শীর্ষ আক্রান্ত ২০ দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশে আজ (৮ জুন-২০২০) সোমবার কোভিড-১৯ শনাক্তের তিন মাস পূর্ণ হলো। ৮ মার্চ বিদেশ ফেরত দুইজনসহ তিনজন শনাক্তের পর তিনমাসে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার পাঁচশ এর উপরে, মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। বিপরীতে সুস্থতার সংখ্যা ১৪ হাজার ৫শ । এটা অবশ্যই দেশে কভিড -১৯ এ আক্রান্তের ভয়ংকর চিত্র।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়,শীর্ষ আক্রান্তের ২০টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশে সংক্রমণের চতুর্থ মাস শেষ হয়েছে। ৯টি দেশের চতুর্থ মাস চলছে। বাংলাদেশে শুরু হলো চতুর্থ মাস। শীর্ষ আক্রান্তের দেশগুলোর বেশির ভাগই চতুর্থ মাসে সংক্রমণরেখা ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। দেশগুলোতে সংক্রমণ এখনো দ্রুত বাড়ছে। স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আক্রান্তে দ্বিতীয় শীর্ষে থাকা ব্রাজিলে চতুর্থ মাসের ১১ দিনে শনাক্ত হয়েছেন আড়াই লাখ রোগী। এছাড়াও চিলি, মেক্সিকো, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কানাডা, কাতার ও বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে সংক্রমণের পঞ্চম মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভারতে প্রথম মাসে শনাক্ত হয় ৩ জন, চতুর্থ মাসে শনাক্ত হয় ১ লাখ ৪৯ হাজার আর পঞ্চম মাসের প্রথম ছয় দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের ওপরে।
পাকিস্তানে তৃতীয় মাসে আক্রান্ত হয় ৪৪ হাজার ৫০৮ জন, আর চতুর্থ মাসের প্রথম ১০ দিনে আক্রান্ত হয় ৩০ হাজারের ওপরে।
আমি বলবো এটা শঙ্কাময় মুহূর্ত। যেই ভাবে সম্ভব যত কঠোর সিদ্ধান্তই নিতে হোকনা কেন,সর্বস্থরে জন সমাগম কমিয়ে মানুষে মানুষে দূরত্ব নিশ্চিত করে সংক্রামণ প্রতিরোধ করতে হবে। সংক্রামণ রেখা নিন্মমূখী করতে সব যায়গা থেকে চেষ্টা করতে হবে। সংক্রামণ ঠেকাতে জোন ভিত্তিক লক ডাউন ঘোষনা করা পর্যন্তই থেমে থাকলে হবেনা। শতভাগ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুলোকে কঠোর নির্দেশ দিতে হবে রাষ্ট্রীয় প্রধানদের, কার্যকর করতে কোন ব্যার্থতা পেলে দায়িত্বরতদের ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়ে তা তদারকি করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে জনগণকে বাধ্য করতে প্রয়োজনে মাঠ পর্যায়ে প্রাশনের ব্যাপক কঠোর তৎপড়তা চালানোর পরিকল্পনা দিয়ে মাঠে নামাতে হবে।
দেশের নীতিনির্ধারকেদের প্রতি আহবান,করোনা সংক্রমণের উর্ধরেখার এ ভয়ঙ্কর সময়ে, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যার্থ হলে করুণ পরিণতির শিকার হবে দেশ। প্রশ্ন রেখে গেলাম,এখন যে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চিন্তা করা হচ্ছে, করোনার সংক্রামণ না ঠেকাতে পারলে এই অর্থনীতির চাকা অচল অবস্থায় পতিত হবে কি? অর্থনৈতিক চাকায় যারা গতি দেন তারাই যদি অসুস্থ হয়ে যান বা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হন তবেকি সেই চাকা সচল থাকবে ? আমি মনে করি বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষায় কিছুটা ক্ষতি মেনে নেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ভয়ঙ্কর সময় পারি দেয়ার সময় রাষ্ট্র যদি কঠোর হস্তে মোকাবেলা না করে ঢিলেঢালা সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুতে চায় তাহলে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিই অনিবার্য।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতে জনগণকে দায়িত্বশীল করে তুলতে জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টাই যথেষ্ট হবে বলে মনে করি। সব শ্রেণীর জনগণকে সিদ্ধান্ত নেয়াতে হবে,
তিনবেলা ভরপেট খেতেগিয়ে যদি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে ৯০ ভাগ,সেই ক্ষেত্রে কিছুদিন একবেলা কম খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই শ্রেয়। আর এই সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে নিজেকেই দায়িত্ব নিতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল,আর জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হওয়া। জন প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে প্রতিটি এলাকাভিত্তিক তৎপড়তাতেই এটা বাস্তবায়ন সহজ ব্যাপার না হলেও অনেক কঠিন ব্যাপার নয়।♦
বুলবুল আহমেদ সোহেল,
সংবাদকর্মী,একাত্তর টিভি।
সাধারণ সম্পাদক,
নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।
সদস্য,নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন।