বন্ধূ চয়নকে ফোন দিয়েছিলাম বহুদিন পর- চিনতেই পারেনি।
নাম বললাম- ভালো নামটা, যে নামে স্কুলে প্রতিদিন উপস্থিতি ডাকত রেবেকা আপা
সেই নামটাই বললাম, ডাক নাম অবশ্য ইচ্ছে করেই বলিনি
নাহ! বন্ধু আমাকে চিনতেই পারেনি।
সময়ও অবশ্য কম গড়ায়নি, এক যুগেরও একটু বেশী।
আমার আবেগ এখনো কাঁচা কিন্তু বন্ধুরা কেউ মনে রাখেনি।
যাই হোক, চয়নের কথা বলছিলাম।
ফাল্গুনের নতুন বাতাসে আজিজের দুই তলায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে চয়নকে একবার ফোন দিলাম-
স্নাতক শেষ, সময় হাতড়ে বাল্য বেলায় একবার ফিরে গিয়েছিলাম
পিছু ফেলা দিনগুলোতে প্রাণ এলো, খুব জীবন্ত মনে হল-
ইচ্ছে হলো অতীত ঘেটে সুখ খুঁজবার
আর কারো নম্বর পেলাম না, তাই চয়নকেই ফোন দিলাম আবার।
পবিত্র কোথায় আছে ? জানতে চাইলাম-
চয়ন বলল, কারমাইকেলে। চমকে গেলাম ! একেবারেই চমকে গেলাম !
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান ছিল সে- অনেক ভালো কোথাও ওকে আশা করেছিলাম
ঝিনুকের খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম- মেয়েটার বিয়ে হয়েছে কিছুদিন আগে।
অথচ আমাদের ভিতর সবচেয়ে পিচ্ছি ছিল ও,
একদম ছোট।
খুবই ছোট- টুনটুনি পাখির মতো একটা মেয়ে
অথচ-
এখন রীতিমত সংসার পেতেছে,
বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে। বন্ধুরা ব্যস্ত, সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যার যার মতো আছে
আর আমি- হঠ্যাৎ কী মনে করে- জীবন্ত ভেবে ভুল করি- বাল্যস্মৃতিকে।
দ্বিপ, দেবাশিষ, অমিতাভ, রুকু সবার খবর পেলাম- ওই চয়নই আমাকে বলল।
এতোক্ষণ পরেও সে চিনতে পারেনি আমাকে-
শুধু বলে গেল অবাক হয়ে- 'এতকিছু আপনি জানেন কিভাবে?
আমি নিরবে হাসি, মনের বেদনারা ডানা ঝাপটায় , পালক ঝড়িয়ে নিঃসঙ্গতা উড়ে যায়-
কী আর বলব, বন্ধু তো আমাকে চিনলই না।
একযুগ তো আর কম সময় না !
রানাখালকোকেও ও চিনতে পারেনি
ওই যে- দীঘীটার ওপারে সাওতালপাড়ায় ওর বাসা। এক ঝড়ের দিনে প্রায় তিনকিলো রাস্তা দৌড়ে
আমার কোয়ার্টারের সামনে খালি গায়ে খালি পায়ে ঝুমভেঁজা হয়ে দাড়িয়ে
সে কী আহ্লাদ ছেলেটার-
'ভিজতে হবে, আয় চলে আয়- বিষ্টিতে ভিজি রে '
দ্বিধামনে ঘর থেকে বের হয়ে বিষ্টি বাতাসে- আমার সংশয় উবে গেল মিষ্টি পরশে,
আর বন্ধু আমার নাঙ্গা গায়ে নাচে- ইচা-উচা-ঢা-ঢা' বিজলী রেখার সাথে
তারপর মাঝপুকুরে টুপুর টুপুর বিষ্টি ফোঁটা-সাপের সাথে সাঁতার পাল্লা
কী অস্থির দেয়া ডাকা!
মনে পড়ে আমাকে রানা! আমার যে অনেক মনে পড়ে- খালকো, তোর কথা!
কালীমন্দিরে দেবাশীষের আগুন আরতি আমি ভুলতে পারি না,
আরো ভুলিনা ওর কাছে প্রথম শেখা কিছু নিসিদ্ধ কথা, অমিতাভের লাল বাইসাইকেলটা,
শুকনো সুপুরী চিবুতে থাকা পবিত্রর মায়াবী মুখখানা আর মুক্তোদানা হাতের লেখা-
সব স্মৃতি হয়ে গেছে এখন, চঞ্চল দ্বিপ আর শান্ত লিখন- ওরাও হয়তো ভুলে গেছে
কেউই মনে রাখেনি ছোটবেলার রোবোকপ রোবোকপ খেলা- আজকাল কেউ হয়তো কাউকে মনে রাখে না,
টুইটার ফেসবুক মুঠোফোনে হৃদ্যতাগুলো সব সম্পর্কের মরিচীকা ! বিনিময় হয় শুধু হাই-হ্যালো স্বার্থের ভবলীলা-
দরকারের বাইরে আজকাল কেউ হয়তো আর কাউকে মনে করে না-
সে যাই হোক-
একটা যুগ পার হয়ে গেছে! একযুগেরও একটু বেশী- সময়তো আর কম গেল না!
এটাই সান্ত্বনা !!
###################################################
উৎসর্গ- ও আমার বন্ধু ছিল,
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১২ দুপুর ১:০৫