সময়ে বদলে যাওয়া কিছু বিষয় নিয়েই স্মৃতিকণা লিখছি এখানে কালের ধারাবাহিকতা সচেতনভাবে এড়িয়ে। এ লেখা একান্তই নিজেকে খুঁজে পাওয়ারই এক প্রয়াস বলা যায়-
প্রথম বারো
দ্বিতীয় বারো
তৃতীয় বারো
চতুর্থ বারো
পঞ্চম বারো
61. বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান প্রকল্প সংক্ষেপে বিকল্প নামে ইউনিভার্সিটি পাস ছাত্রদের স্ব-কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তৎকালীন জনতা ব্যাংকের এমডি লুৎফর রহমান সরকার। পরে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও হয়েছিলেন। প্রথম প্রকল্প হিসেবে বাস নামানো হয়, প্রথম দিকে চালক হিসেবে ছাত্ররাই ছিল। বিকল্প সার্ভিস নামে সেই বাসের রুট ছিল মিরপুর ১২-মিরপুর ১-নিউমার্কেট-গুলিস্থান-সায়েদাবাদ।
62. বাসা-বাড়ির গৃহস্থালী আবর্জনা ঢাকার অলি-গলি-পথেই ফেলে রাখা হতো। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সেগুলো মূল ডাস্টবিনে রাখতো। তবে অধিকাংশ সময় ময়লা আবর্জনা ১/২ দিন পড়েই থাকতো। দুর্গন্ধ-জীবাণু ছড়াতো চারপাশে। এখন আমরা পাড়া-মহল্লায় ভ্যান-গাড়িতে ময়লা প্রদানের যে ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়েছি সেটা প্রথম উদ্যোগী হয়ে শুরু করেছিলেন কলাবাগান এলাকার বাসিন্দারা।
63. সফট ড্রিংক একমাত্র ২৫০মিলির কাঁচের বোতলেই পাওয়া যেতো, সেই বোতল বাসায় আনতে হলে জামানত রাখতে হতো, খালি বোতল ফেরত দিলে জামানতের টাকা ফিরিয়ে দিতো দোকানী।
64. দোকানে দোকানে পাওয়া যেতো ইগলু আইসক্রিম, এরপর আসে পোলার। পোলারের চকবারের দাম প্রথমে ছিল ৭ টাকা। ঢাকায় এক সময় বিখ্যাত ছিল বেবী আইসক্রিম।
65. চিনি-দুধ-চাপাতা-তেল ইত্যাদি প্রয়োজনে প্রতিবেশীর কাছে থেকে ধার আনা যেতো কাপে করে।
66. রান্নায় সরিষার তেলই ব্যবহৃত হতো। সয়াবিন তেল আসে পরে। সাদা তেলে রান্নায় অনীহা ছিল রাধুনীর।
67. ছোটোরা পেন্সিলে লিখতো, বড়রা ব্যবহার করতো ফাউন্টেন পেন, কালি হিসেবে প্রিয় ছিল ‘ইয়ুথ’ ব্র্যান্ড। বলপেন বেশি চলতো জাপানী রেডলিফ; দাম ছিল ৮ টাকা। পরে এলো ৩ টাকায় ইকোনো বলপেন। বলপেনে লিখলে হাতের লেখা খারাপ হয়ে যায় বলে যারা এড়িয়ে চলতো তারাও ইকোনো ব্যবহার আরম্ভ করে।
68. একুয়ারিয়াম ফিসের একমাত্র দোকান ছিল আমার জানামতে এলিফ্যান্ট রোডে এখনকার মল্লিকা মার্কেটের বিপরীতে। কাঁটাবনের ফুল, পেটসপ ও মাছের দোকানের জায়গায় ছিল সারি সারি বস্তি ঘর।
69. ঢাকায় ফুলের মার্কেট ছিল হাইকোর্টের সামনে। শহরে আর কোথাও ফুল বিক্রি হতো না। বাসর ঘর আর বিয়েতে বরের গাড়ি সাধারনত সাজানো হতো কাগজের ফুল দিয়েই।
70. ঢাকাতে ট্যাক্সি সার্ভিস ছিল, কালো বডি আর রুফ টপ হলুদ রঙ নিয়ে গাড়িগুলো চলতো। গাড়ির জন্যে যেতে হতো সোনারগাঁও হোটেলের পূর্বের স্টান্ডে। সিএনজি অটোরিক্সার আগে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতো বেবিট্যাক্সি নামে ত্রিচক্রযান।
71. এরশাদের আমলে প্রতিটি বাসের ছাদেও লেগেছিল হলুদের ছোঁয়া; বাস রুটের ভিন্নতা অনুযায়ী বডির রঙ ছিল ভিন্ন। সহজেই জানা যাতো কোন বাসের গন্তব্য কোথায়।
72. দেশকে বিদেশী অতিথিদের কাছে ইসলামী লেবাস দেয়ার জন্যে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সরকারী ও ব্যক্তিগত বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ডিজাইনে গম্বুজ আকৃতি আনা হয়েছিল এরশাদের সময়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:১৮