পূর্নেন্দু পত্রীর অসামান্য সৃষ্টি..
1 কথোপকথন - ১
- কি করছো?
-- ছবি আকঁছি।
- ওটা তো একটা বিন্দু।
-- তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে। কেন্দ্র হবে তুমি। আর আমি হবো বৃত্তাবর্ত।
- কিন্তু আমি যে বৃত্তে আবদ্ধ হতে চাই না। আমি চাই অসীমের অধিকার।
-- একটু অপেক্ষা করো। . . . এবার দেখো।
- ওটা কি? ওটা তো মেঘ।
-- তুমি ছুঁয়ে দিলেই আকাশ হবে। তুমি হবে নি:সীম দিগন্ত। আর আমি হবো দিগন্তরেখা।
- কিন্তু সে তো অন্ধকার হলেই মিলিয়ে যাবে। আমি চিরন্তন হতে চাই।
-- আচ্ছা, এবার দেখো।
- একি! এ তো জল।
-- তুমি ছুঁয়ে দিলেই সাগর হবে। তিনভাগ জলের তুমি হবে জলকন্যা। আর আমি হবো জলাধার।
- আমার যে খন্ডিতে বিশ্বাস নেই। আমার দাবী সমগ্রের।
-- একটু অপেক্ষা করো। এবার চোখ খোল।
- ওটা কি আঁকলে? ওটা তো একটা হৃদয়।
-- হ্যাঁ, এটা হৃদয়। যেখানে তুমি আছো অসীম মমতায়, চিরন্তন ভালোবাসায়। এবার বলো আর কি চাই তোমার?
- সারাজীবন শুধু ওখানেই থাকতে চাই।
2.কথোপকথন --৪
- যে কোন একটা ফুলের নাম বল
- দুঃখ ।
- যে কোন একটা নদীর নাম বল
- বেদনা ।
- যে কোন একটা গাছের নাম বল
- দীর্ঘশ্বাস ।
- যে কোন একটা নক্ষত্রের নাম বল
- অশ্রু ।
- এবার আমি তোমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারি ।
- বলো ।
- খুব সুখী হবে জীবনে ।
শ্বেত পাথরে পা ।
সোনার পালঙ্কে গা ।
এগুতে সাতমহল
পিছোতে সাতমহল ।
ঝর্ণার জলে স্নান
ফোয়ারার জলে কুলকুচি ।
তুমি বলবে, সাজবো ।
বাগানে মালিণীরা গাঁথবে মালা
ঘরে দাসিরা বাটবে চন্দন ।
তুমি বলবে, ঘুমবো ।
অমনি গাছে গাছে পাখোয়াজ তানপুরা,
অমনি জোৎস্নার ভিতরে এক লক্ষ নর্তকী ।
সুখের নাগর দোলায় এইভাবে অনেকদিন ।
তারপর
বুকের ডান পাঁজরে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
রক্তের রাঙ্গা মাটির পথে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে
একটা সাপ
পায়ে বালুচরীর নকশা
নদীর বুকে ঝুঁকে-পড়া লাল গোধূলি তার চোখ
বিয়েবাড়ির ব্যাকুল নহবত তার হাসি,
দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ,
পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে
যেন বটের শিকড়
মাটিকে ভেদ করে যার আলিঙ্গন ।
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত হাসির রং হলুদ
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত গয়নায় শ্যাওলা
ধীরে ধীরে তোমার মখমল বিছানা
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সাদা ।
- সেই সাপটা বুঝি তুমি ?
- না ।
- তবে ?
- স্মৃতি ।
বাসর ঘরে ঢুকার সময় যাকে ফেলে এসেছিলে
পোড়া ধুপের পাশে ।
তোমার চোখে জল কেন?
ভালবেসেছি বলে।
তোমার চোখে নেই?
শুকিয়ে গেছে।
তারপর, কি করলে এতদিন?
কাঁদলাম। তুমি?
লেখালেখি।
কবিতা? কই শুনাও।
শুনবে? তবে বলি-
'আমি যেন আর আমি নেই,
ভোর হয় আগের মতই
শুধু আমি জেগে থাকি'
কেন?
তোমাকে না কতবার রাত জাগতে বারণ করেছি।
অমাবশ্যার খেয়ালি চাঁদ, আমাকে
জাগিয়ে রাখে সারারাত।
তোমাকে ও কি তাই?
জানিনা,
তবে, আমি হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে
তুমি ও কি তাই?
আমি বিলীন হয়ে গেছি।
কবে?
বুঝতে পারিনি,
শুধু বুঝেছে আমার ঘুমহীন দু'চোখ, আর
জেগে থাকা ঐ পাখিটা,
সাথিহারা বেদনায় যে
ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠে।
তাই? আমার সময় কাটে অস্তিরতায়।
কেন?
বুকের প্রতিটি স্পন্দন,
ভালবাসি ভালবাসি বলে চেঁচায়।
তোমার ও কি তাই?
আমি মরি নিদারুণ ঘোরে,
মনের অজান্তে ভালবেসেছি যারে,
হৃদয় পুড়ে প্রত্যহ তার তরে।
ভালবেসেছ তবে,
জানতে পেরেছ কবে?
আমি জানিনে,
শুধু জানে আমার
শুকিয়ে যাওয়া হৃদয়,
যেখানে ক্ষণে ক্ষণে আর্তি বেরোয়।
রহস্যময় স্বভাব তোমার,
একি তবে সত্য, নাকি ভেবে নেব
এও তোমার নিছক খেলা?
আমার বলার নেই কিছুই,
শুধু বলব,
জোনাকী'দের কাছে জেনে নিও
প্রতিটি সন্ধ্যেবেলা।।