ভারত মহাসাগরে যতগুলো দ্বীপরাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের শক্তিশালী রাষ্ট্র মাদাগাস্কার অন্যতম। রাষ্ট্রীয় নাম রিপাবলিক অব মাদাগাস্কার। রাজধানীর নাম আন্টানানারিভো। আয়তন ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১ বর্গ কি.মি.। লোকসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। বর্তমান নাম রিপাবলিক অব মাদাগাস্কার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর পূর্ব নাম মালাগাছি।সে কারণে মাদাগাস্কারে অধিবাসীরা অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে মালাগাছি, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষা ব্যবহার করে।
১৯৬০ সালের আগে আফ্রিকা মহাদেশের মনোরম ও আকর্ষণীয় এ দেশটিকে শাসন করত ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্র ফ্রান্স। ১৯৬০ সালের আগে মাদাগাস্কার মালাগাছি হিসেবে সবার কাছেই পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালের ২৬ জুন মালাগাছি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মাদাগাস্কার।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আজ থেকে প্রায় ৮০ মিলিয়ন বছর আগে মাদাগাস্কার বা মালাগাছি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অধীনে একটি দ্বীপ। পরবর্তীতে এই দ্বীপ উত্তর আফ্রিকা মহাদেশের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে ৫০০ বছর আগে এ দ্বীপে লোকবসতি গড়ে ওঠে। মাদাগাস্কারের দক্ষিণে রয়েছে মরিসাস, পূর্বে সিসিলি, উত্তরে মোজাম্বিক ও পশ্চিমে দক্ষিণ আফ্রিকা।
পৃথিবীর প্রাচীন এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজা, রানী, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শাসন করেছেন। আন্তরিয়ান পনিমি নামক রাজা শাসন করেছেন ১৭৯৫ থেকে ১৮১৯, রেডামা শাসন করেছেন ১৮২০ থেকে ১৮২৪, রানী রানাভালোনা শাসন করেছেন ১৮২৮ থেকে ১৮৬১, রেডামা (২) শাসন করেছেন ১৮৬১ থেকে ১৮৬৩
এবং রানী রানাভালোনা (৩) শাসন করেছেন ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত। মাদাগাস্কারে রয়েছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। এখানকার প্রধানমন্ত্রীই সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতোই মাদাগাস্কারের রাজনীতি পরিচালিত হয়। মাদাগাস্কার ৬টি প্রদেশ এবং ২২টি অঞ্চলে বিভক্ত। প্রদেশগুলো ১১৬টি জেলায় বিভক্ত।
প্রতিটি প্রদেশে উপ-প্রধান রয়েছে। যারা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ সাপেক্ষে প্রদেশ পরিচালনা করেন। ভূ-প্রকৃতির দিক দিয়ে মাদাগাস্কার পৃথিবীর ৪৬তম বৃহৎরাষ্ট্র আর দ্বীপ হিসেবে চতুর্থ রাষ্ট্র। মাদাগাস্কারের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সোনালি পাহাড়। সেসব পাহাড়ের গায়ে সূর্যের আলো পড়লে অস্বাভাবিক সুন্দর লাগে দেশটির প্রকৃতি। পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে সবুজ ঘাস ও নাম না জানা হাজারো পাহাড়ি গাছগাছালি । প্রকৃতি, বৃক্ষরাজি, পশুপাখি, পাহাড়, ঝরনা, টিলা ও নানা আয়োজনে মাদাগাস্কারকে সাজালে অপরূপ লাগবে যে কারও।
মাদাগাস্কারে রয়েছে ১০ হাজার প্রজাতির গাছগাছালি ও ছোট-বড় প্রায় ১ হাজার বন। বনের মধ্যে রয়েছে পাখুরে বন, স্যালোন বন, টিসিনজি নামক বৃক্ষের বন, মাদাগাস্কারে প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বিরল প্রজাতির ইন্ডি, লিমুর, বানর, হনুমান, শিম্পাঞ্জি, বাঘ, শিয়াল, হরিণ ও নাম না জানা হাজারও প্রাণী। মাদাগাস্কারের ধনী-গরিবের অনুপাত প্রায় সমান। বাড়িঘরগুলো পাহাড় কেটে তৈরি বিধায় ছোট ছোট, দূর থেকে দেখতে দ্বীপের মতো মনে হয়।
প্রাচীন এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সাক্ষরতা হার ৪৭ শতাংশ। অধিকাংশ অধিবাসীই খ্রিস্টান। তবে মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের লোকও রয়েছে। স্থাপত্য শিল্পের দিকে তাকালে দেখা যায়, মাদাগাস্কারের মোড়ে মোড়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপত্য। এ থেকে বোঝা যায়, জাতি হিসেবে মালাগাছিরা স্থাপত্যবিদ্যায় পারদর্শী ছিল। সবদিক বিবেচনায মাদাগাস্কার পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন দেশ হিসেবে বিবেচিত।
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ।।