কিবরিয়া ভাই মাথার ভিতর যে প্রশ্নের বীজ বপন করে দিয়ে গেলেন জল-হাওয়া পেয়ে কিছুটা মাথাচাড়া দিতে লাগলো। কিবরিয়া ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গুলশান শাখার দুই সহকর্মী আমি আর সোহেল ভাই সেই বীজের মৃদু পরিচর্যা করতে লাগলাম। সাথে যোগ হলো বন্ধু সোহাগ।
কানাডার কী, কেন, কোথায়, কিভাবে ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার কানাডা প্রজেক্ট একটু পরিবর্তিত হয়ে গেলো। তিনজন মিলে ঠিক হলো, আমরা বিদেশ যাবো, তবে কানাডা নয়, গেলে একেবারে এক নাম্বারটাতেই যাবো, আমেরিকা। এবং ওইসব লটারি-ফটারি নয়, আমরা বাঘের মতন যাবো, জিম্যাট দিয়ে, স্কলারশিপ নিয়ে ভালো কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো, পড়ালেখা শেষ করে থাকলে থাকলাম, দেশে চলে আসলে চলে আসলাম।
যেই কথা সেই কাজ। নীলক্ষেত থেকে আমরা ৩ জন GMAT-এর তিনটা বই কিনলাম। বইটা কেনার পরপরই বলা চলে আমাদের প্রজেক্ট আমেরিকার যবনিকা পতন হলো। বলা বাহুল্য, বইটির ২-৪ পাতা পড়েছিলাম কিনা কে জানে!
২০১৪ সালে গুলশান শাখা থেকে দিলকুশা প্রধান শাখায় চলে আসলাম। বড় শাখা, ১২০-১৩০ জন সহকর্মী। এত বড় একটা দলের অংশ হবার সুবিধা হলো, এখানে আপনি যাই চান না কেন, ব্যাংকার, কবি, রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, শিল্পী, বিজ্ঞানী, সবই পাবেন। যথারীতি আবার দুচারজন পাওয়া গেলো কানাডা প্রত্যাশী। মনে সুপ্ত বাসনা আবার উকিঝুকি দিতে লাগলো। আর চোখের সামনে যখন দুয়েকটা জলজ্যান্ত উদাহরণ পাওয়া যায়, তখন সুপ্তবাসনা জাগ্রত হতে সময় লাগে না! চোখের সামনে রেজা ভাই, রানা প্রতাপ সাহা ভাইরা নোভা স্কশিয়াতে পাড়ি জমানোর পর শাখা জুড়েই একটা নিরব বিপ্লব ঘটে গেলো। যে ইন ডিসিশনে ছিলো, সে ফুল ডিসিশনে এসে গেলো, আমার মতন যারা দশ-বিশ শতাংশ আগ্রহী ছিলো তারা ষাট-সত্তর ভাগ আগ্রহী হয়ে উঠলো।
কেউ ইন্টারনেট ঘেটে জেনে আসে, কেউ কনসালটেন্ট এর কাছ থেকে জেনে আসে, তথ্যের বেশ একটা প্রবাহ দেখা দিলো চারিদিকে। আর আমি কান পেতে শুধু সেসব শুনি, এর ওর কাছ থেকে ছোটখাটো প্রশ্ন করে দুয়েক কথা জেনে নিই।
আমাদের টিমের হাসান ইমাম রানাকে দেখা গেলো অনেক কিছু জানে। একদিন সময়-সুযোগ বুঝে জানতে চাইলাম, আমার কোনো সুযোগ আছে কিনা কানাডা যাবার?
রানা আগ্রহ নিয়ে জানালো, সুযোগ আছে মানে? ভালো সুযোগ আছে।
ওর আগ্রহ দেখে আরেকটু জানতে চাইলাম, আবেদন করতে কী লাগে?
রানা সেই আমলেই ওসি হারুনের মতন বলেছিলো,
দুইটা জিনিস লাগবে।
১. IELTS এর একটা ভালো স্কোর, আর
২. ECA।
মাত্র দুইটা জিনিস? তাহলে দেখাই যাক না কী আছে কানাডায়!
রানা হাতে ধরে কানাডা ইমিগ্রেশনের এই মহাসমুদ্রে আমাকে শুধু নামায়ই নি, অনেকটা পথ এগিয়েও দিয়েছিলো। কানাডা আমাকে যদি ভালো কিছু উপহার দিয়ে থাকে তার অনেকটা কৃতিত্ব এই হাসান ইমাম রানার।