somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যরকম কবরস্হান Boneyard--– যেখানে হিসাব নিকাষ করে মানুষ। লেনদেন হয় মিলিয়ন ডলার।-ছবি ব্লগ

০৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Boneyard কথাটা একটি ইংরেজি শব্দ কিন্তু এটি অপ্রচলিত ইংরেজি। আমাদের ভাষায় যেমন অনেক সংস্কৃত শব্দ আছে যা আমরা মানি আমাদের বাংলা শব্দ হিসাবে কিন্তু সাধু ভাষা হিসাবে রেখে দিয়েছি কখনো তেমন ব্যাবহার করি না তেমন । Boneyard কথাটা শুনতে আমার কাছে কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। মনে হয় বিশাল প্রান্তরে হাড়গোড় ছাড়ানো। আর এমনিতেই Boneyard এর সিম্পিল ইংরেজি হল graveyard বা কবরস্হান ।

Boneyard মানে কবরস্হান এ কথা ঠিক কিন্তু এক্ষেত্রে প্লেনের কবরস্হান । একটি প্লেন যখন আর সাধারন ভাবে একদমই অথবা আপাতত ব্যাবহার করা যায় না তখন Boneyard এ যায় । Boneyard সাধারণত মরুভুমিতে বানানো হয় কারন প্রচুর জায়গা দরকার সেখানে এই সুবিধা পাওয়া সহজ হয়। মরুভুমির শুষ্ক আবহাওয়ায় প্লেন গুলো এবং পার্টস গুলো যত সময় অন্ন্যকিছু করা না হচ্ছে তত সময় সংরক্ষণ করা সহজ হয় । মরুভুমির শক্ত মাটিতে এমনিতেই প্লেন গুলো টেনে নেওয়া যায় আলাদা করে রাস্তা বা রাম্প বানানো লাগে না।





প্লেন গুলো সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস না করে এভাবে এখানে নিয়ে কেন রাখা হয় সেটাই ছিল আমার প্রশ্ন সেখান থেকেই এই পোস্টের অবতারনা । আসলে পুরা প্লেনটা একসাথে রিসাইকেল করা যায় না একটা প্লেনের ভেতর নানা ধরনের পদার্থ থাকে এলুমিনিয়াম,স্টিল, প্লাস্টিক,নাইলন,মেশিনারিজ, তেল, তার , আরও অনেক কিছু । আমাদের মত দেশে যেখানে হয়তো ৫ বছরে একটা প্লেন রিটায়ার করে সেটা রিসাইকেল করা সহজ এবং আলাদা জায়গার দরকার পড়েনা কিন্তু যাদের একসাথে অনেক প্লেন রিটায়ার করে তাদের আলাদা জায়গা দরকার পড়ে। কারন একটিভ প্লেনের যে হ্যাঙ্গার সেখানে রিটায়ার গুলো রাখলে একটিভ গুল কোথায় রাখবে। ফলে আসল কথা হল রিটায়ার প্লেন রাখার জায়গাই হল Boneyard ।

Boneyard এ প্লেন একটার পর একটা আসতে থাকে অপর দিকে একটার পর একটা প্লেন নিদিষ্ট সিস্টেমে রিসাইকেল চলতে থাকে। একটি রিসাইকেল করতে করতে অন্যগুলোর যে অংশ ভাল আছে এবং সংরক্ষণ করতে হবে তা যেন নষ্ট না হয়ে যায় তার জন্য বিশেষ ব্যাবস্তা নেওয়া হয় । কারন প্রক্রিয়াটি সময় এবং খরচ সাপেক্ষ। তবে সম্ভবত রাশিয়া এই ব্যাপারে কেয়ার করে না তাই তাদের Boneyard গুলোতে প্লেন গুলোতে মরিচা পড়ছে ।









এমন কি যুক্তরাস্ট্রর বাইরের Boneyard গুলোর হিসাব ও ঠিক মত নাই। তবে যুক্তরাস্ট্রর Boneyard গুলোতে প্লেনগুলো খুব সুন্দর করে রাখা হয়।যুক্তরাষ্ট্রর ভিতর ১০ টি এবং যুক্তরাষ্ট্রর বাইরে অস্ট্রেলিয়ায় ১টি Boneyard আছে যা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিচালিত ।







যুক্তরাষ্ট্রর ১০টির ভেতর এরিজোনাতে AMARG সবচেয়ে বড় এবং সুপরিচিত। এখানে ৪৪০০টি বিভিন্ন্য পুরানো নতুন মডেলের প্লেন রাখা আছে প্রদর্শনীর জন্য তাছাড়া ডিসএসেম্বেল ও রিসাইকেল এর জন্য আরও প্লেন আছে যা ধিরে ধিরে ডিসএসেম্বেল ও রিসাইকেল করা হচ্ছে। এটি প্রায় ২৬০০ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এই ১১ টি ছাড়া বাকি পৃথিবীর অন্য Boneyard গুলোর হাতাপাতা এবং কার্জ পদ্ধতির কোন অফিসিয়াল হিসাব নাই ।





প্লেন গুলো রিটায়ার করার পর নিদিষ্ট টাইপের প্লেন কে নিদিষ্ট Boneyard এ যেতে হয় । কারন একাক ধরনের প্লেন ডিসএসেম্বেল এবং রিসাইকেল করতে একাক ধরনের টেকনিক্যাল ফ্যাসিলিটি দরকার পড়ে । একেক Boneyard এ একাক টাইপের প্লেন ডিসএসেম্বেল এবং রিসাইকেলের ফ্যাসিলিটি থাকে সেই অনুযায়ী Boneyard বেছে নিতে হয় । ইচ্ছা মত একটিতে গেলেই হয় না। যেমন কমার্শিয়াল প্লেনের জন্য ক্যালিফোনিয়াতে Mojave, ভ্যারাইটিজ মিলিটারি প্লেন বিশেষ করে বি-৫২ বম্বার বিমানের জন্য এরিজোনাতে AMARG। টেক্সাস এর Abilene তে শুধুই ফাইটার প্লেন ।













Boneyard এ প্লেন গুলো যখন আসে তার চারটা উদ্দেশ্য থাকে
১.রিপিয়ারঃ বড় রকম রিপিয়ার, মডিফিকেশন করা হবে, অপ্রয়োজনিয় অংশ খুলে ফেলা হবে বা পাসেঞ্জার প্লেন কে কার্গো প্লেনে রুপান্তর করা হবে তার জন্য জায়গা দরকার তাই Boneyard এর জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়।

২.সর্ট টাইম স্টোরেজঃ এক্ষেত্রে বিভিন্য রকম হতে পারে যেমনঃ প্লেনটি রাখার জায়গা নাই এয়ারপোর্ট এর হাঙ্গারে রাখতে বেশি খরচ এখানে রাখতে কম খরচ তাই এখানে সল্প সময়ের জন্য রাখা হয় ।

যেমন হয়েছিল ৯/১১ এর পর যখন এয়ালাইন ব্যাবসায় প্রচুর ভাটা চলছিল তখন প্রচুর পরিমান প্লেন Boneyard এ পাঠানো হয়। তখন এমনও দেখা গেছে কোন এয়ার লাইন্স এর সকল প্লেন Boneyard পাঠানো হয়েছে । কিছুদিন পর ব্যাবসা ভাল হলে আবার ইউজ হবে এই আশায়।











আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর এবং কোল্ড অয়্যার শেষ হবার পর পৃথিবীর সব আর্মি দেখে যে তাদের কাছে যে পরিমান যুদ্ধ বিমান আছে তা দরকার নাই শুধু শুধু খরচ তখন প্রচুর পরিমান প্লেন Boneyard এ পাঠানো হয় পরে ব্যাবহার হবে বা পরে বিক্রি করে দেওয়া হবে এই আশায়। আরিজনার কিংম্যান এয়ারপোর্ট এর Boneyard থেকে ১৯৪৫ সাল থকে ১৯৪৭ এর মাঝামাঝি সময় পযন্ত ৩৪৭০০ প্লেন বিক্রি করা হয় এবং ২৬৯০০ প্লেন রিসাইকেল করা হয়।



কখনো কখনো দেখা যায় যে এই প্লেনটি আকেজো কিন্তু এর কিছু পার্টস ভাল একই ধরনের অন্য সচল প্লেনের পার্টস লাগলে এখান থেকে ব্যাবহার করা হবে তাই এটাকে কিছুদিনের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বিক্রি করে দেওয়া সেকেন্ড হ্যান্ড প্লেন ডেলিভারি নেবার আগ পযন্ত ও এখানে রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে কিছু এফ-১৬ বিক্রি করেছিল সেগুলো ডেলিভারি দেবার আগে এখানে রাখা ছিল পরবর্তীতে সেই বিক্রি বাতিল করা হয় তখন আবার তারা সেই প্লেন গুলো ফিরিয়ে নিয়ে নিজেরা ব্যাবহার করে।



৩. লং টাইম স্টোরেজঃ এক্ষেত্রে প্লেনটিকে দীর্ঘ দিনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। প্লেনের পার্টস এর জন্য অথবা প্রদর্শনী বা প্রদর্শনী ফ্লাইট এ ব্যাবহার করার জন্য।

সর্ট টাইম এবং লং টাইম উভয় প্রকার সংরক্ষণের জন্য যে প্লেন গুলো আসে সেগুলোর উপর একধরনের সাদা স্প্রে করা হয় যা প্লেনের গায়ের উপর পাতলা প্লাস্টিকের বা ভিনেল এর আবরণ সৃষ্টি করে। এই আবরন প্লেন গুলোকে ধুলাবালি রোদ এবং তাপ থেকে রক্ষা করে।





৪.ডিসএসেম্বেল ও রিসাইকেলঃ যে কারনে প্লেন পুরাপুরি ডিসএসেম্বেল ও রিসাইকেল করতে হয় তা হলঃ প্লেনটি সিরিয়াস ড্যামেজ বা ইঞ্জিন পুরাপুরি অচল হয়ে গেছে আর ব্যাবহার করা যাবে না,ব্যাবহার করা যাচ্ছে কিন্তু প্রচুর খরচ সাপেক্ষ, একটি পার্টস নষ্ট হয়েছে সেটা দিলে প্লেন টা চলবে কিন্তু পার্টস টা পাওয়া যাচ্ছে না কোম্পানি এই প্লেনের পার্টস আর বানায় না অথবা নতুন প্রযুক্তি এসেছে পুরানো মডেলের প্লেন আর ব্যাবহার করা যাচ্ছে না।







এক্ষেত্রে প্লেনটিকে আলাদা আলাদা অংশে ভাগ করে রিসাইকেল করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে কামান, যুদ্ধ অস্ত্র যা প্লেনে ফিট করা থাকে এবং গোপন প্রযুক্তি আলাদা করা হয় তার পর ইঞ্জিনের ভেতর থেকে তেল পরিষ্কার করা হয় এবং ইঞ্জিন আলাদা করে ফেলা হয়। বিকল ইঞ্জিনের আলাদা আলাদা অংশ আলাদা আলাদা করে রিসাইকেল করা হয়। যেমনঃ তার আলাদা মেটাল আলাদা। সর্বশেষ যে এলুমিনিয়াম এর খোলস থাকে তা টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় ক্রেন এবং মেটাল কাঁটার মেশিন দিয়ে । যে পার্টস গুলো ভাল আছে সেগুলো এবং মেটাল গুলো বছরে কয়েক মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় । কখনো কখনো খোলস গুলো টার্গেট বিমান বা টার্গেট ড্রোন হিসাবে ব্যাবহার করা হয় ।









নতুন করে এই ছবিটা যোগ করলাম । পোস্ট দেবার সময় এটা পাইনি এখন পেয়েছি তাই ।



** টার্গেট বিমান বা টার্গেট ড্রোনঃ বিমানের খোলস এর পেছনে রকেট লাগিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় আকাশে । আর ফাইটার প্লেনের পাইলট রা এর উপর টার্গেট প্র্যাকটিস করে। যদি ফাইটার প্লেনের পাইলট রা টার্গেট মিস করে এবং ধ্বংস করতে না পারে তাহলে এটির রকেটের গতি কমে যখন নিচে নামতে থাকে তখন এতে লাগানো প্যারাসুট খুলে যায় এবং ধিরে ধিরে নিচে নেমে আসে।










সুত্রঃ উইকি Aircraft boneyard

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×