আমার নিজের চোখে বিদেশ থেকে বসে সিডারের মোকাবেলায় বাংলাদেশের পার্ফরমেন্স মোটামুটি সন্তোষজনক। কারণ ৯১ এর তান্ডবের সময় আমি নিজে চট্টগ্রাম ছিলাম, তখনকার তুলনায় বিদ্ধংসী ঝড়ের সামনে সামর্থ্য অনুযায়ী যতুটুকু সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে। অবশ্যই এর চেয়ে অনেক বেশী করা যেত, কিন্তু আগামীবার অবশ্যই অনেক বেশী তৈরি থাকতে হবে। আর এখন বিশ্লেষণ আর সমবেদনার চেয়ে অনেক বেশী দরকার ত্রাণ আর রিডেভেলাপমেন্ট।
ব্লগের কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে জাগরণ ক্যাম্পেইন আর অন্যান্যদের হাত বাড়ানো দেখে আমি কি করতে পারি তাই ভাবছিলাম। আরিফ জেবতিক ভাইয়ের কর্পোরেট পকেট কাটার আহবান দেখে মাথায় দুর্বুদ্ধি চাপল। আসলেই তো, এখনকার বিশ্বের অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার, সেখান থেকে কিছু হাতিয়ে নেয়া যায় কিনা। গুগলের এডসেন্স নামে একটা জিনিষ আছে, যেটার মাধ্যমে কর্পোরেটরা অংশগ্রহণকারী সাইটে তাদের বিজ্ঞাপন স্থাপন করতে পারেন। আমার বইমেলা সাইটের এক দুজাগায় বিজ্ঞাপন ছিল, কিন্তু তাতে দেখা যেত দিনে যে এক দুটা ক্লিক আসে তাতে মাসে হয়তো দশ পনের ডলার আসে। কিন্তু আমার পরিচিত আরো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের এক দুজন ওয়েবমাস্টার আছেন যারা বেশ মোটা টাকাই কামিয়ে নেন প্রতি মাসে এই ক্লিকবাজী করে। সেটি বাংলাদেশের হিসেবে মোটা টাকা নয়, নিউ ইয়র্কের হিসেবে মোটা টাকা, এবং ছেলে দিব্যি বাংলাদেশী।
আমি ঠিক করেছি এমাসের বিজ্ঞাপনের পুরো টাকাটা সিডারের আক্রান্তদের জন্য পাঠিয়ে দেব রেড ক্রিসেন্ট বা অন্য কোন দাতব্যের বরাবরে। তবে সম্মানজনক কিছু পাঠানোর জন্য বেশকিছু ক্লিক হলে মন্দ হয়না। আর আমার মনে হয় সব দিক থেকে বিচার করলে বিষয়টা মন্দ না, এই জন্য
এতে আপনার কোনই খরচ নাই। (বইটই কিনলে ভিন্ন জিনিষ)
এইসব করপোরেটগুলো যেই পরিমাণে পয়সা কামায়, তাতে দু-চারটা ভুয়া ক্লিকে তাদের কিসসু আসে-যায় না।
জাগরণের জন্য যেমন বাংলাদেশে অবস্থান না করলে অংশ নেয়া যায় না, এর জন্য ঠিক উলটো। বরং বিদেশ থেকে ক্লিক করলে একই সাইটের জন্য সাধারণত বেশী পাওয়া যায় গুগল থেকে। (এইখানেও থার্ড ওয়ার্ল্ডের দাম নাই)।
ফোনপ্রতি একটি মেসেজেরও কোন বাধ্যবাধকতা নাই। দুচার দিন পরে পরেই এক কম্পিউটার থেকেই ক্লিক করে যেতে পারেন।
একটি সাবধানবাণী, আমার সাইটে সাধারণত প্রতি একশ দর্শকের জন্য হয়ত এক থেকে দুজন ক্লিক করেন। কিন্তু হটাৎ করে প্রতি দশজন দর্শকের মধ্যে সাত আটজন ক্লিক করা শুরু করলে গুগলের এলগরিদমে ধরা খেয়ে যেতে পারেন। সেকরম হলে গুগল মামা একাউন্ট ক্লোজ করা থেকে শুরু করে অনেক ভেজাল করতে পারে। তাই সেফ হল, আজকে সাইট ভিজিট করলেন, তো কালকে একবার ভিজিট করে ক্লিক করলেন। এইভাবে মাসে জনপ্রতি চার-পাঁচটা ক্লিকও মন্দ না।
টিপঃ ক্লিক করে যেই সাইটে যাবেন, সেটি তখুনি বন্ধ না করে দিয়ে, সেখানে এক-আধ মিনিট খোলা রেখেন বা এক দুই পেজ ঘুরে দেখেন, সন্দেহ করে আমার পুরো একাউন্ট বাতিল করে দিলে আবার কেলেঙ্কারী কান্ড হবে।
এখন পর্যন্ত এটা মাথার ভেতর ধারণা হিসেবেই ছিল। হটাৎ মনে হল লিখে ফেলি। ব্লগসমাজ থেকে যথেষ্ট সাড়া পেলে সংকল্প কর্মে বাস্তাবায়িত হবে। কেউ চাইলে পরিচিতদেরও জানাতে পারেন। আমার ধারণা সবাই যথেষ্ট হাত লাগালে কয়েক হাজার ডলার একত্র করা অসম্ভব না। যেটা আমার নিজের পক্ষে দান করা সম্ভব না। কিন্তু কর্পোরেট পকেট কাটতে পারলে মন্দ কি?
সবাই রাজী থাকলে প্রতি সপ্তাহে আমি আপডেট দেব কত উঠল। বইমেলার লিঙ্ক থাকল, চাইলে শুরু করতে পারেন, এখুনি।
জাগরণের ভূয়া বিকল্প। এদিক সেদিকে কিছু বিজ্ঞাপন আছে।
এমনিতে প্রবাসীরা সকলেই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছেন। সেদিন গ্রীনস্ট্রীট মসজিদে জুম্মার পরে এক বেলাতেই প্রায় হাজারখানেক পাউন্ড চাঁদা উঠল, আমাদের নিজের পাড়ার মসজিদে যদিও গুজরাতী মেজরিটী তো এই সপ্তাহে পুরো সপ্তাহের কালেকশন বাংলাদেশের সহায়তার জন্য পাঠানো হয়েছে। আর বাকিরা তো আছেনই। এবার জলপাইয়ের কল্যাণে বরাবরের মত ত্রাণের টাকায় ব্যাক্তিগত পকেট ফেঁপে না উঠলে দেশ অনেক সামলে উঠতে পারবে।
ঝড়ের ছবিটি নাসার সাইট থেকে নেয়া। বাকিটা অন্য এক ব্লগ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:৪৭