এ বছরের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য আমরা নিজেরাই সরকার সাহেবকে বাইপাস করে কি করতে পারি সেই বিষয়ে লিখেছিলাম । এখন দুহাজার নয় সালের শেষ মাথায় এসে মনে হচ্ছে আগামী এক বছরের মধ্যে যেই বাংলাদেশে আমরা থাকব তার সাথে আজকের বাংলাদেশকে মেলানো মুশকিল হয়ে যেতে পারে। আর অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি হল এই বিষয়ের কার্যকরী পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের যথেষ্ট অবদান থাকছে।
তাই পরিবর্তনের যে ছোঁয়া দেখছি তারই কিছু একত্রিত করার জন্য এই লেখা।
দ্রুতগতির ইন্টারনেট
আমাদের বাপের জন্মের আমল থেকেই বলা যায় মানে সেই নব্বইয়ের দশকের সেই “তথ্য পাচার” মশকরার খেসারত আমাদের পুরো দেশ তো প্রায় দেড় যুগ ধরে দিতেই থাকল। কিন্তু কিছুটা দ্রুতগতির ইন্টারনেট মনে হয় বাংলাদেশে আর একেবারে অধরা আর দূর্গম নয়। এইতো ২০০৫-৬ তেও ৮-১০ কিলোবাইট ছিল গড়পড়তা ইন্টারনেট কানেকশন যা পাড়ার কোন আই এস পি থেকে বাড়িতে ইথারনেট তারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হত। এইবছর দেখি ১৮-২০ কিলোবাইটের সংযোগ তেমন দূষ্প্রাপ্য না। কিন্তু আজকের লেখার অবতারণা এর পরবর্তী যুগের ইন্টারনেটের খবর জানানোর জন্য।
আমার নিজের বাসার কানেকশনের স্পীড টেস্টের রেজাল্ট সাধারণত আপলোড স্পীড আরো বেশী থাকে
উন্নত বিশ্বে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি কেবল ইন্টারনেট অথবা এডিএসএল কানেক্টিভিটি ব্যাবহার হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয়টির জনপ্রিয়তাই বেশী। বাড়িতে থাকা টেলিফোনের তার ব্যাবহার করেই একই সাথে ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যাবহার করা যায় দেখে নিরবিচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের মাধ্যম হিসেবে এটি একটি চমৎকার ব্যাবস্থা। বাংলাদেশেও অল্প কিছুদিন হয় এই সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ব্লগার/ডেভেলপার লাভলুদার একটি পোস্ট দেখে প্রথম এর সম্পর্কে জানতে পারি তারপরে কিছু দৌড়াদৌড়ি করার পরে গত দু-সপ্তাহ ধরে ঢাকায় বসে 1Mb/s গতির ইন্টারনেট ব্যাবহার করছি। এখন পর্যন্ত সার্ভিস ভালই। মাঝে মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য লাইন কেটে গেলেও দ্রুতই আবার ফেরত আসে। প্রয়োজনীয় লিঙ্ক সমূহ
অনলাইন ব্যাঙ্কিং
অনলাইন ব্যাংকিং নিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বাংলাদেশী ডেভেলাপারদের চোখের পানি মোটামুটি শুকিয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তবে গত চার তারিখের আনুষ্ঠনিক ঘোষণার মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইন ব্যাঙ্কিং এর জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমার ধারণা বেশ কিছু ব্যাঙ্ক যারা আগে থেকেই অনলাইন ব্যাঙ্কিং করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে রেখেছিল তারা রাতারাতি সেবার সুযোগ করে দিচ্ছে। আমার নিজের ডাচ বাংলা ব্যাঙ্কে একাউন্ট আছে। ঘরে বসেই দিব্যি আমার ভাইয়ের একাউন্টে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিলাম নিয়মাবলী অনুসরণ করে। শুনছি কিছুদিনের ভেতরেই প্রয়োজনীয় এপিআই রিলিজ করবে ব্যাঙ্কগুলো যেন ই-কমার্স আরো সহজ করা যায়। ইউটিলিটি বিল সহ আরো বেশকিছু বিল ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট থেকেই দেয়া যাচ্ছে। নট ব্যাড। তবে সারা দেশের সব ব্যাঙ্কের জন্য সেন্ট্রাল পেমেন্ট গেটওয়ে হলে সবার জন্যই ভাল হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাঙ্কের নতুন অনলাইন ফান্ড ট্রান্সফারের নীতিমালা
অনলাইন ব্যাঙ্কিং চালু হবার পরের মিডিয়া কভারেজ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
চেক ক্যাশিং
ব্যাঙ্ক থেকে কদিন আগে নোটিশ এলো যে আমার আগে চেকবই বাতিল হয়ে গেছে। ব্যাঙ্কে গিয়ে নয়া চেকবই তুলে আনতে হবে। এটিএম এর যুগে কে আর চেকের জন্য বসে থাকে আর গা করিনি। তবে খবরে দেখলাম যে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কে অটোমেটেড চেক ক্যাশিং এর প্রবর্তন করছে। তাতে অন্য ব্যাঙ্কের চেক দ্রুত ভাঙ্গিয়ে নেয়া যাবে। ব্যাক্তিজীবনে তেমন এর প্রভাব না থাকলেও ব্যাবসায়িক দিক থেকে এর প্রভাব বিশাল ও দীর্ঘমেয়াদী। সম্পূর্ণ ব্যাবস্থা চালু হতে আরো কিছু সময় লাগবে তবে যদি একদিনে দুঘন্টায় চেক ছাড়ানোর টার্গেটে পৌঁছাতে পারে আমার হিসেবে সেটি একটি বিশাল অর্জন হবে। কারণ আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় যুক্তরাজ্যে এখনো চেক জমা দিলে ৫-৭ কর্মদিবসের কথা বলে আর বার্কলেস ব্যাঙ্ক নিয়ে যারা কাজ করেছেন আপনাদের কথা বলে লাভ নেই।
প্রস্তুত স্বয়ংক্রিয় চেক নিকাশঘর পরীক্ষামূলক নিষ্পত্তি হচ্ছে
মোবাইল কমার্স
মোবাইল ব্যাঙ্কিং নিয়েও কিছু গুঞ্জন শুনছি। আমাদের জলপাই ভাইদের ট্রাস্ট ব্যাঙ্ককে কদিন আগে মনে হয় বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাঙ্কিং দেখভাল করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর সাথে ছমাসের সময়সীমা দিয়ে দেয়া হয়েছে যেন এরই মাঝে কর্মক্ষম ডেমো দেখাতে পারে। প্রযুক্তির বাজারে বেশ ভাল নাড়াচাড়া চলছে এই বিষয়ে তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আশা করা যায় যেমন ফ্লেক্সি লোড করা যায় তেমনি আইন অনুযায়ীই আনলোড ও করা যাবে। চান্দাবাজীর জন্য সুবর্ণ সুযোগ হলেও এর সব মিলিয়ে ফলাফল ভাল হবারই কথা।
খবর
Click This Link
তার আগের খবর
Click This Link
আরো কিছু খুচরো জিনিষ দেখছি এদিক সেদিকে। যেমন ঢাকা শহরের সম্পূর্ণ খাবার পানি সরবরাহ, বিতরণ ও উত্তোলনের ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য এডিবির দেয়া ২০ কোটি ডলারের একটি প্রোজেক্ট চলছে। ওয়াসা ভবনের দশতলায় গেলে দেখবেন জনাবিশেক দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞ উদয়স্ত কাজ করে যাচ্ছেন এবং জিআইএস, স্যাটেলাইট ম্যাপিং সহ আধুনিক প্রযুক্তির যথেষ্টই ব্যাবহার হচ্ছে। যদি কোনক্রমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় তবে ঢাকার পানি সঙ্কট কিছুটা হলেও উন্নতি হতে পারে।
বাংলাদেশের অনেকেরই ধারণা নেই যে দেশের কর বিভাগ কতটা লেজেগোবরে অবস্থা নিয়ে চলছে। বাংলাদেশের সংগৃহীত করের প্রায় আশিভাগই আসে ভ্যাটসহ অন্যান্য পণ্যের ভেতরের লুকানো কর থেকে। অর্থাৎ শ্রমিক বা ফকির পণ্য কেনার সময় কর দিয়েই কিনছে কিন্তু প্রকৃত সম্পদশালীর কাছ থেকে কর নেবার ক্ষমতা কর বিভাগের নেই। আয়কর বিভাগ সম্ভবত অর্থের সকল উৎসে একত্রে যাচাই করার জন্য কেন্দ্রীয় ডাটাসেন্টার বসানোর জন্য কাজ করছে। তাতে এক যায়গা থেকেই ব্যাঙ্কের হিসাব, শেয়ার বাজারের হিসেব, জমিজমার পরিমাণ থেকে শুরু করে গাড়ির নম্বরসহ একজন ব্যাক্তির সম্পদের বড় উৎসগুলো যাচাই করা যাবে। বুদ্ধিমান বাঙ্গালী তার পরেও পিছলে যাবে কিন্তু যদি ঠিকমত করা হয় কর ব্যাবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
বর্তমানে আমরা ডিজিটাল টাইমে চলছি। যদিও আন্তর্জাতিক সময় নির্ধারণের নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের এখনকার সময় নিতান্তই একটা হাস্যকর পরিবর্তন। রাস্তায় দেখি এক পাব্লিক আরেকজনকে বোঝাচ্ছে। আমাদের দেশে কারেন্ট গেলে সব ডিজেলে চলে। যা ডিজেলে চলে তার ইংরেজী নাম নাকি ডিজিটাল। ব্যখ্যাটা নিতান্তই হাস্যকর হলেও এর চেয়ে ভাল আর কিছু বেচারাকে বোঝাতে পারিনি সেদিন।
আশংকা করছি কিছুদিনের মধ্যেই বর্তমান সরকার “তাদের ডিজিটাল সাফল্যগাথার” কথা জনগণকে শোনানো শুরু করবেন আর তার জের চলবে আরো কয়েক সরকার পর্যন্ত। তবে আমি সরাসরি এই আটমাস বয়সী সরকারের সরাসরি অবদান ওপরের যেকোনটির ব্যাপারেই নাকচ করে দেব। কারণ এই পরিবর্তনগুলোর প্রায় সবগুলোই দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে অনুমোদন, অর্থ সংস্থান ও প্রযুক্তি নির্মাণ পর্যন্ত কয়েক মাস নয় বেশ কয়েক বছরের বিষয়। যা মনে হচ্ছে গত সরকারের শেষ সময় অথবা দুবছরের নির্দলীয় সরকারের সময় বেশকিছু সাহসী ও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল যার প্রভাব আমরা এখন দেখছি বা আগামী কয়েক বছর পর্যন্ত দেখব। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল স্বপ্নের গাছে তাল ধরতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা লাগবে।
শুভকামনা সেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১৮