কয়েকদিন আগে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম আওয়ামীলিগের মুগ্ধ করার কৌশল নিয়ে।
আজকে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কিভাবে রিজার্ভ কেলোংকারি ধামাচাপা দেয়ার কৌশল করা হয়েছিলো সেই মনমুগ্ধ করা কৌশল বলি।আশা করি জমজমাট থ্রীলার পড়ার মত মজা পাবেন।।
প্রথম আলো-ডেইলি ষ্টার গ্রুপ কোন ঘরানার,তা সচেতন পাঠক মাত্রই জানে।কিন্তু পত্রিকার কাটতি বাড়ানো এবং নিরপেক্ষতা দেখানোর জন্য মাঝে মাঝে এমন কিছু অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে,যাতে সরকার মারাত্মকভাবে বিব্রত হয়।যেমন বিদেশী সন্মাননার জন্য ক্রেষ্টের স্বর্ন চুরি,ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটধারী সচিব-সরকারী কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ,নারায়নগঞ্জের সাত খুনে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা ইত্যাদি সরকারের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর ছিলো। এজন্য মোবাইল কোম্পানির সহ অনেক বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন বন্ধ আছে।এসব করে সরকার পত্রিকা দুটি নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চালায়।
যাই হোক,মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা কিভাবে রিজার্ভ কেলোংকারি ধামচাপা দিতে সাহায্য করেছে সেদিকে তাকাই।
: চোরের প্রথম অনুপ্রবেশ ২৪ জানুয়ারি! তবে অর্থ চুরির মূল কাজটি করা হয় ৪ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটের সংকেত বা বার্তা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে অর্থ স্থানান্তরের ‘অ্যাডভাইস’ বা পরামর্শগুলো পাঠানো হয় ওই দিন দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১২টায়।এদিকে ঐ একই দিন অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে এক-এগারোর সময় সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের বিচ্যুতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আনাম তার পত্রিকায়ও এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল বলে মুখ ফসকে অথবা সজ্ঞানে স্বীকার করেন।
এক দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ডেইলি স্টার-এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে বিচার চান। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘ডেইলি স্টার’ বন্ধ করাসহ মাহ্ফুজ আনামের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করেন। এরপর থেকেই মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়র শুরু হয়।মামলার সাগরে ভাসতে থাকেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।
এটা কাকতলীয় ঘটনা নয়।সরকার আসলে সুযোগ নিছে। উচ্চ মহল জানে, বাংলাদেশে একমাত্র প্রথম আলো-ডেইলি ষ্টার গ্রুপই পারে অনুসন্ধান ও সাহস করে এত বড় কেলংকারী প্রকাশ করতে।তাই তাদের মুখ বন্ধ করতেই এই মামলা। যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের বিবেকবান মানুষ বোঝে মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে সাধারন এই কথায় মামলা হতে পারে না।আর মামলা যদি হতেই হয় ,তাহলে সে সমুয়ের সকল প্রকাশিত পত্রিকার সম্পাদকের নামে এবং স্বীকারোক্তি দেয়া রাজনীতিবিদদের নামে হওয়া উচিত। আবার খেয়াল করুন,এসব রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা যেখানে আদালত আমলেই নেয়ার কথা না,সেখানে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়।তাও বিভিন্ন জেলায়।যাতে একটা ছুটে গেলে,আরেকটা দিয়ে গ্রেফতার করা যায়।আবার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি নিজে ছাড়া অন্য কেউ কিভাবে মানহানী মামলা করে ,সেটা অনেক আইনবিদের মাথায় ঢুকে নাই। আমার মনে হয় তখন প্রথম আলো-ডেইলি ষ্টার গ্রুপ আত্নসমর্পন করে।
এরপর শেখ রেহানার স্বামী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক মাহ্ফুজ আনামের পক্ষে কিছু কথা বললে মামলা দায়ের ও সমালোচনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে।তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও কিছুটা ব্যাকফুটে আসেন।তিনি নিজের ফেসবুক পেজে আরেকটি স্ট্যাটাসে বলেন মামলাগুলো দেওয়ানী মামলা, ফৌজদারী মামলা নয় ।এগুলো স্বাধীন গনমাধ্যমের উপর আঘাত নয়। কিন্তু মানহানী ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা কিভাবে দেওয়ানী মামলা হয় ?
খেয়াল করুন, এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো কথা বলেন নাই।
যাই হোক এর পরের ধাপে যখন ফিলিপাইনের পত্রিকা এই চুরি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে বা করতে উদ্যোগী হয় তখন সম্ভবতঃ প্রথম আলো-ডেইলি ষ্টার গ্রুপ আবারো চুরির ঘটনা প্রকাশ করতে চায়। তখন মাহ্ফুজ আনামের তীব্র সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘দুটি পত্রিকা শুধু আমার বিরুদ্ধে কুৎসাই রটনা করে গেছে, আমার বিরুদ্ধে লিখে গেছে। আওয়ামী লীগ যেন তাদের শত্রু।’
বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা প্রথম প্রকাশ করেছিল ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়েরার।-----------।গত মাসে হওয়া এই চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কয়েকটি বহুজাতিক ব্যাংকের অনুরোধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ফিলিপাইন।
ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক সব জানত
বেড়ে যায় আবারো মামলার গতি এবং গ্রেফতারী পরোওয়ানা। পরবর্তিতে বিবিসি,রয়টারসহ অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ার পর ৬/৭ ফেব্রুয়ারীতে সকল দেশী মিডিয়াতে একযোগে প্রকাশ হয়।
এবার আরেকটি অবাক করার মত তথ্য দেই।অপসারন হওয়া দুই গভর্নরের মধ্যে একজন ছিলেন নাজনীন সুলতানা।তিনি প্রথম আলোর মতিউর রহমানের শ্যালকের স্ত্রী। তাকে কোনো কারন ছাড়াই সরিয়ে দেয়া হয়েছে।তিনি ছিলেন নাম প্রকাশে আনিচ্ছুক সুত্রের কর্মকর্তাদের একজন।এই কেলোংকারী প্রকাশ যাতে না হয়,তাই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে,এ সন্দেহ অমুলক নয়।
কোনো একদিন হয়তো সব স্বাভাবিক হলে প্রথম আলোর মতিউর রহমান এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত লিখবেন। কিন্তু আমরা অবাক নয়নে ততদিন পর্যন্ত মনমুগ্ধকর নাটক সিনেমা দেখতে থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:১৩