আজকে আমাদের এই কর্পোরেট স্বাধীনতার আড়ালে ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব কিছুই হাস্যকর ভাবে দূষিত হয়ে যায়, তখন দীর্ঘদিনের পুরোনো ঘৃণাটাকেই সযতনে পুষে রাখি। বছর বছর ধরে পুষে রাখি, রাখবো। এই নীরব ঘৃণার চাষাবাদ হয়তো আমার সন্তানের হৃদয়েও করে যাব।
যে গণস্রোতটা আমরা তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছি, হয়তো পরের প্রজন্ম সেই স্রোতটাকে বাঁধন ছাড়া করতে পারবে। এটা আমাদের বিশ্বাস, আর আমাদের বিশ্বাস কোন ঠুনকো ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাই আমাদের এই বিশ্বাসকে যখন কেউ অমূলক ঘোষণা করে, তখন রাগে-দুঃখে-অভিমানে অনেক সময়ই সে আমাদের ক্ষোভের আগুনের মাঝখানে এসে পড়ে।
আমরা অবশ্যই জানি, একজন অপরাধীর অপরাধের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের ঘৃণা করা যায় না। কিন্তু আসামী যখন একটা রাষ্ট্র হয়, তখন আমরা সেই রাষ্ট্রের অপরাধের জন্য তার প্রতিটি নাগরিককে ঘৃণা করি, যখনই সে রাষ্ট্রের মোড়কে আবৃত হয়। আমরা ঘৃণা করি আবালবৃদ্ধবণিতা সহ সেই রাষ্ট্রের নবজাতককেও। আপাত দৃষ্টিতে গণহারে ঘৃণাকে অন্যায় মনে হলেও এই ঘৃণার একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে।
আচ্ছা এমন হলে কেমন হতো? যদি ১৬ই ডিসেম্বরে প্রতিটি বাংলাদেশি রাস্তায় নেমে আসত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে, যেগুলোতে লেখা থাকতঃ
"হে পাকিস্তানী সকল; তোমরা জেনে রাখো, ৩০ লক্ষ লোককে অন্যায় ভাবে হত্যা করার জন্য আমরা তোমাদের ঘৃণা করি। লক্ষ লক্ষ লোককে গৃহহারা, পরিবারহারা করার জন্য আমরা তোমাদের ঘৃণা করি। আমাদের দুই লক্ষ নারীকে নির্মম ভাবে ধর্ষণ করার জন্য আমরা তোমাদের ঘৃণা করি। শুকরখানায় ঘোঁৎঘোৎ করতে থাকা দুর্গন্ধময় শুকরকে দেখলে যতোটা ঘৃণা উৎপাদন হয়; হে পাকিস্তানী সকল, তোমাদের জন্য ঠিক ততোটুকোই ঘৃণা"
পৃথিবীর সমস্ত দেশের টেলিভিশনে নিশ্চয়ই এই ঘটনা প্রতি বছর দেখানো হতো। পৃথিবীর সকল দৈনিকে নিশ্চয়ই এই ঘৃণার বার্তা পৌঁছে যেত।
তখন হয়তো কোন পাকিস্তানী কিশোর তার মায়ের কাছে এই ঘৃণার কারণ জানতে চাইত আর সেই পাকিস্তানী নারী তার সন্তানকে শোনাতো তার পূর্ব পুরুষের কথা। কীভাবে নীরিহ মানুষগুলোকে পাশবিক উন্মাদনায় হত্যা করেছিল তাদের পূর্ব পুরুষেরা, কিভাবে ধর্ষণ করেছিলো কারো আদরের বোনটিকে, কারো স্ত্রীকে।
সেই কিশোরটি নিশ্চয়ই লজ্জা পাবে। তাদের পূর্ব পুরুষের কৃতকর্মের লজ্জায়, গ্লানীতে মাটিতে মিশে যাবে। নিশ্চয়ই লক্ষ কোটি পাকিস্তানী তখন একসাথে বলে উঠবে আমরা আর এই ঘৃণার বোঝা টানতে পারছি না। যারা এই ঘৃণার কারণ, সেই সব হায়েনাদের বিচার চাই আমরা।
সারা বিশ্ব হয়তো থুতু ছিটাতো পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের নামে।
তখন আমাদের আর বিচার চাইতে হতো না। সমগ্র পৃথিবীর ঘৃণার দায়মুক্ত করতে তারা নিজেরাই বাধ্য হতো সেই হায়েনাপনার বিচার করতে।
এতদিন আমরা ঘৃণা পুষে রেখেছি। এবার একটা সুযোগ এসেছে পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের মাঝখানে ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটানোর। বিশ্বকাপ। পৃথিবীর যাবতীয় মিডিয়া এবার বাংলাদেশে আসছে। এবার স্টেডিয়ামে যারা খেলা দেখতে যাবে, তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।
এমন হলে কেমন হয় ? "প্লিজ আফ্রিদি, ম্যারি মি" এর বদলে এবার সকলে মিলে বিশাল বিশাল কাগজ, প্ল্যকার্ড, ব্যানারে লিখে নিয়ে যাবো "পাকিস্তান, উই হেট ইউ, স্টিল উই হেট ইউ পাকিস্তান ফর ১৯৭১।" এইসব প্ল্যকার্ড, ব্যানার নিশ্চয়ই ক্যামেরার চোখে পড়বে। ক্যামেরার চোখ মানে পাকিস্তানের লাখ লাখ চোখ, বিশ্বের কোটি কোটি চোখ। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটানোর এটাই সময়।
ব্লগারদের মধ্যে যারা খেলা দেখার টিকিট পেয়েছেন, আমার একান্ত অনুরোধ, আপনারা কাজটা করুন। প্লিজ করুন। এই সুযোগ একবার পাওয়া গেছে, এটার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। একটি ছক্কা, একটি চারের আনন্দ- উল্লাসের আড়ালে যেন ঢাকা পড়ে না যায় আমাদের স্টেডিয়াম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া মুক্তিযোদ্ধা রিকশাওয়ালাটির ক্ষুধার কান্না।