৭ ই ভাদ্র রবিবার, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ। ১৯৪৭ এর ২৪শে আগষ্ট। পাবনা থেকে এনায়েত বিশ্বাস, খবির মিঞা, নরেন মিত্র এলেন ঠাকুর দর্শনে। সা¤প্রদায়িক বিদ্ধেষ সম্পর্কে কথা উঠায় শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
ধর্মের সঙ্গে সা¤প্রদায়িকতার কোন সম্পর্ক নেই। ধর্ম বলে, পূর্বপূরয়মান, বৈশিষ্ঠ্যপালী, সত্ত্বা স্বম্বর্ধনী প্রত্যেকটি মহাপুরুষকে মানতে। রসুল যেমন তোমাদের তেমনি আমাদেরও। তিনি সবারই। যীশু, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ প্রমুখ প্রত্যেকের সম্বন্ধেই ঐ কথা। আমি হিন্দু বলে রসুলকে, যীশুকে বা বুদ্ধদেবকে ভক্তি যদি না করি, তাহলে আমার হিন্দুত্বেরই অবমাননা হয়। ওদের মধ্যে বিভেদ করাই অন্যায়। আমি শ্রীকৃষ্ণকে মানি অথচ তার পূর্ববর্তীদের ও পরবর্তীদের মানি না, তার মানে আমি শ্রীকৃষ্ণকেও মানি না। এক একজন মহাপুরুষকে অবলম্বন করে এক এক স¤প্রদায় হলেও, যেহেতু প্রকৃত মহাপুরুষরা সবাই একই বার্তাবাহী ও একেরই নানা কলেবর, সেই জন্য প্রত্যেক মহাপুরুষই প্রত্যেক স¤প্রদায়ের এবং প্রত্যেক স¤প্রদায়ই প্রত্যেক স¤প্রদায়ের। আর পিতৃবংশ ও পিতৃকৃষ্টিকে অস্বীকার করতে উৎসাহিত করে তথাকথিত পড়হাবৎংরড়হ (দ্বিজাধিকরণান্তর) চালানোর ফলে অযথা আল সৃষ্টি করা হয়েছে। খোদার অভিসম্পাত আমাদের উপর পড়েছে। রসুল চাননি যে, কেউ পিতৃ পুরুষের পরিচয় মুছে ফেলুক। এক বংশের মানুষ, নিজেকে আরেক বংশের বলে পরিচয় দিক। এই সব অপকর্ম করে বিরোধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আমি বুঝি খোদার প্রতি, রসুলের প্রতি ভক্তি বিশ্বাস যাদের থাকবে, তাদের দিয়ে মানুষের উপকার ছাড়া অপকার হবার কথা নয়। আমরা বেশীরভাগ মানুষ ধর্মের পথে চলিনা। ধর্মের নামে নিজেদের বৃত্তিস্বার্থ চরিতার্থ করি। তাতেই যত গোলমাল হয় আর তথাকথিত ধর্ম ব্যাখ্যাতা যারা, তারা ইচ্ছে করেই বহু জিনিসের বিকৃত ব্যাখ্যা করে।
খবির মিঞা: আপনার কথা তো খুব ঠিক। কিন্তু পরিবেশ যেখানে বিকৃত, সেখানে কি করা সম্ভব?
শ্রীশ্রীঠাকুর: বিকৃতিকে সুকৃতিতে পরিণত করা আমাদেরই দায়িত্ব। নইলে কেউই রেহায় পাব না। নিজেরা ঠিক বুঝে নিয়ে চলা লাগে। আর মানুষের ভিতরও তাই চালাতে হয় Ñ নিজেদের ভাল হয়, অপরেরও ভাল হয়।
সম্পাদনায়: রিন্টু কুমার চৌধুরী
পরিচালক, শ্রেয় অন্বেষা
(শ্রীশ্রীঠাকুর’র আদর্শ ও কর্ম ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্টান