হায়েনা আর শকুনের শিকার একটাই। হায়েনা খায় তাজা শিকার করে আর মরা পঁচা খায় শকুন। হায়েনার গোত্র যে গুহায় বাস করে,শকুনের গোত্র সে গুহার চারপাশের গাছে বাসা বেঁধেছে। হায়েনার যাকিছু শিকার করে তার উচ্ছিষ্ট শকুনেরা খায়। হায়েনার গোত্র এ নিয়ে বেশ চিন্তিত। তার কষ্ট করে শিকার করে আর শকুনের দল বসে বসে খায়। শকুনের দলের সঙ্গে হায়েনার চুক্তি শিকার কোথায় আছে সে উড়ে উড়ে খবর দেবে। একবার বনে শিকারের অভাব দেখা দিল, তাই হায়েনার আর উচ্ছিষ্ট রাখেনা। প্রায় চেটে পুটে খেয়ে শেষ। আর শকুনের দল এখন সারা বণ খুঁজেও তেমন কোন শিকারের সন্ধ্যান দিতে পারছেনা। এখন খাবার সংকটে দুই দলই প্রায় বিবাদে লিপ্ত। এমনি একদা বিবাদের সময় শিয়াল পন্ডিত হাজির। শিয়াল পন্ডিত খায় মরা মানুষের গোস্ত। তারও খাদ্য সংকট চলছিল। সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিবাদের মাঝখানে হাজির পন্ডিত মশাই। অমনি হায়েনার দল শিয়ালকে ঘিরে ফেলেছে তাদের শিকার হিসেবে
শিয়ালঃ আরে আমাকে ঘিরে রেখেছো কেন?
হায়েনা ও শকুনের দলঃ আমরা শিকারের জন্য ঝগড়ায় লিপ্ত ছিলাম। শিকার পেয়েছি,এখন তোমাকে আমরা খাবো। আর পরে কি হবে তা পরে দেখবো
শিয়ালঃ আমি ভেবে ছিলাম আমি যাচ্ছি মানুষের গোস্ত খেতে। ভাবলাম তোমরা খাদ্য সংকটে আছো তোমাদেরকে মানুষের গোস্ত খাওয়ার সন্ধ্যানটা দিয়ে যাই।
হায়েনার সর্দারঃ এই শিয়াল তুমি ফান এঁটেছো! আমরা মানুষ শিকার করতে যাই আর মারা পরি?
শকুনের সর্দারঃ তোমার চালাকি আমরা বুঝিনা ? তুমি আমাদের থেকে পালানোর ফন্দি এেঁটেছ।
শিয়ালঃ শকুনের দল একটু কষ্ট করেনা বলেইতো হায়েনা মামারা কম খেতে খেতে এমন শুকিয়ে গেছে।
হায়েনা সর্দারঃ তুমি কি বলতে চাইছো ?
শিয়ালঃ হায়েনা মামারা তোমাদের আর বুদ্ধি হলোনা। মানুষকি তোমার শিকার করতে হবে। আমিতো তোমাদের সঙ্গেই রইলাম। আমার বুদ্ধি আর শকুন দলের একটু শ্রম। তোমরাতো শুধু বসে বসে খাবে।
হায়েনা সর্দার বেজায় খুশি। এবার একটা পথ হলো। শকুনটাও তাদের খাবারে ভাগ বসাবেনা বরং শকুন আর শিয়ালের শিকার তারা বসে বসে খাবে। হায়েনা সর্দার এবার শিয়ালকে তার কাজ শুরু করতে বললো।
শিয়ালঃ হায়েনা মামা মানুষ শিকার করতে হবে টোপ দিয়ে।
হায়েনাঃ টোপ মানে।
শিয়ালঃ এক টুকরো গরুর গোস্ত আর এক টুকরো শুকরের গোস্ত বর্ষিতে গেঁথে ফেললে হাজার হাজার মানুষ সে টোপ গিলে আমাদের শিকার হবে।
হায়েনা সর্দারঃ রেগে অস্থির হয়ে,এই তুমি সত্যিই আমাদের বোকা বানানোর পায়তারা করছো।
শকুন সর্দারঃ মানুষের গোস্ত খাওয়ার লোভ সামলাতে পারছেনা। সে যে কোন চেষ্টা করে দেখতে রাজি। গম্ভীর গলায় বলছে দাঁড়াও আমরা টোপ নিয়ে আসছি।
এই বলে শকুনেরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে এক টুকরো গরুর গোস্ত আর এক টুকরো শুকরের গোস্ত নিয়ে হাজির। শিয়াল পন্ডিত বলো এবার কি করতে হবে?
শিয়ালঃ যাও এবার গরুর গোস্তের টুকরোটা মন্দিরে আর শুকরের গোস্তের টুকরোটা মসজিদে ফেলে আসো।
এবারতো হায়েনার দলের রাগ আরো বাড়লো। আমার পাঠকের মতো ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে এবার হায়েনার দল বললো আগে তোমার পরিকল্পনা বলো। যদি মনে হয় এতে কোন বিপদের শঙ্কা নেই তবেই আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হবো। শকুনের দলও এক সুরে বলতে লাগলো হ্যা এটাই ঠিক হবে।
শিয়াল পন্ডিতঃ
এতো সহজ ব্যাপার এখনো বুঝতে পারছোনা তোমরা! আরে ভাই,এই কাজটা করলেইতো আমাদের শিকার হয়ে গেলো। শকুন খেলো পচাগলা,তুমি খেলে তাজা রক্তমাখা আর আমি খেলাম কবর খুরে মরা মানুষের গোস্ত।
মানুষ যে কতটা বোকা তা তোমরা জানোনা। আমাদের এই গোস্তের টুকরার টোপটা হলো সাম্প্রদায়িক উষ্কানি,আর এই টোপ তারা গিলবেই। তারা জড়িয়ে পড়বে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ফেসাদে। এবার বোঝো তোমরা কত লাশ পাবে। মিটবেতো আমাদের খাদ্য সংকট।
কথা শেষ হওয়ার আগেই শকুনের দল আর দেরি করলো না। উড়ে গিয়ে গরুর গোস্তের টুকরো মন্দিরে আর শুকরের গোস্ত মসজিদে ফেলে দিল। আর কিসের অপেক্ষা শিয়াল পন্ডিতের বুদ্ধির কাছে পরাস্ত মানুষগুলো রূপ নিলো অমানুষের। হায়েনা আর শকুনের দল চরম সানন্দে শিশু যুবক বৃদ্ধ নারী পুরুষ শিক্ষিত মূর্খ সব শ্রেণীর মানুষের গোস্ত চিবায় আর শান্তির গান গায়। ##