সারা বিশ্বেই চলছে ক্ষমতার লড়াই। সৌদি আরবে আধুনিকতার নামে অশ্লীলতার অনুমোদন,ইসরাইল,ফিলিস্তিন, মিয়ানমার,চীন,ভারতে - মানবতা ধর্ষিত অত্যাচারীত। নির্মম বালির শিকার শিশু নারী বৃদ্ধা। ট্রাম্প- মোদি -সূচিরা হায়নার রূপ নিয়েছ। অন্যায়ের প্রতিবাদকারীরা পরাস্ত বা আনুগত্যপ্রবণ । চারদিকে পাপাচারের জয় জয়কার। নিপীড়িতদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর সৃষ্টিকর্তার সাহায্য ছাড়া কোন উপায় নেই। সেই মুহর্তেই মহামারি আর পতঙ্গের হানা। গোটা বিশ্ব সৃষ্টিকর্তার সামান্য দুটি মাখলুকাতের ভয়ে আজ গৃহবন্দি। সমাধানের উপায় আর কারো মাথায় ধরছেনা। ঠিক সেই সময়েই সৃষ্টিকর্তা, সামান্য থেকে সামন্য তার শক্তির নিদর্শন দেখিয়ে আবারো সতর্ক করে দিলেন। এখন বাকিটা দায়িত্ব মানব জাতির।
যার যাই বিশ্বাস হোক,আমি বিশ্বাসকরি সারা বিশ্ব যখন উন্মাদ,অশ্লীলতায়-বেহায়াপনায় লিপ্ত,বিশ্ব যখন ক্ষমতার আমিত্বের অহংকারে নিমজ্জিত হয়ে হত্যা ধর্ষনে লিপ্ত,খোদার নাফরমানী করে দম্ভোক্তি’তে লিপ্ত,দ্বীনের মূল মেহনত তাবলীগেও আমিত্বের বড়াই এসেগেছে-
আমার খোদা নারাজ হয়ে উগ্র পাপাচার মানবজাতির জন্য শাস্তি স্বরূপ করোনা আর পঙ্গপাল এই দুই মাখলুককে পাঠিয়েছেন।
আবার ইমানদারগণদের জন্য দিয়েছেন শুভ সংবাদ। খোদর প্রতি ইমনদারগণদের আরো ভিতি সৃষ্টিকরে ফিরিয়ে নিচ্ছেন আমলের মধ্যে। ইমানদারগণ দুনিয়াবি প্রলোভনে মত্ত হওয়ার পূর্বেই খোদা রহমত সরূপ সাবধান হওয়ার সুযোগ করে দিলেন।
আমার এই বিশ্বাস কোরআন ও হাদিসের আলোকে। সারা বিশ্বে যখন মানবতার বিপর্যয় হয় খোদা তখনই এই ধরনের আজাব দিয়ে থাকেন। রাসুল (সাঃ) ও এ ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়। এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
সকল ধর্মের সবার প্রতি আহবান রইলো, সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করলেই,বাঁচবে গোটা জাতি। সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। সৃষ্টিকর্তা যদি ক্ষমা না করেন,দয়া না করেন তাহলে গোটাজাতি কোন শক্তিই কাজে লাগাতে পারবেন না। সবাইকে ঘরে আবদ্ধ হয়েই মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে। গোঁড়ামি করে বিপদ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবেনা। মুসলিম ভাইদের মুনাফিকি ছেড়ে দিয়ে মুমিনদের খাতায় নাম লিখাতে হবে। মুমিন ভাইদের দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আরো যত্নবান হতে হবে। নিজেদের মধ্যে বড়ত্বের লড়াই করতে গিয়ে অহংকারী হয়ে উঠলে দ্বীন দুনিয়া আখিরাত তিনটাই গরবাদ হয়ে যাবে। খোদার আজাব ধেয়ে আসলে তখন কিন্তু কারোরই শেষ রক্ষা হবেনা। মুমিন ভাইয়েরা রাসুল (সাঃ) উম্মতেরা নিচের কোরআন ও হাদিসগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের আমল বাড়িয়ে দিয়ে খোদার কাছে ক্ষমাচেয়ে খোদার দয়ালাভ করে গোটাজাতিকে রক্ষা করতে হবে।
সূরা আ'রাফ; আয়াত ১৩২-১৩৫
সূরা আল আ'রাফের ১৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَقَالُوا مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِ مِنْ آَيَةٍ لِتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ
“তারা (তথা ফেরাউন ও তার দলবল মুসা-আ.কে) আরও বলল, আমাদের উপর জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন আমরা কিন্তু তোমার উপর ঈমান আনব না।” (৭:১৩২)
এই আয়াতসহ কুরআনের এ জাতীয় আরো আয়াত থেকে বোঝা যায়, বেশিরভাগ কাফিরই সত্যকে বোঝার পরও তা অস্বীকার করে কুফরি করেছে। অহংকার ও দুর্বিনীত স্বভাবের কারণেই তারা কুফরি করত। এই আয়াতেও কাফিররা হযরত মুসা (আ.)-কে বলছে যে, তুমি সুনিশ্চিত থাক যে যত দলিল-প্রমাণই আমাদের দেখাও না কেন আমরা তোমার ওপর ঈমান আনছি না। অর্থাত ঈমান আনারই কোনো ইচ্ছেই আমাদের নেই। অথচ সত্য-সন্ধানী মানুষ হলে তারা এটা বলত যে, যদি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমরা আপনার আহ্বান মেনে নেব ও আপনার প্রতি ঈমান আনব। তাই দেখা যায় ফেরাউনের দরবারের সুদক্ষ জাদুকররা গোড়া ও দুর্বিনীত ছিল না বলে যখনই এটা বুঝতে পেরেছে যে হযরত মুসা (আ.) যা দেখাচ্ছিলেন তা জাদু নয় তখনই তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে। কিন্তু ফেরাউনের সাঙ্গপাঙ্গরা জাদুবিদ্যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও জাদুকরদের বক্তব্য মেনে নিতে পারেনি। তারা এরপরও মুসা (আ.)-কে জাদুকর বলে অপবাদ দিচ্ছিল।
এ আয়াতের দু’টি শিক্ষা হল:
এক. নবী-রাসূলদের জাদুকর বলে অপবাদ দেয়া ছিল সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রীতি। কিন্তু নবী-রাসূলরা কখনও ময়দান ছেড়ে দেননি, বরং নানা অপবাদ ও বাধা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
দুই. অহংকার ও গোড়ামি এক ধরনের মানসিক রোগ। এ রোগ মানুষকে সত্যের তথা ধর্মের পথ মেনে নিতে বাধা দেয়।
সূরা আল আরাফের ১৩৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آَيَاتٍ مُفَصَّلَاتٍ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُجْرِمِينَ
“সুতরাং আমি (আমার ক্ষমতার নিদর্শন হিসেবে) তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত (প্রবাহ) প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।” (৭:১৩৩)
কাফিরদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও গোঁড়ামি অব্যাহত থাকায় আল্লাহ ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক অনেক আজাব বা শাস্তি পাঠালেন। তাদের বেশিরভাগই ছিল কৃষিজীবী। আকাশ থেকে এত বৃষ্টি বর্ষিত হল যে বন্যার পানির নিচে বহু অঞ্চল তলিয়ে গেল। পঙ্গপাল ও অন্যান্য পোকামাকড় তাদের ফসল নষ্ট করে দিল। তাদের ব্যবহারের পানি রক্তে পরিণত হল। ফলে তাদের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে। আর এসবই ছিল তাদের অহংকার, খোদাদ্রোহিতা ও পাপের শাস্তি। তাওরাতেরও বিভিন্ন অংশে কুরআনে বর্ণিত এইসব শাস্তির কথা উল্লেখিত হয়েছে।
এ আয়াতের দু’টি শিক্ষা হল:
এক. জীবজন্তু আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করে। কখনও তারা আল্লাহর রহমত ছড়িয়ে দেয়, যেমনটি মাকড়া গুহার মধ্যে বিশ্বনবী (সা.)-কে রক্ষা করেছিল। আবার কখনও কখনও তারা আল্লাহর শাস্তি কার্যকর করে, যেমন, কৃষি ক্ষেতে পঙ্গপালের আক্রমণ।
দুই. পাপ ও অহংকার সত্যকে অস্বীকারের পথ খুলে দেয়।
সূরা আল আরাফের ১৩৪ ও ১৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ الرِّجْزُ قَالُوا يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِنْدَكَ لَئِنْ كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِي إِسْرَائِيلَ (134) فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الرِّجْزَ إِلَى أَجَلٍ هُمْ بَالِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنْكُثُونَ (135)
“আর তাদের উপর যখন কোন আযাব আসত তখন তারা বলত, হে মূসা! আমাদের জন্য তোমার পরওয়ারদেগারের কাছে সে বিষয়ে দোয়া কর যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন (ও তোমার দোয়া কবুল করেন)। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এ আযাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা ঈমান আনব তোমার উপর এবং বনী-ইসরাঈলদেরকে (মুক্তি দেব ও) তোমার সাথে যেতে দেব।” (৭:১৩৪)
“অতঃপর যখন (মুসা-আ.-এর দোয়ার কারণে) আমি তাদের উপর থেকে শাস্তিকে সেই নির্দিষ্ট কাল (যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল) পর্যন্ত পৌঁছার আগেই তুলে নিতাম , সাথেসাথেই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করত।” (৭:১৩৫)
ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ওপর নানা ধরনের আসমানী বালা-মুসিবত নাজেল হয়েছিল তাদের অবাধ্যতা বা নাফরমানির কারণেই। তারাও বুঝতে পেরেছিল যে, এসব শাস্তি প্রাকৃতিক ব্যাপার নয়। তাই তারা ওইসব শাস্তি তুলে নেয়ার জন্য মুসা (আ.)-কে বলত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে। তারা এই ওয়াদাও দিয়েছিল যে, যদি তুমি এইসব শাস্তি তুলে নিতে পার তাহলে তোমার ওপর ঈমান আনব এবং বনি-ইসরাইল জাতিকে আর কষ্ট দেব না। তাদেরকে স্বাধীন করে দেব যাতে তারা তোমার সঙ্গী হতে পারে।
হযরত মুসা (আ.) তাদেরকে আগেই বলে দিয়েছিলেন যে, এইসব শাস্তি বা আজাব কতদিন ধরে অব্যাহত থাকবে যাতে ফেরাউনের সম্প্রদায় বুঝতে পারে যে শাস্তিগুলো প্রাকৃতিক দূর্যোগ নয় বরং খোদায়ী আজাব। যাই হোক, তিনি তাদের অনুরোধ মেনে নিয়ে শাস্তি বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করায় তাঁর দোয়া কবুল হয়। অর্থাত শাস্তি বন্ধ হয়ে যায় নির্ধারিত মেয়াদের আগেই। কিন্তু ফেরাউনের জাতি এইসব মোজেজা এবং খোদায়ী নিদর্শন দেখার পরও হযরত মুসা (আ.)-কে দেয়া ওয়াদা ভঙ্গ করে ও পুনরায় খোদাদ্রোহীতায় নিমজ্জিত হয়।
এই দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষা হল:
এক. বিপদ-মুসিবত দূর করার জন্য আল্লাহর ওলিদের উসিলা করা খুবই কার্যকর পদ্ধতি। কাফিররা তাদের ওপর নেমে আসা খোদায়ী শাস্তি বন্ধ করার জন্য হযরত মুসা (আ.)-এর শরণাপন্ন হয়ে বলেছিল, আপনি আমাদের ওপর থেকে এইসব শাস্তি তুলে নেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।
দুই. মানুষের জীবনের সুখ ও দুঃখ কোনো ঘটনাক্রমিক ব্যাপার নয়, বরং সুনিয়ন্ত্রিত ও স্পষ্ট বিধানের আওতাধীন যা কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে।
মহামারি পৃথিবীতে আল্লাহর একটি শাস্তিঃ
কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে মহামারি পৃথিবীতে আল্লাহর একটি শাস্তি। যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতার মতো জঘন্য পাপ বেড়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দেন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্লেগ রোগ (মহামারি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহর নবী (সা.) তাকে জানান, এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তাছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৪)
দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীনতা জাতির ধ্বংস ডেকে আনেঃ
আল্লাহর অবাধ্যতা, সীমালঙ্ঘন ও অবাধ পাপাচার মহামারির অন্যতম প্রধান কারণ হলেও শুধু পাপীরাই তাতে আক্রান্ত হয় না; বরং সৎ ও নেককার মানুষও তাতে আক্রান্ত হয়। কেননা তারা দ্বিনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে হয়তো উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের আগের যুগে আমি যাদের রক্ষা করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সজ্জন ছিল না—যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে নিষেধ করত। তারা সীমালঙ্ঘনকারীরা যাতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পেত তারই অনুসরণ করত এবং তারা ছিল অপরাধী।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ১১৬)
অতীতে মহামারিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিঃ
অতীতেও আল্লাহ পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহামারি প্রাদুর্ভাব ঘটান এবং সে জাতিকে ধ্বংস করে দেন। দাউদ (আ.)-এর যুগে এমন ঘটনা ঘটেছিল। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি কি তাদের দেখনি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। তারপর আল্লাহ তাদের জীবিত করেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৩)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। মহামারির ভয়ে তারা পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল, আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। অতঃপর তারা এক স্থানে একত্র হলো। তখন আল্লাহ তাদের ওপর মৃত্যুর ফরমান জারি করেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এছাড়া একটি হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় আল্লাহ অতীতের কোনো কোনো গোত্রকে মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার অবশিষ্টাংশই মহামারি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)
মহামারি নিয়ে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীঃ
মহামারি ও রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, এরপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মহামারির মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩১৭৬)
তবে এই মহামারি থেকে আল্লাহ পবিত্র নগরী মদিনাকে রক্ষা করবেন বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মদিনায় ঢুকতে পারবে না দাজ্জাল, আর না কোনো মহামারি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩১)
মহামারী থেকে রক্ষার দোয়া ও করনীয়ঃ
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়াটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো বিপদ হঠাৎ চলে আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। দোয়াটি হলো, ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম’, অর্থ: ‘আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮৮)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, (রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য) নবী (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল বাসারি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম’, অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ১৫৫৪)
করনীয়ঃ
যেকোনো বিপদে বান্দা আল্লাহমুখী হোক এবং তার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করুক এটাই মহান প্রতিপালক আল্লাহর প্রত্যাশা। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনীত হলো না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না।’ (সুরা: মুমিনুন, আয়াত: ৭৬)
বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)
সহিহ বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায় শামে মহামারি দেখা দিলে ওমর (রা.) তার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (হাদিস: ৫৭২৯)
পরিশেষে বলবো খোদা রহমাতুল্লিল আলামীন আমাদের সকলকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক। বেশি বেশি সিজদায় পরে যাই। বেশি বেশি পাঠ করি--