ছোটবেলায় আমার কিছু হাঁস-মুরগি ছিলো।
একদা আমার একটা মুরগি একবার ডিম পেড়ে, ডিমে তা দিয়ে ১০-১২ টা বাচ্চা ফুটালো। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে মা মুরগী এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়, খাবার খুঁজে বেড়ায়।
অন্যান্য মুরগী ও অপরাপর প্রাণীকূলও ঘুরে বেড়ায়, খাবার খুঁজে বেড়ায়, ধূলিস্নান করে, গাছের ডালে বসে বিশ্রাম নেয়, হাঁসেরা পুকুরে সাতার কাটে।
'চা খাবেন? ঢেলে দেই?'-এর মতন শান্ত-স্নিগ্ধ একটা পরিবেশ।
এরই মাঝে হঠাৎ কখনও মা মুরগীর আর্তচিৎকার শোনা যেত। স্বাজাতির অন্যান্য কুক্কুটের কক কক, হংসের প্যাক প্যাক সহ একটা সম্মিলিত শোরগোল।
আমরা বুঝতে পারতাম, আরেকটা গেলো!
চিল, কাক বা বেজী, মুরগির আরেকটি ছানা ধরে নিয়ে গেছে।
গেরস্থর দায়িত্ববোধ থেকে ছুটে এসে আকাশের অজানা কাক-চিলের উদ্যেশ্যে ঢিল ছোড়া আর অদেখা বেজীর উদ্যেশ্যে আশেপাশের নির্দোষ ঝোপঝাড়ে কিছু উচ্ছেদ অভিযান চালানো হতো।
বলা বাহুল্য, আমার সেই ঢিল কখনো কাক বা চিল পর্যন্ত পৌছাতো না; কিংবা ছোট-খাটো ঝোপঝাড় উচ্ছেদ দেখে নিরাপদ স্থানে বসে মুরগির ছানা চিবোতে চিবোতে মুচকী হাসতো বেজী!
উচ্ছেদ অভিযান শেষে আমি আমার কাজে যেতাম। হাঁস আবার আনমনে সাতার কাটতে শুরু করতো। অন্যান্য পাখিরা আবার খাবার খুঁজে বেড়াতো, ধূলিস্নানে ব্যাস্ত হতো, গাছের ডালে বিশ্রাম নিতো। এমনকি মা মুরগিও অবিশিষ্ট ছানাদের নিয়ে নিশ্চিন্তে চড়ে বেড়াতো।
আরেকটি ছানা ধরে নেবার আগ পর্যন্ত আগের সেই 'চা খাবেন? ঢেলে দেই'-এর মতন একটা ঐশী পরিবেশ।
***
মুরগির সমাজে এটাই রীতি। একেকটা দুর্ঘটনার পর কিছু শোরগোল। সামান্য বিরতির পর সবাই আবার যার যার কাজে ব্যস্ত--খাবার খোঁজা, ধূলিস্নান, পুকুরে সাতার কাটা, গাছের ডালে বিশ্রাম নেয়া।
মুরগির সমাজের গৃহস্থেরও এই রীতি--চিলের উদ্দ্যেশ্যে কিছু ঢিল ছোড়াছুড়ি, নির্দোষ ঝোপঝাড়ে এক ঘা, দুই ঘা।
আর মুরগির জীবনেরও এই রীতি, এই পরিনতি।