ছিলো রঙচটা পুরোনো খাতায় কিছু গল্প
হলুদ কাগজে লেখা শ্বেত শুভ্র অনুভূতি
কত হাসি কান্নারা শুকিয়ে যাওয়ার আগেই
ঠাই নিয়েছিলো মলাটে বাধানো খাতায়
সকাল বেলায় ঘুম ভেঙে মনে জাগা অভিযোগ
দুপুরের রোদে মাঠে দাপিয়ে বেড়ার বিদ্রোহী অনুভূতি
বিকেলের কোলাহল আর সন্ধ্যার ঘরে ফেরা
সবটুকু লেখা ছিলো সস্তায় পাওয়া কাগজে
কত আবেগে ঠাঁসাঠাসি করে লেখা একেকটা শব্দ
হয়ত এতটা ঠাঁসাঠাসিতে সখ্যতা হয়েছিলো শব্দের মাঝেও
শীতের ছুটিতে মাঠঘাট কাপিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সেই টুকরো অনুভূতি
ভোরের কুয়াশায় ভেজা খেজুরের রস
ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠা, গায়ে সোয়েটার জড়িয়ে উনুনের পারে ভীড় করা
সেইসব গল্পেরা লেখা ছিলো রঙচটা মলিন খাতাটায়
প্রতিদিন ভোরবেলা আজানের সুরে ঘুম ভাঙা,
দলবেধে মক্তবে যাওয়া, সমস্বরে চিৎকার দিয়ে পড়া "আশশাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু... "
আরো কত কি লেখা ছিলো একসময়ের চকচকে খাতাটায়
দুপুরের ঝাঁঝালো রোদ আর মায়ের বকুনি উপেক্ষা করে খাশ পুকুরে ঝাপিয়ে পড়া
ঘন্টার পর ঘন্টা হাসের মত ডুবানোর শেষে রক্তচক্ষু নিয়ে বাড়ি ফেরা
আরেকবার বকুনি, শেষমেশ গরম ভাতের থালায় গিয়ে থেমে যাওয়া অভিযোগ
হয়ত সেসবও লেখা ছিলো এক ফাঁকে
বাধ্য ছেলের মত ঘুমোতে যাওয়ার অভিনয়ে চুপিচুপি বেড়িয়ে পরা দুরন্তপনায়
একেকটা বিকেল যেন অসীম অফুরন্ত উচ্ছাসের ভান্ডার
একেকটা সন্ধ্যায় অপূর্ণ গল্প নিয়ে বাড়ি ফেরা
ক্লান্তিটুকু ঝেড়ে নিয়ে গরম গরম চায়ের পেয়ালায় ফু তুলে
পড়ার টেবিলের আবছা হ্যারিকেনের সলতে বাড়িয়ে দেওয়া
পড়াশোনার অত্যাচারকে মনে মনে বকুনি দিয়ে, চোখের পানি নাকের পানি এক করা একেকটা দীর্ঘরাত
সেইসব গল্পও আছে কোন জোড়া লাগা পৃষ্ঠায়
কত সতেজ দিনের কাচা কিন্তু স্পষ্ট বর্ণনা
একসময়ের দিনলিপি আজ যাকে বলে ডায়েরী
যার প্রতিটা পাতায় এক সময়ের দুরন্তপনা
আজ বয়সের ছাপ পরেছে সেই খাতাটায়ও
হলুদ কাগজে অনেক লেখাই অস্পষ্ট
কিন্তু, সেদিনের অনুভূতিগুলো আজও সতেজ ক্ষতর মত আছে হৃদয়ের কোথাও
সেই শৈশব, সেই দুরন্তপনা, মনের ভেতরে আজও হয়তো আছে তখনকার মতই
রঙচটা খাতায় ভর করে আরেকবার ঘুরে আসি সেই দুরন্ত দিনগুলোতে।
বিনিয়ামীন পিয়াস
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪০