ও আমার বন্ধু ছিল,
রানা খালকো
বেগম রোকেয়া শিশুনিকেতনে কিছুদিন একসাথে বিদ্যা নেয়া
অদ্ভূত সারল্যের এক বালক দেবতা,
দীঘীর ওপারের সাঁওতাল পাড়া থেকে সাত সকালে
কয়েক কিলো রাস্তা খালি পায়ে হেটে,
কালচে সাদা শার্ট চেপে গায়ে,
কখনো ছেঁড়া ব্যাগে কখনোবা পুরনো বইগুলো হাতে নিয়ে,
অনাহার ভুলে-
এই আদিবাসি বালক ছুটে যেত রোজ- পাঠশালে।
তারপর কিভাবে যেন আবার লুকিয়ে গেল অগোচরে
কেউ খুঁজেও দেখল না!
হয়তো বেতন বাকি জমেছিল, পরীক্ষার ফি হয়তোবা ছিল না-
আমাদের বাহারী ব্যাগ ছিল, নতুন জুতো ছিল, ছিল রংগিন মার্কার
প্যাস্টেল, ষোল-বি পেন্সিল, রং-তুলি সবই ছিল-
শুধু বাপেদের অভাব ছিল না,
আমাদেরও ছিল না- ওই সাঁওতাল ছেলেটার মতো অদম্য বিদ্যা বাসনা!
ওর মলিন মুখে আদর আদর মায়া ছিল,
আরো ছিল-
স্বপ্ন দেখার দীপ্ত আভা,
আমাদের চঞ্চল উল্লাসে তা হয়তো কারো চোখেই পড়ত না!
ওর যে ছিল মলিন জামা, শীতের ঠোটে পমেট ছিল না-
দুপুরের জন্য টিফিন ছিল না,
বাবার পকেট কেটে আনা উপরি পয়সাও ছিল না, হয়তোবা ওর বাবার পকেটই ছিল না!
বালিকাদের অনেকে তাই বালকটির সাথে কথাও বলত না।
আমাদের সাথেও ও কখনো খেলতে আসত না!
লালচে পাকা ফল কুড়াতো- বকুঁল তলা- একলা একা,
ওকে হয়তো কেউ বন্ধুই ভাবত না !
কিন্তু-
এসব নিয়ে ওর কোন অনুযোগই ছিল না- ও যে ছিল বালক দেবতা !
আমদের পাঠশালে বেত ছিল- বেতানোর জন্য বেতক ছিল, বেতন নেয়ার রশীদ ছিল- হয়তো শুধু বোধ ছিল না!
তাই নিরবে হারিয়ে গেল- বালকটির- অদম্য বিদ্যা বাসনা !!