তার চেহারাডার দিকে সারাজীবন তাকায় থাকলেও যেন দেখার ক্ষিদা মিটবো না।
মাইয়াডা ফর্সাও না আবার কালাও না, শ্যামলা মনে হয় এরেই কয়। চোখগুলা যেন দীঘির টলটইল্লা পানি। চোখের দিকে তাকাইলে আকাশ দেখা যায়। লাউয়ের ডগার মতো হাত কবিরা কেন্ কয় তার হাতের দিকে তাকাইলেই তা বুঝা যায়। তার হাতে লাল নীল সবুজ রঙের কাঁচের চুড়ি, একটু নাড়া খাইলেই তার টুং টাং শব্দ আমার বুকে প্রতিধ্বনি হয়। বড়ই আজব লাগে। এমনতো কখনোও আগে হয়নাই! পা দুইটারে মনে হয় যেন হরিণের ক্ষুর। সে পা’য়ে কোনো আলতা নাই, নূপূর নাই, রুপার আঙটিও নাই, তারপরও সে যখন মাটিতে পা ফেলে আমার খুব কইতে ইচ্ছা করে, আরে আরে কি করো!!, ঐ পা তুমি আমার বুকের উপর রাখো।
খুব ইচ্ছা করে তার ঠোট দুইখানা ছুইয়া দেখি, অন্ততঃ শুধু একবার। তার চুলের গন্ধ যেন কোন ফুলের মতো?! ঠিক মনে করতে পারিনা, কিন্তু ভাবি, আহা, একবার যদি নাক ডুবাইয়া তার চুলের গন্ধ নিতে পারতাম!
অনেক চিন্তা কইরা দেখছি, তার এই মায়ার উৎস তার শরীরের ঠিক কোন জায়গায়? কিন্তু চিন্তা কইরা শুধু ক্লান্তই হই কিন্তু এর কোন হদিস পাই না!
আমারে জিগায়, ক্ষিদা লাগছে? আমি কই ‘হ’।
এই ক্ষিদা যে পেটের ক্ষিদা না, চোক্ষের ক্ষিদা এইডা তারে কেমনে কই!
সে হাইসা কয় ‘লেবুর শরবত বানাইছি, খাইবেন? আমি কই ‘হ’।
তার সেই রহস্যের হাসি তার ঠোটের কোনায় লাইগা থাকে, আমি তাইই দেখতে থাকি, দেখতেই থাকি। তার লেবুর শরবতে গলা ভেজাই, গলা ভিজে, তৃপ্তি মিটে গলার, কিন্তু চোখের তৃপ্তি মিটে না। সারাজীবন যদি চাইয়া থাকতে পারতাম, তাইলে কি মিটবো?! মনে হয় না।
আমি জিগাই তুমি হাসতাছো কেন্?!
আপনি ভালো কইরা বসেন, খাটের এত কোনায় বসলে যে কোন সময় উল্টাইয়া পড়তে পারেন।
আমি পইড়া গেলে তুমি আমারে ধইরা তুলবা, এই জন্য খাটের কোনায় বসছি।
সে এই কথা শুইনা হাসতে হাসতে শেষ, বার বার চেষ্টা করতেছে হাসি কোন্ট্রল করবার, পারতাছে না।
তারপর হাসি থামলে মায়া ভরা গলায় কয়, আমারে আপনার শ্পর্শ করতে মন চায়, করলেই পারেন, এইডাতো আপনার অধিকার।
আমি কই, অধিকারের বলে তোমার শুধু হাতই স্পর্শ করতে পারি, কিন্তু আমিতো তোমার মনডারেও স্পর্শ করতে চাই।
এই কথা কইয়া সারি নাই দেখি দুই ফোটা পানি পড়ি পড়ি করতাছে তার হরিণের মতো চোখ থাইকা, টপ কইরা পড়ার আগেই আমি হাত বাড়াইয়া সেই পানি নিচে পড়তে দিলাম না।
সে সেইটা দেইখা কয়, সারাজীবন কি এই চোখের পানির মতো আগলাইয়া রাখবেন?
আগলাইয়াতো তুমি আমারে রাখবা তোমার মায়াভরা দুইটা হাত দিয়া, পারবানা?
সে লজ্জা নিয়া ‘হু’ কইয়া মাথা নাড়ে। তার চোখের কোনের লজ্জা মেশানো হাসি ভোরের শিশিরের মতো চিক চিক করে।
আমার কোলে রাখা হাতটা সে নিজের দু’হাতের মধ্যে টাইনা নেয় পরম মমতা আর ভালবাসায়।
আমার চোখ দুইটা ঝাপসা হইয়া আসে, আমি চক্ষে কিচ্ছু দেখতে পাই না, কিন্তু চোখ মোছার জন্য তার হাত থাইকা নিজের হাত ছাড়াইয়াও নেই না। আমার বা’হাতটা দিয়া চোখটা মুছতে চেষ্টা কইরাও পারি না, কেমন যেন অবশ অবশ লাগে। আমি জোড় খাটাই আমার বা’হাতটা নাড়ানোর জন্য।
ঝাপসা চোখে অনেকক্ষণ তাকে দেখতে না পাইড়া মনডা কেমন ধ্বক কইরা উঠে, আমি ভয় পাইয়া যাই। বা’হাতটা সব শক্তি দিয়া নাড়াইতে চেষ্টা করতেই সেইটা উপরে উইঠা আবার ধপ কইরা বুকের উপর পড়ে।
-----------
থতমত খেয়ে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি, বুঝতে চেষ্টা করি আসল ঘটনা। উপুর হয়ে শোয়াতে বা’হাতটায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে ঝিঝি ধরে গিয়েছিল। পাশ ফিরে জোড় করে নাড়াতে গিয়ে অবশ হাতটা ধুপ করে বুকের উপর পড়ে। খেয়াল করি বালিশ ভেজা, বুঝতে পারি চোখও ভেজা, মানে ঘুমের মধ্যে আসলেই কাঁদছিলাম।
অনেক চিন্তা করেও স্বপ্নে দেখা নববধূর নাম মনে করতে পারলাম না। নামটাই আসলে জিজ্ঞেস করা হয়নি। তার চেহারাটাও যেন স্মৃতি থেকে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। ঠিক যেমনটা ভোরের শিশির দিনের প্রথম আলোতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। তাই তার নাম দিলাম শিশির। রবীন্দ্রনাথেরও একটা শিশির ছিল, আমারও নাহয় একজন থাকলো।