৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মাঘ মাস, শীতের ভোরে ধীরে ধীরে মানুষ জড়ো হতে থাকে ঢাকাস্থ জাতীয় শুটিং কমপ্লেক্স এ। সেখানে সেদিন ছিলো রূপচাঁদা-সুপারশেফের প্রাথমিক বাছাই ঢাকা পর্ব। সকাল ৮টাতেই অডিটোরিয়ামে আর চেয়ার বসানোর জায়গা ছিলো না। বাইরেও চেয়ার পাতা হয়। অবরোধের দিনে আট শতাধিক প্রতিযোগী আধা ঘন্টার ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। যদিও না কি রেজিস্ট্রেশন করেছিল দুই হাজার জন।
ঘোষণা ছিলো প্রথম ৬০ জনকে দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ করা হবে তবে একই নম্বর একাধিক হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ৭৩ জনের সৌভাগ্য হয় পরের রান্না পর্বে নিজের কারিশমা প্রদর্শনের। প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ৫০০ টাকার মধ্যে ১ ঘন্টায় বাজার শেষ করে ৩০ মিনিটের মধ্যে একটি পদ রান্না করে উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়। রাত ১০টার পর ঢাকা পর্বে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন ৩৫ জন। যারা ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা বাংলাদেশ থেকে আগতদের সাথে দ্বিতীয় পর্বে ঢাকায় রান্নাযুদ্ধে নামবে।
আয়োজকদের উদ্যোগ-উৎসাহ-প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। একইভাবে প্রতিযোগীদের সরল সহযোগিতা ৭ তারিখের আয়োজনকে সফল করতে পেরেছে বলে মনে হয়েছে। কিছু বিষয়ে আয়োজকদের আরো পেশাগত দক্ষতা ও মনোযোগ দেয়া ভালো হতে পারে।
এক, ৬ ফেব্রুয়ারি রাতেও NTV এর পর্দায় স্ক্রল গিয়েছে রেজিস্ট্রেশনের জন্য অথচ ২৮ জানুয়ারিতেই এই সুযোগ শেষ হয়ে যায়। ২৯ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টাকা খরচ করে বার্তা পাঠানোরা অংশ নিতে পারেন নি কিন্তু ৭ তারিখ ওপেন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রেখে প্রকৃত আগ্রহীদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
দুই, লিখিত পরীক্ষায় অবাধে নকল করার সুযোগ ছিলো, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ কেউ সঠিক উত্তর খুঁজে নিয়েছেন।
তিন, বাজার-সদাই ৫০০ টাকার বেশি করা যাবে না বলা হলেও সেটা কেউ চেক করেন নি। একাধিক প্রতিযোগী একত্রে বাজার করে পরে নিজ নিজ চাহিদা মতো সদাই ভাগ করে নেন। ফলে একদিকে তাদের অর্থ সাশ্রয় হয় আবার রান্না ও ডেকোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে পারেন। ফলে তাদের প্রকৃত সদাই এর মূল্য ৫০০টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
চার, একটি নির্দিষ্ট প্রিপারেশন আধা ঘন্টায় শেষ হতে পারে কি না সেটাও মনিটর করার কেউ ছিলো না। কিছু প্রতিযোগী নিয়ম বিরুদ্ধভাবে মাংশ আগেই মেয়োনেড করে রেখেছিলেন, মাছ-চিংড়ির ক্ষেত্রেও একই পন্থা কেউ কেউ নিয়েছেন।
পাঁচ, রান্নার উপকরণ, তৈজসপত্র, চুলার পরিমাণ পর্যাপ্ত ছিলো না।
ছয়, বিচারকরা স্ব স্ব পেশায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন, গতবারের সেরাদের কয়েকজনও খাবার পরীক্ষা করেছেন। তবে সামগ্রিকভাবে মনে হয়েছে, সুপারশেফের প্রাথমিক বিচার প্রক্রিয়াতে তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিলো। এক্ষেত্রে ২ জনের প্যানেল না করে ৪ জনের প্যানেল (পুরুষ ২জন + নারী ২জন) হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরো গ্রহণযোগ্য হতে পারতো।