নিয়ার ডেথ এক্সপিরিয়েন্স এর কাছাকাছি যে মানুষরা গিয়ে আবার ফিরে এসেছে নাকি দেখে তাদের চারপাশের পৃথিবী চোঙ্গের মতো হয়ে আসছে। ত্রিকোণ চোঙ্গ। কোথায় পড়েছিলাম কথাটা ঠিক মনে করতে পারছি না। মনে পড়ার মতো অবস্থায়ও নেই আমি। কারণ আমার চারিদিক না স্যরি তিনদিকে ত্রিমাত্রার হাতছানি। আরেকটি দিককে কেন জানি খুঁজে পাচ্ছি না। আসলে কোন দিন খোঁজার চেষ্টাও করেছি কিনা সেটাও মনে করতে পারছি না। আমি কি সরিসৃপের মতো বুকে ভর দিয়ে এগুচ্ছি? নাকি বাতাসে ভেসে থাকা পালকের মতো? আমি জানি না। কিন্তু আমি এগুচ্ছি সেটা নিশ্চিত। আচ্ছা এটা কি মৃত্যু? আমি কি মরে যাচ্ছি? নাকি মরে গিয়েছি? জীবন আর মৃতের পার্থক্যটাই বা কি? চিৎকার করার ব্যার্থ প্রচেষ্টা গুলো আমাকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে। আশ্চর্য আমি এখনো ক্লান্ত হই! চেতনাকে জাগ্রত রাখার প্রাণপণ প্রচেষ্টা করতে করতে আমি হারিয়ে গেলাম।
কল্পবিলাস:
জেগে উঠে যায়গাটা ঠিক চিনতে পারছি না। দেহনির্ভর আমাকে আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ যেন আমার চেতনাটুকুকে একটা ত্রিকোণ বৃত্তে বন্দী করে দিয়েছে। চেতনার নগ্নরূপ দেখতে আমি চাই না! তিনদিকে তিনটা আয়নায় আমাকে আমি প্রতিফলিত হতে দেখি। প্রথম আয়নাটিতে আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে কিছু একটা। আমি দেখতে চাই না! আমি দেখতে চাই না!
আমি প্রাণপণে ছুটতে শুরু করি। ছুটে কোথায় যাবো আমি জানি না। আমার দেহকে একটু একটু করে খুঁজে পাচ্ছি। আমি একটা আয়নার সামনে বসা। চেহারায় একরাশ হতাশা। অবিন্যাস্ত চুলকে শাসন করতে ব্যাস্ত আমি কাকে যেন বলছি:
- কালো শাড়িতে আমাকে মোটেও মানায় না।
- তোমাকে আসলেই মনিয়েছে।
- অন্ধকারে কিভাবে বুঝলেন? আর আপনি তো আমার দিকে তাকানও নি!
- হা হা হা তাই নাকি! তাহলে আমি কিভাবে জানলাম তোমার কপালের টিপটা কালো?
- কালো শাড়ির সাথে কালো টিপ পড়বো এটা তো সাধারণ জ্ঞান!
- তোমার চশমার ফ্রেমটাও বাকা হয়ে আছে তো!
- আমার চশমার ফ্রেম বাঁকা হয়ে যায় সেটা আপনি জানেন ভাল করেই এটা বলায় কোন নতুনত্ব নেই।
অভিমানী মেয়েটির সাথে সাথে আমার চেতনাও জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাইরে নিশিতে পাওয়া একটি পাখির ডাক শুনে মুগ্ধ হয়ে। ঢেউয়ের মতো ঝলকে ঝলকে ছাতিম ফুলের গন্ধ কোথা থেকে ভেসে আসে। আমি মেয়েটিকে আবছা দেখতে পাচ্ছি যেন এবার। আরো ঝাপসা হয়ে আসছে সে।
মেয়েটি এবার কি ভাবছে? আচ্ছা কেউ কি জানে মেয়েটি ইচ্ছা করেই চশমার ফ্রেম বাঁকা করে পড়েছিলো? কেউ একজন যেন ফ্রেমটা সোজা করে দেয়!
আশ্চর্য হচ্ছি মেয়েটির চেতনায় আমি কিভাবে মিশে গেলাম? নাকি ওটাই আমি? আর এখন কেন তাহলে আমার দেহকে অনুভব করতে পারছি না! দেহবিহীন চেতনার কি মূল্য আছে? আর আমার চেতনা কি তাহলে দেহ থেকে দেহে ঘুরে বেড়াচ্ছে? আর দেহ গুলো কি আমারি?
তন্দ্রবিলাস:
এবার পরবর্তী পর্বের জন্যে আগ্রহী আমি দ্বিতীয় আয়নাটি খুঁজতে লাগি। নিজের বিভিন্ন রূপ দেখার আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠলো। নিজেকে দেখার সৌভাগ্য কয়জনের হয়? হ্যাঁ এটাকে আমি সৌভাগ্য হিসেবেই ধরে নিচ্ছি। দেহ নেই তো কি চেতনা তো আছে!
এবার আমি পালানোর চেষ্টা করি না। কিসের কাছে যেন আপনাতেই ধরা দিই। কোথায় কি? এখানে তো কোন আয়না নেই! এতো বৃষ্টিভেজা ছাদ! ধবল শাড়ি লেপ্টে আছে গায়ে। নীল রংও কি ছিলো কিছুটা? আমি বুঝতে পারছি না। আমার চেতনাকে যেন সমুদ্রের নোনা জলে কেউ মিশিয়ে নিচ্ছে। সোডিয়াম আর ক্লোরিনের রাসায়ানিক বন্ধনের মতো। এ যেন মুক্তি পিয়াসী এক নতুন আমি!
ঝরঝর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চোখর পানি আর বৃষ্টির পানি আলাদা করতে পারছি না! কিঞ্চিত মুক্তি যেন বৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে আমাকে। পুরোটা বৃষ্টি গায়ে মেখে নিতে ইচ্ছা করছে।
বাধন বিহীণ বাঁধন দিয়ে মুক্তিটাকে আমি বাঁধতে চাই! কতক্ষণ ভিজেছি জানি না। বৃষ্টির ধারায় অশ্রুবিন্দু গুলোকে আলাদা করতে পারি না কখনো।
- আপনি ভেজার সময় কাঁদছিলেন কেনো?
আমি চমকে তাকালাম পেছনে। আধো আলো আধো ছায়ায় অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চেহারা। সে যেই হোক সেও ভিজে একসা।
- আপনি কে?
- আশ্চর্য! আমি যে কেউ হতে পারি!
- আচ্ছা।
- এত ভিজেছেন আসুন চা খাওয়া যাক। আমি চা নিয়েই ছাদে উঠেছি।
- আচ্ছা চলুন।
- আপনার হাইট ফোবিয়া আছে তাই না?
- হুম!
- বসার ভঙ্গি দেখেই বুজেছি! ফেলে দিবো কিন্তু আপনাকে ধাক্কা দিয়ে।
মেয়েটির সাথে খিলখিল করে হেসে ওঠে আমার চেতনা। হঠাৎ কি হয়? সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে কেন? সামনে কিলবিল করতে থাকা শত শত কিলবিলে স্করপিওন যেন মেয়েটিকে গ্রাস করে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। শুভ্র শাড়ি ঢেকে যায় কিলবিলে কালো কীটে। আমি দুরে চলে যাচ্ছি মেয়েটি থেকে! আমি সহ্য করতে পারবো না কোনভাবেই! কর্কশ শব্দে কি যেন বাজতে থাকে।
আমি শব্দ উৎসটিকে খুঁজতে লাগলাম। যেন সেটিকে খুঁজে পেলেই আমার চিরমুক্তি! আমার চেতনার ঘোড়ায় অন্য দেহে আমি সওয়ার হতে পারবো না আর! না দেহ গুলো আমার নয় আমি না ! আমি না! চিৎকার করতে ইচ্ছা হচ্ছে। কোথায় যেন গান বাজছে “যেটুকু কাছেতে আসে ক্ষণিকের ফাঁকে ফাঁকে চকিতো মনের কোণে স্বপনের ছবি আঁকে..........”
ধড়মড় করে জেগে উঠলাম আমি! ধুকপুক করছে বুক! তৃ্ষ্ণায় যেন ফেটে যাচ্ছে। ঘাম দিয়ে গোসল করে ফেলছি যেন! গান তাহলে প্লেয়ারে ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! প্লেয়ারে এখনো গানটি বাজছে “যেটুকু যায়রে দুরে ভাবনা কাঁপায় সুরে তাই দিয়ে যায় বেলা নুপুরেরো তাল গুনি.......................”
আবশেষে নিজের দেহকে অনুভব করতে পারলাম আমি। কিন্তু নিজেকে নিজের মাঝে খুঁজে পেয়েও কে জানি আনন্দ হচ্ছে না। বিষাদে ঢেকে আছে দেহমন। কর্কশ শব্দের উৎস তাহলে মুঠোফোনটি। রিসিভ করতেই ওপাশে:
- আচ্ছা এত রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল কেন বলোতো?
আমার সমস্ত চেতনা ব্যাকুল হতে চাইলো মুগ্ধ আবেশে!
(কি লিখেছি নিজেই জানি না। অস্থির মনের বর্হিপ্রকাশ বলতে পারেন এটাকে। কোন গল্প হয়েছে কিনা আদৌ জানি না। এই শিরোনামে গল্প লিখার ইচ্ছা আছে বটে। কিন্তু এটা গল্প না। পোস্টটি কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। )