পুরোনো সেই দিনের কথা (ষষ্ঠ বারো)
73. প্রথম বাংলা স্যাটেলাইট চ্যানেল হলো এটিএন বাংলা, এই চ্যানেলে দিনের কিছু সময় বাংলাদেশের অনুষ্ঠান দেখানো হতো, কিছু সময় ভারতীয় বাংলা অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের প্রচার সময়ে স্থুল নাচের সাথে সিগারেটের বিজ্ঞাপন বেশি চলতো।
74. আজিমপুর কবরস্থান রোডে বসতো বৈশাখী মেলা, সেটাই ছিল ঢাকায় একমাত্র মেলা। এখনকার মতো এতো মাতামাতি ছিল না। আগে ১লা বৈশাখ কখনো ১৪ এপ্রিল হতো কখনো ১৫ এপ্রিল হতো। সম্ভবত ১৯৯৪ থেকে ১৪ এপ্রিলেই বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে।
75. ঢাকার পুরোনো এয়ারপোর্ট, বিজয় সরণীসহ দেশের কিছু শহরে রাজপথে সৌন্দর্য বাড়াতে সাজিয়ে রাখা বিমানবাহিনীর বিমানগুলো এক প্রকার অবহেলায় নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। ঘুর্ণিঝড় চট্টগ্রামে আঘাত হানবে জানা সত্ত্বেও সেখান থেকে বিমানগুলো ঢাকার নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হয় নি। প্রচন্ড ঝড়ে বিধ্বস্ত হয় ওগুলো।
76. প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে যত দূর মনে পড়ছে প্রতি রাতে কারফিউ থাকতো রাত ১১টা থেকে ফজর পর্যন্ত।
77. মোবাইলের ফোনের প্রথম যুগে প্রতি মিনিট কথা বলাতে কেটে নেয়া হতো টাকা ৬.৯০। দোকান থেকে কথা বলার চার্জ ছিল মিনিটে ১০ টাকা। পালস ১ মিনিট।
78. নাবিস্কো লজেন্স, নাবিস্কো টফি, নাবিস্কো বিস্কিট, হক বিস্কিট, মিমি চকলেট, পিকনিক ছিল বাচ্চাদের প্রিয়। ললিপপ পাওয়া যেতো টিভি সিরিয়াল ‘কোজাক’ নামে।
79. মানুষের ক্রয় সামর্থ কম ছিল, বলা হতো, মৃত্যুপথযাত্রীর জীবনের শেষ আকাঙ্খা হতো আঙ্গুর ফল খাওয়া। স্পঞ্জ স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে গেলে মুচির কাছে থেকে সেলাই করে নেয়া হতো। নতুন ফিতাও কিনতে পাওয়া যেতো।
80. ব্রয়লার মুরগির বিস্বাদের জন্যে প্রথম দিকে সমাদর কম ছিল; এখন তুলনামূলক কম দামের জন্যে সমাদৃত।
81. হোটেল সোনারগাঁও ও হোটেল সুন্দরবনের পিছে আর রামপুরা টিভি ভবনের পিছনের জায়গা যার নাম এখন বনশ্রী সব ছিল নিচু এলাকা। মাচার ওপর ছিল সারি সারি বস্তিঘর। তখন পান্থপথ ছিল না। পান্থকুঞ্জও তৈরি হয় এরশাদের আমলে।
82. ২০ ফেব্রুয়ারি’৯৮ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফিল্ডিং করার সময় মাথায় আঘাত পান ভারতীয় ক্রিকেটার রমন লাম্বা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ তারিখ তিনি মারা যান। ক্রিকেট বোর্ড তার স্মরণে উইকেটের এক প্রান্তের নাম ‘রমন লাম্বা এন্ড‘ ঘোষণা করেছিল; পরে সেখান থেকে সরে আসে। আরো পরে সেই স্টেডিয়াম থেকেই ক্রিকেট খেলা বাদ পড়ে।
83. বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে বি এন সালাহউদ্দিন জাহাজে চড়ে হজে যাওয়া যেতো। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময় এই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কেন করা হয় আমার জানা নেই। হাজীদের যাতায়াতের জন্যে জাহাজটি দিতেন সৌদি বাদশাহ।
84. শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম টার্মে ঘটেছিল এক আশ্চর্য ঘটনা। রোজার ঈদ নিয়ে। রাত সাড়ে দশটায় ঈদের চাঁদ দেখতে পাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়, মুসল্লীরা তারবীহ নামাজ পড়ে ততক্ষণে ঘরে ফিরেছেন, কেউ কেউ সেহরিতে ওঠার জন্যে আগেভাগে ঘুমিয়ে পড়েছেন, তাদের মাঝে ঈদের সংবাদ জানতে না পেরে কিছু মানুষ সেহরি খেয়েছেন; কিছু মানুষ রোজাদার হিসেবে ঘুম থেকে উঠে জেনেছেন সেদিন আসলে ৩০ রোজা নয় ঈদের দিন। রাতেই যারা জেনেছেন তাদের পদচারণায় শেষ মুহূর্তে কাঁচাবাজার আর শোপিং সেন্টারের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। মনে আছে, আমিও ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম; ছোটো দুই বোন বিটিভির খবরে শুনে জানালে আমি ভেবেছিলাম মজা করছে। দেখি তারা সিরিয়াস। বিছানা ছেড়ে আমাকেও বাজারে দৌড়াতে হলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১১