব বর্জন করতে হবে। আল্লাহ বলেন-
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর এরাই সফলকাম।” [সূরা আলে-ইমরানঃ ১০৪]
আপনি একাবার চিন্তা করেন তো আপনি যে প্লাটফর্মে বর্তমানে অবস্থান করছেন সেখান আল্লাহর এ নির্দেশগুলো পালন করতে পারেন? আল্লাহ বলেন-
“তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহ্কে, আর যা আমি ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এ বলে যে, আপনারা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করুন এবং তাতে মতভেদ করবেন না।” [সূরা আশ্-শূরাঃ ১৩]
আপনি যদি ইসলামপন্থী নয় এমন কোন দলের সদস্য হয়ে থাকেন আপনি কি পারেন আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে? আল্লাহ বলেন-
“আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।” [সূরা আয্-যারিয়াতঃ ৫৬]
আপনি শুধু আল্লাহর ইবাদত করেন, না তাগুতেরও ইবাদত করে থাকেন? আপনি যদি ইসলামপন্থী নয় এমন দলের সদস্য হয়ে থাকে তাহলেতো আপনি তাগুতেরই ইবাদত করলেন। আল্লাহ বলেন-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন। আর যে-ই আল্লাহ্র সাথে শরীক করে, সে এক মহাপাপ করে।” [সূরা আন্-নিসাঃ ৪৮]
আপনি যদি কলেমা শাহাদাতের অর্থ ভাল করে অনুধাবন করেন, তাহলেতো ক্ষমাহীন মহাপাপইতো করলেন।
আল্লাহ বলেন-
“মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরক বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ্্র কোন সম্পর্ক থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর।” [সূরা আলে-ইমরানঃ ২৮]
একবার চিন্তা করেন- কারা আমাদের বন্ধু? আজ আমরা মুসলিম দেশগুলো বাদ দিয়ে ভারতমাতাকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছি। আপনার নেতা বা নেতৃর বন্ধুকে আপনি যদি শত্রু মনে করেন তবেতো আপনি আপনার নেতৃত্বকে হারালেন। আল্লাহ বলেন-
“… যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।“ [সূরা মায়েদা: ৪৪]
“…যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।“ [সূরা মায়েদা: ৪৫]
“…আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।“[সূরা মায়েদা: ৪৭]
উপরের তিনটি আয়াত/আয়াতাংশ থেকে কি বুঝা যায়- আমাদের দেশের বিচার বিভাগ, যেমন- সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোট, জজকোর্ট- এরা কি আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার করে? করে না। যেমন আল্লাহর বিধান অনুসারে চুরির শাস্তি হাত কাটা। এখানে হাত কাটা হয় না। যেনা জঘন্যতম অপরাধ। এ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর শরীয়াহসম্মত তা প্রমাণিত হলে অবিবাহিত ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে এক শত বেত্রাঘাত করা ও তা‘যীর করা এবং বিবাহিত হলে হত্যা করা। এখানে কি এ বিচার হয়? এগুলো আপনিতো দেখেন প্রতিনিয়ত। আপনার নেতা বা নেতৃর সরকারের বিচার বিভাগই তো আল্লাহর বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না, অথচ আপনি তারপরেও আপনি আপনার দলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, আপনার নেতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কি আপনি আপনার দলের বা আপনার নেতার কাজের ভাগিদার হলেন না? তাহলে কি আপনি কাফের নন, আপনি জালেম নন, আপনি পাপাচারী নন?
ইহকালে আপনার উঠাবসা যার সাথে, পরকালেও আপনার উঠাবসা তার সাথে হবে।
এইজন্য বলছি ইসলামী আন্দোলন করা ফরজ। আমি বলছি না, এ জন্য আপনাকে জামায়াতে ইসলামী করতে হবে। আপনি যেকোন একটা ইসলামী দলকে বেছে নিতে পারেন। যদি আপনার কোন দলই পছন্দ না হয়, তবে আপনাকে নিজস্ব একটা ইসলামী দল গড়ে তুলতে হবে। আর এটাই ইমানের দাবী।