এইতো বেশীদিন আগে না, আমার মামাতো ভাই যে মোবাইলের হাঁটমান ইনসাইক্লোপিডিয়া বলা যায় তার সাথে আমি গল্প করছিলাম। ওকে বললাম যে, আমার কনফিগারেশন মত একটা ফোন কেউই বানাতে পারল না। ও দেখি বেশ নড়েচড়ে বসল (বুঝলাম মোটামুটি একটা পার্সোনাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিয়েছে) ।
বলে তাই নাই?
আমি বললাম হুঁ।
বলে ভাইয়া কিরকম ফোন চান?
আমি বললাম এই যেমন ধর নরমাল ফোন হবে, সেই ফোনে মোটামুটি ২ বা তার বেশী মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা হবে, (ও দেখি মাথা নাড়ছে, বুঝলাম তার মেমরী থেকে ঝট করে ফিল্টার করে সাবসেট বের করল) তারপরে তার ব্লুটুথ , আর থ্রিজি ইন্টারনেট থাকবে (আবার মাথা নাড়ল), তারপরে ওয়াইফাই থাকবে (এইবার মাথা নাড়ল কিন্তুক আস্তে, বুঝলাম চয়েসের ফোন বেশী নাই), আর সাথে একটা জিপিএস হলে ভাল হয়।
ছেলের চেহারা দেখি খুশী, এতো বাছবিচার করেও কয়েকটা ফোন বেঁচেছে। এইবারে আসল কথা বললাম, আরেকটা গুণ দরকার, ফোনের দাম এই ধর দশ হাজার টাকার ভেতরে হতে হবে। এইবারে দেখলাম ছেলের চেহারা ফিলিপস বাত্তি থেকে এক ধাক্কায় লোডশেডিং হয়ে গেল। বলে ভাইয়া কি যে বলেন পাঁচ ছয় হাজার টাকায় এইসব মোবাইল হয় নাকি? আমি বিরস মুখে বললাম বাজেট নাই বলে কি শখও বাজেট করে করতে হবে নাকি।
এই আলাপ ছিল আমাদের যদ্দুর মনে পড়ে ২০০৭ সনের শেষের দিকে। তখন আপমার্কেট ফোনগুলোরই দুই মেগার ক্যামেরা হত। এখন তিন সিরিজের অনেক ফোনেই ফীচারগুলো থাকে। ফোন কোম্পানীগুলো সবসময় নতুন ফীচারে জন্য হন্যে হয়ে বেড়ায়।নোকিয়ার ক্ষেত্রে ভাল ফীচারগুলো সাধারণত ওপরের দিকের এন সিরিজ বা ই সিরিজে আনে পরে ধীরে ধীরে সাধারণ ফোনগুলোতে যোগ করতে থাকে।এখনকার সময়ের টপ ফীচারগুলোর মধ্যে ওয়াইফাই, জিপিএস আর টাচ এই তিনটিই প্রধাণ। আর সেই সাথে নানাবিধ এপ্লিকেশন চালানোর সুযোগ। যদিও এক্ষেত্রে এপেলের ধারেকাছে কেউ নেই।
আজকালকার সময়ে আর ভাইরে বিরক্ত করা লাগেনা, পছন্দমত ফোন বাছাই করার জন্য জিএসএম এরিনার সার্চের জুড়ী নেই। আমি মোটামুটি সিম্বিয়ানের ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্মের ভেতরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আর এন সিরিজের ফোনগুলো চমৎকার হলেও ওজন বাটখারার দেখে এখন পর্যন্ত্য হাতে উঠাইনি। এখন ব্যাবহার করছি 6120c ঢাকায় সেকেন্ডহ্যান্ড ছহাজার টাকায় কেনা। কম বাজেটে ডুয়েল ক্যামেরা সহ থ্রিজি এনাবেল্ড চমৎকার ফোন। সাড়ে তিনশো মেগাহার্জের ওপরে প্রসেসর স্পীড আর ১২৮ মেগার রম। ফলে অপেরামিনি বা জিমেইল এপ্লিকেশন মুহুর্তেই খুলে যায়। মনে পড়ে আমার প্রথম কেনা কম্পিউটারের স্পীড ছিল ২৩৩ মেগা আর র্যাম ৬৪। হাতের মুঠোয় পৃথিবী কথাটা মন্দ না।ফোনটা চমৎকার হলেও এর কীপ্যাড বেশ খটমটে। ওপরের নেভিগেশনের অংশে অতিরিক্ত বাটন দিয়ে আমার মত বড় আঙ্গুলের মানুষের জন্য ভ্যাজালের করে ফেলেছে। তাই নেক্সট ফোন কি হবে তার খোঁজ নেয়া শুরু করেছি।
অনেক দেখেটেখে নোকিয়ার E52 ফোনটা বেশ মনে ধরেছে। দিব্যি পাওয়ারফুল প্রসেসর আর ওয়াইফাই জিপিএস এনাবল্ড। সেই সাথে ই সিরিজের ফোন হিসেবে কিপ্যাডও দুর্দান্ত।আর সেই হিসেবে চমৎকার স্লিম ওজন ১০০ গ্রামের ভেতরেই। সমস্যা একটাই দাম এখনো ২৫ হাজার টাকার ওপরে । তবে আমি খুব একটা ডরাচ্ছি না। লন্ডনে প্রথম যখন N95 রিলিজ হল তখম মানুষ লাইন দিয়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশ পাউন্ড খরচ করে কিনল আর এক্সপেন্সিভ কন্ট্রাক্টে গেল এখন দিব্যি শপাউন্ডের নিচেই ব্যাবহৃত সেট পাওয়া যায়।
তাই আশা করছি আগামী বছরে কোন এক সময়ে এই E52 ফোনের দামও হাজার দশেক টাকায় নেমে আসবে। তখন একবার কেনার চান্স নিয়ে দেখব। তাই এই ফোনটা আগে আমার জন্য ছিলনা, এখনো নাই [বাজেট ফেল], ভবিষ্যতে সম্ভবত থাকবে
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৩৬