somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজশাহীতে দেড় কি.মি. চওড়া ও ২০ কি.মি. দীর্ঘ চরের বিস্তার

২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজশাহীতে দেড় কি.মি. চওড়া ও ২০ কি.মি. দীর্ঘ চরের বিস্তার
ফারাক্কার উজানে ৯০ ভাগ পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে
রাজশাহী : একদা প্রমত্তা পদ্মা এখন জীর্ণশীর্ণ ধারা নিয়ে কোনভাবে বেঁচে আছে। রাজশাহীর এই দৃশ্য গত শুক্রবার ধারণ করা -ছবি : সোহরাব হোসেন সৌরভ
00ভূ-গর্ভের স্তর ১১০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে00

সরদার আবদুর রহমান : ভারত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পদ্মার পানি দিচ্ছে না। বাংলাদেশ শিডিউল অনুযায়ী পানি না পাবার বিষয়ে ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সাড়া পায়নি। তারা এখন বহুল আলোচিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন'-এর দোহাই দিচ্ছে। অথচ ২/৩ বছর আগেও তারা এই অজুহাত তুলতে পারেনি। যদিও ২০০৭ ও ২০০৮ সালেও তারা চুক্তির চেয়ে অনেক কম পানি দিয়েছে বাংলাদেশকে।
চলতি বছরেও পদ্মায় পানির অভাবে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভূ-গর্ভে পানির স্তর ৩৫ ফুট থেকে ১১০ ফুট পর্যন্ত নীচে নেমে গেছে। এতে চাষাবাদ ও মাছ চাষ হুমকির মুখে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় লোকদের অভিমত। পদ্মায় নদীর তলদেশ শুকিয়ে রাজশাহী নগরীর পাশে নদীর মূল ধারা থেকে দেড় কিলোমিটার চওড়া এবং ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ চর পড়েছে বলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ বছর শুরুর প্রথম ১০০ দিনে ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩১৯ কিউসেক পানি পাবার কথা। কিন্তু এ সময়ে বাংলাদেশ ৬৬ হাজার ২২৪ কিউসেক পানি কম পেয়েছে। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত শুকনো মওসুম হিসেব করে পানি বণ্টনের শিডিউল নির্ধারিত। সে মোতাবেক মধ্য এপ্রিল থেকে মে'র শেষ পর্যন্ত শিডিউল মোতাবেক পানি পাবার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা ফারাক্কা পয়েন্টে যথেষ্ট পরিমাণ পানি জমা হবারও সম্ভাবনা নেই। কারণ ভারত ফারাক্কার অনেক উজানেই শতকরা ৯০ ভাগ পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ শিডিউল অনুযায়ী পানি না পাবার বিষয়ে ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সাড়া পায়নি। তারা এখন বহুল আলোচিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন'-এর দোহাই দিচ্ছে। অথচ ২/৩ বছর আগেও তারা এই অজুহাত তুলতে পারেনি। যদিও ২০০৭ ও ২০০৮ সালেও তারা চুক্তির চেয়ে অনেক কম পানি দিয়েছে বাংলাদেশকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে ভারত গঙ্গার উজানে যে শতশত বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে দিয়েছে এবং খাল কেটে বেশির ভাগ পানিই বিভিন্ন প্রকল্পে সরিয়ে নিচ্ছে সে কথা উচ্চারণ করতে চায় না। যে কারণে শত চুক্তি ও আশ্বাস সত্ত্বেও ভারত বাংলাদেশকে পানির যথেষ্ট অংশ দিতে সমর্থ নয়। তারা নানান টালবাহানা করে বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করে চলেছে।
এদিকে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) এর পর্যবেক্ষণ তথ্য মতে, পদ্মার (গঙ্গা) প্রবাহ বাংলাদেশে পহেলা এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে একটি ১০দিনের পানি বণ্টনের হিসেবে দেখা গেছে, ফারাক্কা ব্যারেজের পয়েন্টে যখন গড় প্রবাহ ৫৭,৮৪৮ কিউসেক থাকে তখন প্রতি সেকেন্ডে ২২,৯৪৯ ঘনফুট হ্রাস পাচ্ছে। জেআরসির একজন সদস্য জানান, ১৯৯৬ সালের পানি বণ্টন চুক্তি মোতাবেক সেই সময়ে বাংলাদেশকে তার পাওনা পানি হিস্যার ৩৫ হাজার কিউসেক গড় হিসেবে পানি দেয়া হয়েছিল। জেআরসি রেকর্ডে দেখানো হয়েছে শুকনো মওসুমের শুরুতে যখন পানি প্রবাহ ৯৬ হাজার ১৭৯ কিউসেক ছিল তখন অর্থাৎ ২০১১ সালের জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন বাংলাদেশ ৪০ হাজার কিউসেক পানি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিলের ১০ তারিখে পদ্মার পানির মাত্রা রাজশাহী এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে মাপা হয়েছে যথাক্রমে ৮.৬৬ ও ৫.৬৪ মিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে ৩১ মার্চ পানির মাত্রা ছিল ১২.০৪ মিটার। জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের রাজশাহী জোনের একজন প্রকৌশলী জানান, প্রতিবছর এই অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৬-৭ ফুট নীচে নেমে যাচ্ছে। গোদাগাড়ী, তানোর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ১১০ ফুট নীচে নেমে গেছে। তিনি আরো জানান, পানির স্তর দিন দিন নীচে নেমে যাবার কারণে অনেক অগভীর নলকূপ ও টিউবওয়েলে পানি উত্তোলন করা যাচ্ছেনা- যা সেচ সমস্যাকে প্রকট করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই অঞ্চলে পদ্মা ও অন্যান্য নদীর এই ক্ষীণ পানি প্রবাহের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর রিচার্জ করা যাবে না।
যমুনা ও মেঘনার মতো পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক প্রবাহের চেয়ে কম পানি প্রবাহ থাকায় মহানন্দা, বড়াল, আত্রাই, পাগলা, বারনই, পূনর্ভবা এবং ছোট যমুনাসহ ১২টি উপনদী বর্তমানে শুকিয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইন সমিতির (বেলা) একজন কর্মকর্তা জানান, পদ্মার মৃতপ্রায় অবস্থার জন্য রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা জেলার হাজার হাজার বিঘা চাষযোগ্য জমি উষর ভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাজশাহী নগরীর পার্শ্ববর্তী পদ্মায় চর জন্মানোর কারণে কৃষকরা সেখানে এখন তরমুজ, গম, শাকসবজি ও বোরো ধান চাষ করছে। এই দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা বলছেন, এটি কয়েক বছর আগে কল্পনাও করা যেত না।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×