সারাদিন আজ ভার্সিটিতে কেটেছে বর্ণের। ইয়ার ফাইনাল চলছে, খুবই অবস্থা ডাল তার। সেই ভোরে বেরুতে হয়েছিল আজ। বিকেলে বাসায় এসেই নিজের রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে বর্ণ। যদিও ঘুমোতে যাওয়ার আগে একবার উঁকি মেরেছিল জানালা দিয়ে সামনের জানালাটার দিকে। থাইগ্লাস বন্ধ, এদিক থেকে ভেতরে কিছু দেখা যাচ্ছে না।
সকালে গ্লাস খোলা থাকলেও পর্দা দেয়া ছিল, ধরেই নিয়েছিল বর্ণ মেয়েটি ঘুমোচ্ছে। গ্লাস লাগানো দেখে বর্ণের মন কিছুটা খারাপ হল, আজ সারা দিনে একবারো দেখা মেলেনি মেয়েটির। তাকে প্রতিদিন একবার হলেও দেখতে হবে এমন অভ্যেস হয়ে গেছে
খুব হৈ হুল্লোড় চলছে ঘরে, উঁচু ভোলিওমে হিন্দি ইংরেজি গান বাজছে। কয়েকজন ছেলেমেয়ে দু’ রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সাজগোজ, নতুন পোশাক পরা। বোঝাই যাচ্ছে কোন উৎসব সামনের ঐ বাসায়। মশার কামড়ে বেচারার যা তা অবস্থা। মশার ভনভনানিতেই মূলত জেগে গেছে সে। ঘরময় অন্ধকার। বর্ণ যখন ঘুমে থাকে তখন তার ঘরে কারো ঢোকা বারণ। কারণ খুব অল্প শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। বর্ণের মা নেই, বাবা সারাদিন ই ব্যবসার কাজে বাইরে থাকেন। মাঝে মাঝে ডিনারে দেখা হয় বাবার সাথে। বাসায়।
সন্ধ্যার বেশ পরে ঘুম ভেঙ্গেছে বর্ণের। আর ঘুম থেকে উঠেই ঢুঁ দিল ঐ জানালায় দেখে এমন উৎসবমুখর পরিবেশ।
কিছুক্ষণ অনেকের মাঝে চোখ বুলিয়ে খোঁজ করল মেয়েটির। নাহ! দেখা যাচ্ছেনা। হতে পারে ভেতরে কোন রুমে। জানালা দিয়ে যে দু’টো রুম দেখা যায় সে নেই কোথাও। যেই মন খারাপ করে সরে যাবে জানালা থেকে তখনি দেখে গোলাপি রং এর গাউন পরা, মাথায় উঁচু বান করা একটা পরি যেন এক গাল হেসে ডানের রুমটা তে ঢুকল আর বাকিরা যারা ছিল তারা হাততালি দিচ্ছে। কি যে সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে! বর্ণ যেন এত সুন্দর মেয়ে কখনো দেখেনি আগে। একাই হাসছিল বর্ণ। আর তখনই করিম চাচা রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই হকচকিয়ে জানালা থেকে সরে গেল।
“কি দেহেন আংকেল?” করিম চাচা জিজ্ঞেস করল বর্ণের কাছে জানালার পাশে যেয়ে।
“কই কিছু না”(কিছুটা বিব্রত হয়েছে সে এভাবে ধরা খেয়ে গেল!)
“ওহ ঐ বাসা দেহেন? আজ হেই বাসার মাইয়াডার জন্মদিন। বন্ধু বান্ধব আইয়া ভইরা গেছে দেহি।” করিম চাচা বারান্দায় যেয়ে ঐ বাসাটার দিকে উঁকি দিতে দিতে বলল।
“তাই নাকি? আপনি কি করে জানেন চাচা?” বর্ণও বারান্দায় যেয়ে করিম চাচার পাশে দাঁড়ালো।
“ঐ যে ঐ বাড়ির দারোয়ানডা, ও কইল।” আংগুল দিয়ে নিচে দারোয়ানকে দেখাচ্ছিল করিম চাচা।
“ওহ আচ্ছা” বলে উত্তর দিল বর্ণ।
“চলেন চলেন কিছু খাইবেন, ৮টা বাজতে চলল, এহোনো আপনে না খাওয়া।" বলে করিম চাচা হাত ধরে কিছুটা টেনে নিল বর্ণকে।
কিন্তু বর্ণ তখনো তাকিয়ে আছে জানালায়। মেয়েটি এখন দু’জন বন্ধুর মাঝে বসে আছে, তার সামনে বড় একটি কেক আরো কিছু খাবার। কি যে খুশি লাগছে তাকে।
বর্ণ মনে মনে বলল, “ ঈশ্বর, প্রতিটা দিন ই যেন সে এমনই আনন্দে থাকে, এই হাসিটা যেন সব সময় তার ঠোঁটে লেগে থাকে
প্রথম পর্ব- Click This Link