ধুর তিন দিন ধরে মেয়েটার কোনো দেখা নেই, কোনো মানে হয়! এইতো সেদিনও মেয়েটাকে ফলো করতে করতে মেয়েটার পিছু পিছু শাহবাগ পর্যন্ত গিয়েছিল আহসান। ধুর মেজাজটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে, জলজ্যান্ত একটা মানুষের দেখা পাওয়া যাবে না এটা কোনো কথা!
কার্জন হল থেকে শুরু করে কলাভবন পর্যন্ত পুরো ভার্সিটি এলাকা এর মধ্যে এগারো বার ঘোরা শেষ।
এখন ভীষন মন খারাপ আর মেজাজ খারাপ নিয়ে টিএসসির বারান্দায় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বসে আছে সে।
কি করা যায় ভাবছে। বন্ধুদের কাছ থেকে একটু হেল্প নিলে মেয়েটাকে খুঁজে বের করা কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু বললেই ঝামেলা। এমনিতে কেউ ওকে পঁচাতে কম পঁচায় না। সবাই তাকে ক্ষেপানোর জন্য ডাকে "চাচামিয়া"!
এখন এই মেয়ে খোঁজার কথা বললে তো তার আর রক্ষা নেই!
আহসান ঝিম ধরে বসে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মাথা ভীষন এলোমেলো হয়ে আছে।
"ঐ চাচ্চুউউউউ"
হঠাৎ করে তালাত এসে পিছন থেকে দিলো এক ধাক্কা! তালাত আহসানের ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা করেছে। সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলজিতে পড়ছে। বন্ধুদের মধ্যে সে সবচেয়ে বেশি ফাজিল।
> চাচামিয়া এইখানে কেন বইসা আছো? ঘটনা কি?
> কিছু না, এমনি।
> কিছু তো একটা আছে ঠিকই। তাড়াতাড়ি ক ব্যাটা নাইলে কিন্তু বোম ফাটামু!
> খবরদার ইতরামি করবি না এখন
> তাইলে ক কি হইছে?
> কিছু না।
> কবি না তাইলে? ওকে আমি এখনি ইতরামি শুরু করতাছি
> ঐ চোপ হারামজাদা। এমনিতেই মাথা গরম হয়ে আছে।
> আচ্ছা ঠান্ডা কর
তালাত হাত-পা ছেড়ে হেলান দিয়ে বসে চুইঙ্গাম চাবাচ্ছে। আহসান ভাবছে কি করবে। শেষমেষ চিন্তা করলো যা হয় হবে, মেয়েটাকে তার খুঁজে বের করতেই হবে। তালাতের কাছ থেকে কিছু ইনফরমেশন নিতে পারলে ভালো হয়।
> দোস্ত একটা ঝামেলায় পড়ছি, হেল্প দরকার।
> ট্যাকা পয়সা দিতে পারুম না এখন।
> ট্যাকার কথা কইছি? আমি তোর কাছ থেইকা কোন কালে ট্যাকা নিছি হারামজাদা?
> তাইলে কি হেল্প চাস?
> একটা মাইয়া...
> ছি ছি ছি! আসতাগফিরুল্লাহ্! নাউজউবিল্লাহ্ মিন জালেক্! কি কস এইসব! শেষ পর্যন্ত মাইয়া লাগবো তোর! তাও আবার আমার মত একটা খাটি ঈমানদার মুমিন মুসলমান পোলার কাছে মাইয়া চাস!
> আরে শুনবি তো আগে
> কি আর শুনুম! দুনিয়া শেষ! কেয়ামত কাছায় আসছে! ভদ্র পোলাপানরা মাইয়া খুঁজে! ইয়া মাবুদ!
> দেখ ব্যাপারটা সিরিয়াস। আমি একটা মেয়েকে খুঁজতেছি, ও কার্জন হলেরই। তবে কোন ডিপার্টমেন্ট সেইটা জানি না। মেয়েটাকে আমি তিন দিন ধরে খুঁজতেছি,
> হুম। মাইয়ার নাম কি?
> জানি না
> তাইলে কেমনে কি! ডিপার্টমেন্ট জানোস না, নামও জানোস না! হইছে তোর আর মাইয়া খুঁজা লাগবো না!
> দেখ মাইয়াটারে বের করতেই হবে যেমনে হোক
> হুম, মাইয়া দেখতে কেমন?
> সুন্দর, ফর্শা, চুল সোনালি রঙের। অনেকটা ফরেনার টাইপ। চেহারায় কিঞ্চিত ড্যাম কেয়ার ভাব আছে।
> অ, বুঝতে পারছি। তুমি "মিস সোনালী আঁশ" রে খুঁজতেছো।
> মাইয়ার নাম সোনালী আঁশ!
> আরে না, পোলাপান এই নামে ডাকে। ওর নাম ইয়োলিয়া। ফিজিক্সে পড়ে, আমগোর জুনিয়র।
> ব্যাপক আনকমন নাম। এখন মাইয়ারে কেমনে পামু?
> আমি কি জানি! আমি কি মাইয়ার বাপ যে তোর হাতে মাইয়ারে তুইলা দিমু!?
> আরে ওর লগে কনটাক্ট করার ওয়ে ক। মাইয়ার ফোন নাম্বার দে।
> এহ্ কি সুন্দর কথা! চাহিবা মাত্র দিয়া দিমু! আগে ট্যাক্স দাও, গুরু-দক্ষিনা দাও, আমারে একটু খুশি করো, ওকে চাচ্চু?
> আচ্ছা পলাশি যাই চল, তোরে খুশি করতেছি।
> উঁহু হবে না, নো পলাশি যাওয়াযাওয়ি। চলো না বসুন্ধরায় যাই,
কি আর করা! আহসান তালাতকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে গেলো। ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া করলো, স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখলো, তালাতকে একটা পোলো শার্টও কিনে দিতে হলো। বসুন্ধরা সিটি থেকে বের হয়ে একটা চায়ের দোকানে গেল তারা।
> ঐ শালা নাম্বার দে।
> এখনো পুরাপুরি খুশি হই নাই।
> তোর খুশির খ্যতা পুড়ি হারামজাদা!
> এক প্যাকেট বেনসন দে আগে
> যা মর শালা!
> না দিলে নাম্বারও পাবি না। কি আর করা, আমি তাইলে মহসিন হলে গিয়া বোমটা ফাটায় দেই...
> থাম, সিগারেট দিতেছি তোরে।
অবশেষে তালাতকে এক প্যাকেট বেনসন দেয়ার পর ইয়োলিয়ার ফোন নাম্বার পাওয়া গেল.....
> তালাত মাইয়ার বাসা চিনস?
> হ চিনি তো! মাসে তিনবার কইরা দাওয়াত খাইতে যাই!
> ফাইজলামি করিস না। ঠিক কইরা ক
> বাসা চিনুম কইত্তে! তবে ধানমন্ডিতে থাকে এইটুক জানি।
> কালকে মাত্র একটা টিউশনের বেতন পাইলাম আর আজকে সব খাইয়া দিলি শালা।
> প্রেমের লাইজ্ঞা কত মাইনষে কত কিছু করলো, ইউসুফ নবী আঠারো বছর কিট-পতঙ্গের কামড় খাইলো। আর তুমি শালা চাচ্চু একটা টিউশনের বেতন নিয়া আফসোস করো!
***************************
রাত আড়াইটা বাজে। ইয়োলিয়া রুম অন্ধকার করে বারান্দায় বসে আছে। হালকা বাতাস বইছে বাইরে। হঠাৎ তার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো একটা unknown নাম্বার থেকে,
"if you are a dream I don't want to wake up. goodnight honey"
ইয়োলিয়া ফোন হাতে নিয়ে অবাক হয়ে বসে আছে। unknown নাম্বার থেকে মাঝেমাঝে ম্যাসেজ আসতে পারে, কিন্তু এরকম ম্যাসেজ তো আসার কথা না। আর কেইবা তাকে এমন ম্যাসেজ পাঠাবে......
(চলবে....)