বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ রাজপথে করা একপ্রকার অসম্ভব।তাই যতদুর সম্ভব,অন্যায়ের প্রতিবাদ ব্লগ,ফেসবুক কালেভদ্রে পত্রিকার পাতায়ও হচ্ছে। তবে এখানে সমস্যা হলো,সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না।কারনটা হলো, সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে, নিজের সুশীলতা রাখা যায় না।
যেমন প্রথম ছবিটার কথাই ধরুন-
হাতকড়া পরা অবস্থায় যাকে দেখছেন,তিনি হলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা বিপুল চাকমা,আর মৃতদেহটি তার মা নিরুদেবী চাকমার। কোলন ক্যানসারে মা মরণাপন্ন। সেই মাকে নিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে একটা মাইক্রোবাসে করে তিনি ছুটছিলেন চট্টগ্রাম হাসপাতালের দিকে। পথের মধ্যে পানছড়ি থানা, পথের মধ্যে তল্লাশি। মায়ের সামনে ধস্তাধস্তি, মায়ের বাধা উপেক্ষা করে তাঁকে তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে।তাঁর নামে ১৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে জানিয়েছেন পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।বিপুল চাকমাকে পুলিশ নিয়ে গেলে নিরুপমা দেবী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চট্টগ্রামের বড় হাসপাতালের বদলে তাঁকে ভর্তি করা হয় কাছেরই খাগড়াছড়ি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।সন্তানের মুখ শেষবারের মতো দেখলেন না হতভাগ্য মা। মায়ের মুখ শেষবারের মতো দেখতে পারলেন না বিপুল চাকমাও। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দয়া হলো। মায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে থাকার আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে সাত ঘণ্টার জন্য প্যারোলে জেলের বাইরে আসতে দেওয়া হয়।তিনি হাতকড়া পরা অবস্থায় মাকে শেষ বিদায় দিলেন।
এই কাহিনী শুনে কার না চোখে পানি আসবে। ফলে এর প্রতিবাদে ব্লগ ফেসবুকে এমনকি পত্রিকায় পাতায়ও মাতম চলছে। কারন এই ঘটনায় প্রতিবাদ করলে নিজেকে সুশীল বলে পরিচিত হতে পারবেন এবং রিস্কও কম।
এবার ২য় ছবিটার কাহিনীতে আসুন।
দুটি নবজাতক শিশুর পিতা হলেন সদ্য পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ডাঃ তারেক হাসান সজিব। তাকে প্রায় এক মাস আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়ে ছিলো এবং তার সাথে জহিরুল ইসলামকে। এর মধ্যেই তিনি জমজ সন্তানের পিতা হন। বাবা ফিরে এসে সন্তানের নাম রাখবে এই আশায় এখনো নামও রাখা হয়নি।দুই দিন আগে ডাঃ সজিব এবং জহুরুল ইসলাম পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন।ডাঃ তারেক হাসান সজিব রেখে গেলেন তার বিধবা স্ত্রী এবং মাত্র ২৪ দিন বয়সী দুই জমজ সন্তান।কিন্তু পারেননি রেখে যেতে তাদের নাম।মাত্র ২৪ দিন বয়সেই পিতৃহারা ডাঃ সজিবএর যমজ মেয়ে !
এখন এই ঘটনায় প্রতিবাদ করে আপনি যদি দুই লাইন লিখেন,তবে কিন্তু সুশীল লিষ্ট থেকে আপনার নাম কাটা যাবে।আপনাকে ছাগু ট্যাগ দেয়া হবে । কারন এরা জামাত-শিবিরএর রাজনীতির সাথে যুক্ত।
সুতরাং প্রতিবাদ করুন।তবে সাবধানে করবেন,কেন খামাখা ছাগু ট্যাগ খাবেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:১৬