প্রায় এক বছর আগে,বাবা-মায়ের সঙ্গে ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে সাগরে প্রাণ হারালো তিন বছরের ছোট্ট সিরিয়ান কুর্দী আয়ালান। পুরো বিশ্ব কেদে উঠলো। আমরাও কেদে কেটে চোখের পানি ফেলে ব্লগ-ফেসবুকে ঝড় তুলে ফেললাম।মানবতার ডালা সাজিয়ে বসলাম।ইউরোপকে বোঝালাম,এদের আশ্রয় দাও। এসব দেখে, খুলে দিলো ইউরোপ তাদের সীমান্ত।জায়গা হল সিরিয়ান লাখ লাখ শরনার্থীদের।
এখন বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু,নারী এবং পুরুষ ভাসছে।একদিকে মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অন্যদিকে আমাদের আমাদের কোষ্টগার্ড ও বিজিবি। মাঝখানে একবার এপার আরেকবার ওপার করতে যেয়ে শিশুরা পানিতে পড়ে ভেসে যাচ্ছে। নৌকাটি সীমান্তের কাছাকাছি এলে বিজিবির স্টিমার দেখে পালানোর চেষ্টায় করলে সেটি নদীতে ডুবে যায়। এ সময় তাদের সাথে থাকা কয়েকটি পরিবারের সাত শিশু নদীতে ভেসে যায়। এদের মধ্যে হুমায়ুন কবির ও রোকেয়ার তিন সন্তান রয়েছে। ২০ ট্রলার বোঝাই রোহিঙ্গা নাফ নদীতে ভাসছে
অথচ এখানে কোনো মানবতা আমাদের নাই।কিন্তু এর কারন কি? কী বোর্ডের ঝড় তুলে যারা আশ্রয় দেয়ার বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন,তাদের মোটা দাগে যুক্তিটা মোটামুটি এইরকম-
১)রোহিঙ্গারা অপরাধপ্রবন।তারা চুরি-ডাকাতি করে।ভাবখানা এমন, শেয়ার-বাজার থেকে রিজার্ভ লুট পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল চুরি রোহিঙ্গারাই যেন করেছে।আসল কথা হলো,সকল জাতির ভিতরেই খারাপ মানুষ থাকে। রোহিঙ্গারাও এর ব্যতিক্রম নয়।তাদের মধ্যেও চোর বাটপার আছে।তাই বলে সব রোহিঙ্গারা খারাপ,এটা কিভাবে বলেন? গত তিন দিন আগে, ঢাবির চারুকলা অনুষদে নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদুতের ব্যাগ চুরি হয়েছে,এজন্য কি সকল ঢাবি ষ্টুডেন্টকে আমি চোর বলব? অথবা নেদারল্যান্ডের মানুষ যদি বলে ,সকল বাংলাদেশি চোর বলে,তাহলে কি মেনে নেব? তাছাড়া সন্ত্রাসবাদের ঝুকি থাকা সত্তেও,ইউরোপকে মানবিকতার খাতিরে শরনার্থী গ্রহন করতে উপদেশ দিয়েছি।তাহলে রোহিঙ্গাদের বেলায় আমাদের মানবিকতা কই থাকে।একটা কথা মাথা রাখেন,একমাত্র প্রানের উপর প্রচন্ড হুমকি থাকলেই মানুষ তার বাড়িঘর, জমিজমা,গবাদিপশু ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় চায়।এটাই বাস্তব।
২)২য় যুক্তি হলো, আমরা এর আগেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছি,এখন আর দিতে পারবো না।হাউ ফানি। মন্ত্রী মহোদয়রা কথায় কথায় বলেন,বাংলাদেশ নাকি সিঙ্গাপুর-মালয়শিয়া হওয়ার পথে,তাহলে এখন এই কথা কেন? ৮০-৮১ তে এবং ৯১ তে ৪/৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছি,তখন যদি পারি এখন সামান্য কয়েক হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় দিতে পারবো না? তাছাড়া এইসব শরনার্থীর প্রধানত সাহায্য করে কিছু মুসলিম দেশের এনজিও এবং জাতিসংঘ।
আসল কথা হলো,সিরিয়ান আয়ালানদের গুট্টুস গুট্টুস চেহারা আর রোহিঙ্গা শিশুদের কালা,নাংগা,ভুখা চেহারা । তাই আমরা রোহিঙ্গা শিশুদের ফিরিয়ে দিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২১