-মুফতী এস. আহমদ।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত হিসেবে সর্বত্র হাযির-নাযির এবং জাত হিসেবে আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় যে কোন সময়, যে কোন স্থানে স্ব-শরীর বা মেছালী শরীর মুবারকে হাযির হতে পারেন ও হয়ে থাকেন এবং নাযির বা সবকিছু দেখেন। অর্থাৎ উনাকে এ ক্ষমতা বা ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, তিনি যখন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা হাযির হতে পারেন এবং যা ইচ্ছা তা নাযির বা দেখতে পারেন। এ আক্বীদাই সকল মুসলমান নর-নারীকে পোষণ করতে হবে। এর খিলাফ আক্বীদা পোষণ করা সুস্পষ্ট গুমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার হাযির ও নাযির সম্পর্কে বুঝতে হলে, প্রথমেই বুঝতে হবে আল্লাহ পাক উনার হাযির-নাযির হওয়া সম্পর্কে।
মূলত আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক ইলম ও কুদরতের দ্বারা হাযির ও নাযির। জাত হিসেবে নন।” যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ পাক) সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।” (সূরা হা-মীম সিজদা-৫৪)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত যত কিছু আল্লাহ পাক, উনার কায়িনাতে আছে তা সবই কুদরতীভাবে আল্লাহ পাক, উনার বেষ্টনীতে রয়েছে। আল্লাহ পাক, উনার ক্ষমতা বা কুদরতের বাইরে কোন কিছু নেই। সুতরাং আল্লাহ পাক ইলম ও কুদরতের দ্বারা সমগ্র কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির।
এ প্রসঙ্গে তাজুল মুফাসসিরীন, শাইখুল উলামা আল্লামা ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন' আহকামুল কুরআন লিল আরাবী”-এর ১ম জিঃ ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ পাক) উনার ইলম ও কুদরতের দ্বারা সমস্ত স্থানে রয়েছেন।”
পক্ষান্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাযির ও নাযির হওয়ার সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, তিনি আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় নূর ও রহমত অর্থাৎ ছিফত হিসেবে সর্বত্র হাযির-নাযির।”
এ প্রসঙ্গে প্রথমত: আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমস্ত আলমের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া-১০৭)
আর আমার রহমত সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে।” (সূরা আ’রাফ-১৫৬)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক, উনার রহমত নেই এমন কোন স্থান উনার কায়িনাতের মধ্যে কোথাও নেই। সুতরাং রহমত হিসেবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবকিছুতে বিরাজমান তথা হাযির।
দ্বিতীয়ত: হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আমার নূর থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।” (দাইলামী শরীফ) অর্থাৎ নূর হিসেবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বত্র ব্যাপৃত বা হাযির।
আল্লাহ পাক ব্যতীত যত কায়িনাত বা মাখলূকাত আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন, তা সবই নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা সৃষ্টি। সুতরাং নূর হিসেবেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার অস্তিত্ব মুবারক সমস্ত কায়িনাতে রয়েছে।
তৃতীয়ত: আল্লাহ পাক, উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাত হিসেবেও যে কোন সময় যে কোন স্থানে স্বশরীর মুবারকে বা মেছালী শরীর মুবারকে হাযির হতে পারেন বা হয়ে থাকেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বরচিত মাদারিজুন নুবুওওয়াত” গ্রনে'র ২য় খণ্ড ৪৫০ পৃষ্ঠায় হায়াতে আম্বিয়া শীর্ষক পরিচ্ছদে উল্লেখ করেন, এরপর যদি বলা হয় যে, আল্লাহ পাক তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার পবিত্র শরীর মুবারকে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন ও এমন এক শক্তি দান করেছেন যে, তিনি যেখানে যেতে ইচ্ছা করেন সেখানে প্রকৃত শরীরে অথবা মিছালী কোন শরীর ধারণ করে অনায়াসে গমন করতে পারেন। সেটা আসমানের উপর হোক অথবা যমীনের মধ্যে হোক অথবা কবরের ভিতরে হোক। এ সবই সঠিক ও বাস্তবসম্মত। তবে, সর্বাবস্থায় রওযা মুবারকের সাথে বিশেষ সম্পর্ক বজায় থাকে।”
তাফসীরে রুহুল বয়ান” কিতাবে সূরা মুলুকের শেষে বর্ণিত আছে, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক, উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের রূহ মুবারকসহ জগতে পরিভ্রমণ করার ইখতিয়ার রয়েছে বিধায় হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাকে দেখে থাকেন।”
হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, খোদায়ী নূরে আলোকিত অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জাগ্রত অবস্থায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও ফেরেশতা উনাদেরকে দেখতে পান, উনাদের সাথে কথাবার্তাও বলেন।”
হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাছিদায়ে নু’মান” নামক প্রশংসামূলক কাব্য গ্রনে' বলেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখনই আমি কিছু শুনি; শুধু আপনার প্রশংসাই শুনি আর যখন কোন দিকে তাকাই তখন আপনি ছাড়া আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় না।” (সুবহানাল্লাহ)
হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কূফা নগরে অবস্থানকালীন চতুর্দিকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেতেন।
ফতহুল কবীর” ১ম খণ্ড ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হযরত ত্ববরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আল্লাহ পাক এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত হবে তদসমূহকে এমনভাবে দেখি যেন তা সবই আমার হাতের মধ্যে।” অর্থাৎ তিনি আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির ও নাযির অর্থাৎ সবকিছু দেখেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রকৃত শরীর মুবারকে বা মেছালী শরীর মুবারকে তাশরীফ আনয়ন করতে পারেন এবং করেও থাকেন। তবে একথা সর্বসিদ্ধ যে, এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ইখতিয়ারের মধ্যে। তিনি কারো অধীন নন। তিনি একমাত্র আল্লাহ পাক, উনার অধীন।
(বিঃদ্রঃ- এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।)
Click This Link