সরকারের ভুল নীতি ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বেড়েছে চোরাচালান। বেড়েছে অপরাধপ্রবণতাও। একসময় মাদক নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও আজকাল ভারত থেকে মাদক আসা যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। চোরচালান পরিসি'তির ভয়াবহ দিক হলো, সমপ্রতি অস্ত্র পাচার বেড়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার হয়ে দেশে ঢুকছে। বাংলাদেশে অস্ত্র পাচারকে কেন্দ্র করে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অবৈধ অস্ত্রের বাণিজ্য বেড়েছে। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে হিলি সীমান্তে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১০টি নাইন এমএম পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন ও ৫২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছেন। একজনকে আটকও করা হয়েছে। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশের ভেতর গা-ঢাকা দিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে। ভারত থেকে চোরাই পথে আসা এসব অস্ত্র সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় চোরাকারবারিরা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ শরীরে বহন করে সহজেই দেশে প্রবেশ করতে পারছে। সহজেই নজর এড়ানো ছাড়াও কঠোর নজরদারি না থাকায় দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে অস্ত্র পাচারকারী সিন্ডিকেট। উত্তর জনপদের কিছু এলাকা সীমান্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্র চালানীদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স'ান থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ওই সব সীমান্তে এসে মাসের পর মাস অবস'ান করছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। সীমান্ত এলাকার গডফাদার ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সহায়তা ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সহজে ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ওই সব সীমান্তে পুলিশসহ প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় অস্ত্র পাচারকারীরা সহজেই সুযোগ নিতে পারছে। একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র ভারত থেকে আনা অস্ত্র ও গোলাবারুদ পৌঁছে দিচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে।
সামপ্রতিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কী পরিমাণ অস্ত্র চোলাচালান হয়ে দেশে ঢুকছে। যে পরিমাণ অস্ত্র আসছে তার এক ভাগও ধরা পড়ছে না। ফলে নতুন দেশী-বিদেশী যেকোনো ধরনের অস্ত্র টাকার বিনিময়ে সহজে পাওয়া যাচ্ছে সীমান্ত এলাকাগুলোতে। জার্মানি, ইতালি, পাকিস্তান, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের সব ধরনের পিস্তল ও রিভলবার কেনাবেচা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। সীমান্তে বসবাসকারীদের মতে, যে পরিমাণ অস্ত্র দেশে আসছে, সেই তুলনায় বিজিবি ও র্যাবের হাতে আটক হওয়া অস্ত্রের পরিমাণ খুবই কম। ফলে চোরাচালানী ও সংশ্লিষ্ট অস্ত্র ব্যবসায়ীরা সব সময় থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দেশের ভেতর খুন-গুম বেড়েছে। অস্ত্রের ব্যবহারও বেড়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সব ধরনের সন্ত্রাসী, মাস্তান ও চাঁদাবাজদের শক্তির উৎস রাজনৈতিক প্রশ্রয় এবং ভারত থেকে আসা অস্ত্র ও গোলাবারুদ। হিলি সীমান্ত বারবার আলোচনায় এলেও একটা দেয়াল নির্মাণ না করার কৈফিয়তে অস্ত্র ব্যবসায় জমজমাট ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
আমরা শঙ্কিত, এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবহার আরো বাড়লে দেশে নৈরাজ্য বাড়বে। সাথে সাথে বাড়বে খুন, গুম ও সন্ত্রাসের নানামুখী অপতৎপরতা। দেশে লাইসেন্সকৃত অনেক অস্ত্রের হদিস নেই। তার সাথে যোগ হচ্ছে সীমান্ত হয়ে আসা বেশুমার অস্ত্রের চালান। সরকার কঠোর অবস'ান না নিলে নজরদারি বাড়বে না। তাই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আগেই অস্ত্র ও গোলাবারুদের অবৈধ পাচার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে