(১) ইসকনের ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছে "জীবন আসে জীবন থেকে" এবং "কৃষ্ণভক্তি সর্বোত্তম বিজ্ঞান" গ্রন্থ দুটি। এই ২টা বই পাঠ করলে দেখা যায় ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য স্বামী প্রভুপাদ তাঁর শিষ্যদের ভাষায়, বর্তমানকালের বিজ্ঞানের দর্শন হচ্ছে ‘কূপমণ্ডূক দর্শন’, বিজ্ঞানীরা মহামূর্খ, নির্বোধ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করা কতগুলি কুয়োর ব্যাঙ, বিকৃত মস্তিষ্কধারী, কুকুর, শূকর, উট, গাধার থেকে কোনো অংশে উন্নত নয়। বিজ্ঞানীরা বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চাচ্ছে।
(২) অভয় চরণ এবং শিষ্যদের মারাত্মক অভিযোগ আধুনিক বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীরা কেন ভগবানের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না? কেন ভগবানকে নিয়ে গবেষণা করেন না, আত্মার অস্তিত্ব মেনে নেন না, বেদ-গীতার বক্তব্যে আস্থা রাখেন না, বেদ-গীতাসহ অন্যান্য হিন্দুধর্মীয় পুস্তককে কেন বিজ্ঞানের গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন না?
(৩) "জীবন আসে জীবন থেকে" বইয়ের ১৪-১৫ পৃষ্ঠায় বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে এটা হচ্ছে ‘গর্দভের নোবেল পুরস্কার’। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরা হচ্ছেন একেকজন বিকৃত মস্তিষ্কধারী, কুকুর, শূকর, গাধা। আর নোবেল কমিটির সদস্যরা পশুর থেকে উন্নত নয়, এক নম্বরের মূর্খ।
অভয়বাবু ‘নোবেল পুরস্কার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এভাবে, “একটি পশু আর একটি পশুর স্তব করছে, এতে কি কৃতিত্ব রয়েছে?...”
আবার "কৃষ্ণভক্তি সর্বোত্তম বিজ্ঞান" বইয়ের (পৃষ্ঠা ৫৬-৫৯) "নোবেল পুরস্কার" নিয়ে একই বক্তব্য রয়েছে : ‘মূর্খদের জন্য নোবেল পুরস্কার।’ অথচ সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, (নোবেল পুরস্কার নিয়ে এতো কুৎসিৎ গালাগালির পরেও) শ্রীল অভয় চরণাবিন্দ ও তার শিষ্যরা অনুসারীরা "লাজলজ্জার মাথা খেয়ে" দাবি জানিয়েছেন, ‘ভগবানকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হোক’!
এমন কী ইসকনের গুরু শ্রীল অভয় চরণাবিন্দ প্রভুপাদকে নোবেল দেয়ার দাবি তুলেছে তার শিষ্যরা। (দ্রষ্টব্য : "কৃষ্ণভক্তি সর্বোত্তম বিজ্ঞান", পৃষ্ঠা ১৮৭, ১৮৯)।
(৪) "জীবন আসে জীবন থেকে" বইয়ের পৃষ্ঠা ৪-এ শ্রীল অভয় চরণাবিন্দ বলেন : “সমস্ত জড় বস্তুই হচ্ছে পাঁচটি স্থূল পদার্থ (মাটি, জল, আগুন, বায়ু এবং আকাশ) এবং তিনটি সূক্ষ্ম পদার্থ (মন, বুদ্ধি এবং অহংকার)-এর সমন্বয়”। এরপর তার শিষ্য করন্ধর বলেন : “বৈদিক জ্ঞান অনুসারে জড়শক্তির প্রথম প্রকাশ হচ্ছে অহংকার। তারপরে তা বুদ্ধিতে পর্যবসিত হয়, তারপরে মনে এবং তারপর আকাশ, বায়ু, আগুন, জল এবং মাটি এই স্থূল উপাদানগুলিতে রূপান্তরিত হয়। এই সবকটি মৌলিক উপাদান দিয়েই জড় জগতের সৃষ্টি হয়েছে...।”
বিশ্বপ্রকৃতির গঠন-কাঠামো জানতে আমাদের পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয়। অধাত্মবাদী বা ভাববাদীদের ব্যবহৃত ভাষা-পরিভাষা থেকে কোনো বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না। বিশ্লেষণী জ্ঞানও আহরিত হয় না। গোঁজামিল আর ধোঁয়াসার সৃষ্টি হয়।
তাই এ আলোচনায় আমাদেরকে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। বিজ্ঞানের আলোয় দেখতে চাচ্ছি ইসকনের বৈদিক জ্ঞানের রূপ।
মৌলিক পদার্থের সংজ্ঞা কী? কিংবা যৌগিক পদার্থ কাকে বলে? যারা জানেন না, কোনগুলো মৌলিক পদার্থ, কোনগুলো যৌগিক পদার্থ, বস্তু এবং শক্তির গঠন-ধর্ম নিয়ে যাদের মধ্যে নবম-দশম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞানের জ্ঞানের অভাব দেখা যায়, তাঁরাই নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীদের সবক দিচ্ছেন।
এজন্যই হয়তো কবি জীবনানন্দ দাশ বলে গেছেন :
“অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা”
তথ্যসূত্র: যুক্তি
Click This Link
পরিশিষ্ট: আমাদের আমিনীও বোধহয় এই পাদের চেয়ে অনেক ভাল পজিশনে রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:০২