তৃতীয় বারো
37. খুব ছোটোবেলায় মানিক মিয়া এভিনিউ এতো প্রশস্ত ছিল না; এখানে অনেক ডিভাইডার ছিল। রিকশার জন্যে ১টি, বেবিট্যাক্সির জন্যে ১টি, গাড়ির জন্যে আলাদা, বাসের জন্যে আরেকটি। পরে সবগুলো ডিভাইডার সরিয়ে ফেলা হলেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে আবার মাঝে একটি বসানো হয়েছে।
38. আমার একটি ইয়াশাকি ক্যামেরা ছিল, ফিল্ম এর ক্যামেরা। ফটো তোলার শখে বেশ খরচা হতো। ফিল্ম কিনতে হতো যা থেকে ৩৬ ছবি তোলা যেতো। এরপর নেগেটিভ ডেভেলপ-ওয়াস শেষে ফটো প্রিন্ট করার পরই আলোর মুখ দেখতে পেতো। কত দিন এমন হয়েছে ফিল্ম ঠিক মতো সেট না হওয়ায় রিল ঘুরে নি একটাও ছবি উঠে নি। আবার লেন্সের কাভার না খোলাতেও ফিল্ম নষ্ট হয়েছে।
39. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা নামে নয় আমাদের ছেলেবেলায় আরো ক্ষুদ্র পরিসরে হতো রপ্তানী মেলা। চন্দ্রিমা উদ্যানে হওয়া এক মেলা থেকে ফেলুদার বই কিনেছিলাম মনে আছে। অমর একুশে বইমেলায় প্রতি বছর যেতাম, শিশু একাডেমীর নানা বই কিনে আনতাম।
40. মিষ্টি আর দই এর জন্যে বিখ্যাত ছিল মরণ চাঁদ এন্ড সন্স, স্পঞ্জ রসগোল্লা প্রথম আনে আম্বালা সুইটস, এলিফ্যান্ট রোডের রুবি কনফেকশনারিতে টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যেতো।
41. সেবা প্রকাশনীর রহস্য পত্রিকা, কিশোর গোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিক, ওয়েস্টার্ন সিরিজ, কুয়াশা, মাসুদ রানা খুব পড়তাম। নতুন ‘উন্মাদ’এর জন্যে কি অপেক্ষায় না করতাম!। ভারতীয় ইন্দ্রজাল কমিকস, আনন্দমেলা পড়তাম নিয়মিত। আনন্দমেলায় প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনে প্রথম দেখেছিলাম কিশোরী ঐশ্বরিয়া রাই-কে।
42. ঘরে বসেই মুভি দেখার জন্যে ভিসিআর ও ভিসিপি’র কদর ছিল বেশ। রঙ্গিন টিভিসহ এগুলো ভাড়া নেয়া যেতো ঘন্টা হিসেবে। হিন্দি সিনেমা ছোটোবেলায় দেখার সুযোগ ছিল কম; বাঙ্গালী বলে মিঠুন চক্রবর্তীকে ভালো লাগতো। ডিস্কো ড্যান্সার আর ড্রিম গার্ল দেখেছিলাম সে সময়।
43. ছেলেবেলায় খুব কম বাসায় টিভি ছিল, সেটাও ছিল সাদাকালো। বহু বাসায় কাঠের বক্স-টেবিলে টিভিসেট তালাবদ্ধ করা রাখা হতো।
44. একদম ছেলেবেলায় খুব প্রিয় কার্টুন ছবি ছিল ক্যাসপার, কুমকুম। দেখতে ভালো লাগতো হাওয়াই ফাইভ’ও, সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, বায়োনিক ওমেন, হার্ট টু হার্ট, টারজান, স্পেস নাইনটি নাইন, স্টার ট্রেক সিরিয়াল; সেটারডে নাইট সিনেমা আর ওয়েজনেজডে নাইট সিনেমায় ইংলিশ মুভি দেখানো হতো। পরে এসেছিল কার্টুন স্পাইডার ম্যান, ব্যাড ম্যান, স্কুবিডু, থান্ডার ক্যাটস, নিনজা টার্টলস, মগলি, ইংরেজি সাপ্তাহিকে দেখানো হতো দি লিটল হাউজ অন দি প্রেইরী, সুইস ফ্যামিলী রবিন্সন, দি ওয়াটসন, ওয়ান্ডার ওমেন, দি পাওয়ার অব ম্যাথুস্টার, ম্যাকগাইভার, নাইট রাইডার, রবোকপ, ডার্ক জাস্টিস, দি এ টিম, সুপার ম্যান আর বড়দের জন্যে ছিল ডালাস, ডাইনেস্টি সিরিজ। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময় বিটিভি রঙ্গিন পোশাক পড়ে।
45. নতুন কুঁড়ি বিটিভির জনপ্রিয় প্রোগ্রাম ছিল, শুরুতেই আমরা নতুন আমরা কুঁড়ি গানের সাথে কিছু শিশুকে দেখানো হতো সেখানে কয়েক বন্ধু থাকায় আরো ভালো লাগতো। ‘এসো গান শিখি’ ছিল আমাদের আরেকটি প্রিয় অনুষ্ঠান।
46. প্রথম দিকে বিটিভিতে রাত আটটায় ইংলিশ নিউজ প্রচার হতো; রাত ন’টায় বাংলা সংবাদ। ব্যাপ্তি ছিল ২৫-৩০মিনিট।
47. বিটিভির ধারাবাহিক সকালসন্ধ্যা দর্শকপ্রিয় ছিল, খালেদ খান যুবরাজ অভিনয় করেন রায়হান চরিত্রে ও এনাম আহমেদ তার বাবার ভূমিকায়। দু’জনই ছিলেন খলচরিত্রে। স্ত্রী সাকেরা (রিনা সুলতানা)র সাথে বাজে ব্যবহার শিশুমনে নাড়া দিয়েছিল বেশ।
48. ১৯৮৫ এর অক্টোবরের ১৫ তারিখ বৃষ্টির রাতে ধারাবাহিক নাটক শুকতারা দেখতে যেয়ে ঢাবি’র জগন্নাথ হলের টিভি রুমের জরাজীর্ণ ছাদ ধসে ছাত্রসহ ৩৯ জন মারা যায়, পরের দিন দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে এখন অক্টোবর স্মৃতি হল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৪