পর্ব- ১
ইকবাল খন্দকার সাহেবের অধিকাংশ সময় একাকী কাটে। উনারা তিন বোন, দুই ভাই। বড় বোন ও মেঝো বোনের পর তাঁর স্থান, এরপর ছোট ভাই ও ছোট বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে মেঝো বোন রাবেয়ার সাথেই তাঁর সবচেয়ে বেশী ভাব ছিল। তাদের মাঝে বয়সের ভেদাভেদ ছিল তিন বছরের।
ইকবাল সাহেবের ছোট ভাই ইফতেখার খন্দকার। তিনি গত বিশ বছর যাবৎ পরিবার নিয়ে অ্যামেরিকায় বাস করছেন। তিনি University of Texas এ রসায়নের প্রফেসর। এছাড়াও তিনি একজন কলামিস্ট। তিনি Harvard University থেকে PhD করে University of Texas এ শিক্ষকতা শুরু করেন।
ইকবাল সাহেবের ছোট বোন সুফিয়া নূর খন্দকার ময়মনসিংহে থাকেন। তাঁর স্বামী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের Plant Pathology ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসর। সুফিয়া একসময় বেশ নামকরা সাংবাদিক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স এবং মাস্টার্স পাশ করে দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাক এ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।
বড় বোন আলেয়া অনেক আগেই মারা গেছেন। তার একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। ৮ বছর আগে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগে আলেয়ার স্বামী মারা যায়।
বড় বোন আলেয়া আর মেঝো বোন রাবেয়ার মৃত্যুর পর ইকবাল সাহেব অনেকটা ভেঙে পড়েন। হঠাৎ করে তিনি খুব বেশী একা হয়ে যান। অন্য দুই ভাই, বোনের সাথে তাঁর যোগাযোগ হয় না বললেই চলে। কালে-ভাদ্রে হয়তো বছরে দু এক বার টেলিফোনে কথা হয়।
ইকবাল সাহেব স্ত্রীর ভালোবাসাও খুব বেশী দিন পাননি। বিয়ের ৬ বছর পর একটা রোড এক্সিডেন্টে তাঁর স্ত্রী গুলবাহার খাতুন মারা যান।
একাকী থাকতে থাকতে এখন অনেকটা পাল্টে গেছেন তিনি। বাইরের মানুষের সাথে এখন আর আগের মত মিশতে ইচ্ছা করে না। আগে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন, তারাও আসতো। এখন যোগাযোগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন, নেই বললেই চলে। তিনি সারাক্ষন নিজের মধ্যেই থাকেন।
একমাত্র মেয়ে তিতলীর সাথেও তাঁর তেমন একটা কথাবার্তা হয় না। আসলে বলার মতো তেমন কিছু খুঁজেও পান না। আর মেয়েটাও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে থাকে।
ঘরে ভালো না লাগলে তিনি ছাদে অথবা বাগানে পায়চারি করেন। মাঝে মাঝে মেঝো বোনের কবরের পাশে গিয়ে নিরবে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকেন।
তিনতলার ভাড়াটিয়ার দুটো বাচ্চা প্রায়ই বিকাল বেলা বাগানে খেলতে আসে। তাদের খেলা দেখতে তাঁর ভীষন ভালো লাগে। মাঝে মাঝে বাচ্চাগুলোর সাথে তিনি একটু আকটু গল্প করেন। বাচ্চাগুলো যখন তাঁকে "নানাভাই" বলে ডাকে, তখন তাঁর বেশ ভালো লাগে।
আগে প্রায় প্রতি রাতেই তিনি মেঝো বোন কে স্বপ্নে দেখতেন। মাঝখানে বহুদিন তাঁকে আর স্বপ্নে দেখেননি। কয়েকদিন আগে ভোররাতে হঠাৎ করে তাঁকে স্বপ্নে দেখলেন.................
> রাবু আপা তুমি...........
> কেন রে, আমাকে চিনতে পারছিস না ইকবাল?
> কি যে বলো আপা, আমি কি তোমাকে ভুলতে পারি..........
> শোন তোকে একটা জরুরী কথা বলতে এসেছি। মেয়েটার যে দিন দিন বয়স বাড়ছে এটা কি তোর চোখে পড়ে না? মেয়েকে তো বিয়ে দেবার সময় হয়েছে।
> কি যে আবোল-তাবোল বলো! আমার এইটুকুন ছোট্ট মেয়ে, তাকে কি এখনি বিয়ে দিবো নাকি...!?! তাছাড়া জুলেখার পড়ালেখাও তো শেষ হয় নাই।
> তোর মেয়ে এখন আর সেই ছোট্ট খুকিটি নেই। আর কয়দিন পর তো তোর মেয়ে গ্র্যাজুয়েট হবে। আর আজকাল ভালো ছেলেও পাওয়া যায় না। বিয়ে হলে তো আর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে না।
> দেখি জুলেখাকে জিজ্ঞেস করে। আমার মা মরা মেয়েটার ওপর তো আর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না............
> দেখ ভাই তোরও তো বয়স কম হলো না। আল্লা না করুক, যদি একটা কিছু হয়ে যায়। তাই সুস্থ থাকতে থাকতে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারটা সেরে ফেল।
> দেখি কি করা যায়......
> আর শোন, মেয়ের বিয়ে কিন্তু বেশ ধুমধাম করে দিবি। আমোদ-ফূর্তি, দাওয়াত-পানির যেন কোন কমতি না হয়।
> ইনশাআল্লাহ্। আল্লার ইচ্ছা থাকলে খুব ভালো ভাবেই আমার মেয়ের বিয়ে হবে।
(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০৩