কমলাপুরের পাশের এই বস্তিটার নাম ঠিক জানা নেই। জনসাধারনের হাটার সরু পথটার পাশেই এই বস্তির কলতলা। স্যাতস্যতে পরিবেশ, প্রস্রাবের দূর্গন্ধ, সাথে বস্তিবাসী মানুষের গায়ের গন্ধ, ঝুপড়ি ঘরগুলোর ভিতর ও বাইরের নিভু নিভু জ্বলতে থাকা চুলো থেকে ভুস ভুস করে বেরুতে থাকা দলা পাকানো ধোঁয়া। নগ্ন অর্ধনগ্ন আদম শিশুর কান্না, ঝগড়া, ক্ষুধার চিৎকার, তাদের অভিভাবক নিয়ন্ত্রনহীন ঘোরাফেরা, স্ববজি ওয়ালাদের হাক ডাক সব ছাপিয়ে ষড়রিপুর এক রিপুকে প্রভাবিত করে ঐ কলতলা, যেখানে অর্ধনগ্ন নারীরা নিঃসঙ্কোচে স্নান করে, চুলোচুলি করে, অদ্ভুদ ভাষা আর অঙ্গভঙ্গির তালে তাদের কোন্দল চলে।
কলতলের অনতি দূরের তিল তিল করে গড়ে উঠা টিনের সমজিদের সামনে টেবিল চেয়ার নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বসা ছাগলা দাড়ির মতি মিয়া তাইই সরু চোখ দিয়ে উপভোগ করে আর চেয়ারে এক পা তুলে আয়েশ করে বসে মেস ওয়াক করতে থাকে।
মাইকে মসজিদের চাঁদা তোলার জন্যই প্রতিদিন তাকে এখানে বসতে হয়, সেই চাঁদার টাকায় তার দিন চলে, সাথে চলে ব্যবসার উন্নতি অথ্যাৎ মসজিদের উন্নয়ন।
মতিমিয়ার চোখ সর্বদাই যেন কলতলার দিকে। ভরদুপুরগুলোতে উৎতেজনায় সরু চোখ চকচক করে, তলপেটে সুরসুরি লাগে। লুঙ্গিতে ফোটা ফোটা জলের দাগ লাগে। মতি মিয়ার মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে, নিজেকে সে স্বর্গে আছে বলে মনে করে।
গরীব এই বস্তিবাসীদের সমস্যার যেমন অন্ত নাই, তাদের মানতেরও অন্ত নাই। মাজার খোজার মতো সময়, আগ্রহ বা সামর্থ নাই বলেই হয়তো মতিমিয়ার টিনের মসজিদই তাদের মাজার, আর মতিমিয়াই তাদের মতি মৌলানা। তাই একটাকা দুটাকা যে যা পারে তাই মতি মিয়ার সামনে রাখা দান বাক্সে তারা ফেলে যায় পরম ভক্তিতে। কেউ কেউ আবার টাকা ফেলার পর বাক্সে চুমু খায় শ্রদ্ধাভরে সাথে করমর্দন করে মতি মিয়ার সাথে দুহাত জোড় করে।
বস্তির উঠতি যুবক থেকে বুড়ো মরদগুলোর হাতও কখনও সখনো বেগতিক জায়গায় গিয়ে পড়ে, কানে আসে নারী কন্ঠের কোনো অশ্রাব্য গাল, কখনো গা কাঁপিয়ে হাসি।
মতিমিয়ার কাছে এই সব কিছুই উপভোগ্য।
--------------------------------
আধুনিককালের মতি মিয়ারা এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেও তাদের জন্য রয়েছে হাইটেক ব্যাবস্থা। তাদের কেউ কেউ ইয়াহুর পাবলিক রুম গুলোতো গালির জারিগান গায়, যার গালি যত অশ্লীল সে ততো বেশি ফেবারিট রুমগুলোতে। অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে। তারা আসেন সামহোয়্যারইন ব্লগে। একটা ভার্চুয়ার কলতলা তৈরী হয়। লীলাখেলা চলতে থাকে, মতিমিয়াদের সরু চোখ চক চক করে, হাতের আঙূলগুলো মেসওয়াকের বদলে কি বোর্ডে হিস হিসিয়ে ওঠে বিশ্বাক্ত সাপের মতো।