somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় মা

০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই লেখাটা আমি কম করে হলেও অন্তত চারবার লিখতে বসেছি। পরীক্ষা ছিল। পড়তে বসলেই মাথার ভেতর অন্য চিন্তা ঘুরঘুর করে। বিশাল সমস্যা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যখন কলম হাতে নিলাম তখন দেখি আর কিছু লিখতে পারছিনা। পুরা মাথা ফাঁকা। আমার মা...

আমাকে যিনি জন্ম দিয়ে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসেন তার জন্ম আজ থেকে বছর চল্লিশেক আগে। নিজের চোখে দেশ স্বাধীন হতে দেখেছেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন হতে দেখেছেন, দেখেছেন জেনারেল জিয়া আর এরশাদের পতন। এরশাদের সেনাআমল যখন শেষের দিকে, গণতন্ত্রের মুক্তির সূচনালগ্নে আমাকে তিনি এই পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। তারপর একটু একটু করে তিলে তিলে মানুষ বানিয়েছেন আমাকে। স্বাধীনতা যেরকম অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন তেমনি একটা শিশুকে জন্ম দেওয়ার পরই আসল যুদ্ধের শুরু হয়। সঠিক শিক্ষার অভাবে শিশুটি মানুষ না হয়ে দানব হতে উঠতে পারে এই কথা আমার মাতা খুব ভাল করে জানতেন। আর আমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথা বলছিনা।
মাথার চারপাশে কয়েকটা তেলাপোকা ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘুমাইনা পরীক্ষার টেনশানে কয়েকদিন। মাথাটা গেছে পুরাটাই...থাক আমার মায়ের কথা বলি। প্রিয় মা…

ছোটবেলায় আমরা দুইরুমের একটা ছোট্টবাসায় থাকতাম। একতলা একটা টিনশেড বাসা। বর্ষাকালে উঠোনে পানি জমে যেত। তখন এখনকার মত এত দালান ছিল না,হাতে গোনা যেত সংখ্যা। বাসার পাশের সরু গলিটা ছিল আমার খেলার মাঠ। খুব খেলতে যেতে চাইতাম বিকেল হলেই। মাঝে মাঝে মা আমাকে বাসায় তালা দিয়ে আপাকে নিয়ে স্যারের বাসায় যেতেন। তখন দু’চোখ ফেটে কান্না আসত। ভয়ংকর রাগ হত মায়ের উপর। আমরা যে এলাকায় থাকতাম তার পরিবেশ একটা শিশুর জন্য উপযোগী ছিল না। মা এটা বুঝতেন। আমি নিজেও পরে বুঝেছি অনেক দেরীতে।
আমার পিতা, কিছুটা নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক। উচ্চস্বরে কথা বলেন,রগচটা। আর আমার মা তার ঠিক উল্টো। খুব কম কথা বলেন। ভয়ংকর নিষ্পাপ আর ঠান্ডা স্বভাবের মানবী। মার এই গুণটা আমি পেয়েছি। বাবার হাতে আমি অসংখ্যবার মার খেয়েছি। গোণাগুণতি নাই। কখনো কারণে কখনো অকারণে। যখন কাদতাম মা এসে বিছানার পাশে বসে থাকতেন। আমি খুব রেগে গেলে কারও সাথে কথা বলি না। বহুদিন কথা না বলে থাকার অভ্যাস আমার অনেক পুরনো। এটাও মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। একবার মারতে মারতে আমার মায়ের ঠোট কেটে ফেললেন বাবা। অনেকদিন পর মা হাসপাতাল থেকে ফিরলেন। কোন কথা বলেন নাই আমাদের সাথে প্রথন দুই মাস।

ক্লাস সিক্স এ উঠার পর বাসা বদল করা হল। আমরা আগে প্রতি পাঁচ বছর পরপর বাসা বদল করতাম। তবে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর কেন জানি না। বাসা বদল করে মোটামুটি ভদ্র গোছের একটা পাড়ায় উঠে আসলাম। দুই রুম থেকে তিন রুম। আমাকে আলাদা রুম দেওয়া হল। সাথে রান্নাঘর আর জানালার পাশে নর্দমা। প্রতিদিন ভোরে স্কুল থাকত। মা কানের পাশে ফিস্‌ফিস্‌ করে বলতেন কিরে উঠ স্কুলে যাবি না, উঠ বলছি। আমি কিছুতেই বিছানার থেকে উঠতাম না। বাস ছাড়ার ঠিক পাচ মিনিট আগে উঠতাম তারপর কোনমতে জামাটা মাথার উপর দিয়ে দৌড় দিতাম...



আচ্ছা একটা শিশু কেন জন্ম নেয়, এই লেখাটা যারা পড়ছেন তারা কি ভাবছেন। অযথা সময় বরবাদ করে আরেকজনের ইতিহাস পড়ে কি হবে,আমরা কেন হাসি কেনই বা কাঁদি। বেচে থাকার অর্থ কি? পৃথিবীতে এত অর্থ এত বিলাস দ্রব্য চারিদিকে তারপরেও এই গ্রহের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের তিন ভাগ উপোষ থাকে কিংবা ভাগ্যবান হলে একবেলা খাবার পায়।

--প্রসঙ্গে ফিরি, প্রিয় মা...

বই পড়ার নেশা ছিল প্রচন্ড। প্রথম বইটা মার দেওয়া। বইটার মলাট ছেড়া দাম আটআনা। একটা পুজোসংখ্যা ছিল, শিশুতোষ বই ওপার বাংলার। নামটা ভুলে গেছি। বই পড়ার অভ্যাসটাও মার তৈরি করে দেওয়া। নতুন বাসায় উঠার পর আমাকে নতুন স্কুলে ভর্তি করা হল। কিভাবে যেন একটা ভাল সরকারী স্কুলে চান্স পেয়ে গেলাম। তখন বই পড়ার নেশা পুরোদমে। বাসায় ডিশের লাইন নেয়া হল। টিভি দেখতাম সারাদিন। অদ্ভুত একটা বাক্স, নেশা ধরিয়ে দেয়। বাবা রাত করে বাড়ি ফিরতেন প্রায়শই। বাবা আসার সাথে সাথে টিভি বন্ধ করে ভেতরে চলে যেতাম। সারাদিন পরিশ্রমের পর বাবার মেজাজ খারাপ থাকাটাই বরং স্বভাবিক ছিল। বই কেনা হত বছরে একবার কি দুবার। প্রতি জন্মদিনে মা একটা বই দিতেন আর বই কেনা হত ঈদের সালামি পাওয়ার পর। বাবা ঐদিন কি মনে করে তাড়াতাড়ি বাসার ফিরলেন। রুমে ঢুকেই দেখেন আমি বই পড়ছি। আমার কাছে বেশ অনেক গুলো বই জমেছিল। জন্মদিনে পাওয়া বই, মায়ের দেওয়া বই, বড় বোনের কেনা বই। বাবা ঐদিন সব বই একত্র করে নিলখেতে বিক্রি করে দিলেন। এই কাজ তিনি আগেও যে করেন নাই তা না। ছোটমামার বই গুলাও এইভাবে গেছে।



ওইদিন কিভাবে যেন একটা বই বেচে যায়। মোটা নীল রঙের বইটা। কেন বাবার চোখে পরে নাই কে জানে। বইটার ভেতর এই কথা গুলি লেখা ছিল –

“দুখের কাটায় গোলাপ ফোটে
তাইসে এত সুন্দর।
তেমনি সুন্দর হোক তোমার জীবন
ইতি তোমার মা”
------------------------------------------------------------------
পুনশ্চঃ
এই লেখাটা বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে তৈরি করা। পরীক্ষা দিতে দিতে মাথাটা একেবারেই গেছে নাহলে একমাস আগে কেউ এই পোস্ট দেয়। এবছর বাংলাদেশে "বিশ্ব মা দিবস" মে মাসের ৮ তারিখে... wikipedia তে দেখুন। প্রতিটি মায়ের প্রতি আমার গভীর ভালবাসা জানিয়ে এখানেই ইতি টানলাম। যারা কষ্ট করে পড়েছেন এতদূর তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ...

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৪:৫০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×